গুলশানে আবাসিক ভবনে আগুন, একজনের মৃত্যু

0
62

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
রাজধানীর গুলশানে ১২ তলা একটি আবাসিক ভবনে লাগা আগুনে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভবনের বারান্দা থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়েছেন অনেকেই। ভবনের ভেতর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২৩ জনকে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুন লাগার প্রায় চার ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বিমানবাহিনীর দুটি ইউনিট। সেখানে উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার কথাও জানিয়েছে আইএসপিআর। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হওয়ার আগের রাতে গুলশানে এই আগুনের ঘটনা ঘটল। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় আগুনে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

রাত সোয়া ১১টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফায়ার ফাইটাররা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেছেন। তাঁরা এখন উদ্ধারকাজ করছেন। তাঁরা ভবনের প্রতিটি তলায় পরীক্ষা করছেন। কেউ আটকে আছে কি না সেগুলো দেখা হচ্ছে। আটকে থাকলে তাদের উদ্ধার করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ২৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি। এর মধ্যে একজন নবজাতক রয়েছে।’ আগুন নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পানির ব্যবস্থা ছিল না। ফলে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লেগেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজনের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।’

গত রাত পৌনে ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। তিনি আগুনে পুড়ে মারা গেছেন নাকি ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত করেনি। তখনো ওই ভবনে উদ্ধার অভিযান চলছিল।

সরেজমিন জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কের ২/এ হোল্ডিংয়ের ১২ তলা ওই ভবনের সপ্তম তলায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। এ সময় ভবনটিতে আটকে পড়া বাসিন্দারা চিৎকার করে তাঁদের বাঁচানোর আকুতি জানান। এক পর্যায়ে ভবনের অন্যান্য তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে আরো ১০টি ইউনিট এসে যোগ দেয়। এ সময় তাদের সহযোগিতা করেন বিমান ও নৌবাহিনীর কর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অগ্নিকাণ্ডের পরপরই ভবনটিতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। ভবন থেকে বেশ কয়েকজন লাফ দিয়ে নিচে পড়েছেন। তাঁরা গুরুতর আহত হয়েছেন। সেখান থেকে অন্তত তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে আরমান নামের একজন জানিয়েছেন। এ ছাড়া অনেকেই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামেন। বেশ কয়েকজন ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ ছাদে গিয়েও আশ্রয় নেন।

বনানী ক্লিনিকের কাস্টমার কেয়ারের আশীষ বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি রাত ১০টা ২০ মিনিটে অজ্ঞাতপরিচয় একটি লাশ নিয়ে হাসপাতালে আসেন। গুলশান থানা পুলিশ তাঁর মাধ্যমে লাশটি হাসপাতালে পাঠিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

রাতে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুন নেভাতে তৎপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ঘটনার পরপরই ভবনটি বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়ে। এ সময় ভবনটির ভেতরে আগুন জ্বলা অবস্থায় বারান্দায় বেশ কয়েকজনকে দেখা যায়। তাঁরা টর্চ জ্বালিয়ে উদ্ধারকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।

আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতনরা।

মেয়র আতিক রাত ১১টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, ‘বিষয়টি বিপজ্জনক। ভবনে আটকে পড়াদের উদ্দেশে বারবার বলেছি আপনারা লাফ দিয়েন না। আগুনে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি।’

এ ঘটনায় রাতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। ওই ভবনটিতে ২৬টি ফ্লাটের ২৩টিতেই বাসিন্দা ছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here