‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের সরকার বারবার দরকার’

0
388

নিউইয়র্ক থেকে : একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের সরকার বার বার দরকার বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের প্রধান সমন্বয়কারী মুক্তিযোদ্ধা এম এ হান্নান খান।

শনিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের একটি পার্টি সেন্টারে ‘যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’ আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে তিনি একথা বলেন। অন্যান্যের মধ্যে এদিন সমাবেশের মধ্যমণি ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক, নিউজ টোয়েন্টিফোর ও রেডিও ক্যাপিটালের সিইও নঈম নিজাম, পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ড. পার্থ ব্যানার্জি প্রমুখ।

এ সময় একাত্তরের ঘাতকদের বিচার প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোকপাত করেন হান্নান খান। তিনি বলেন, এখনো ৭০০ মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এগুলো যদি একটি আদালতের মাধ্যমে বিচার চলতে থাকে, তাহলে ৬০ বছরেও শেষ হবে না। এজন্য আমি সরকার সমীপে প্রস্তাব পেশ করেছি, আদালতের সংখ্যা বাড়িয়ে বিভাগীয় শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

হান্নান খান বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখতেই আওয়ামী লীগের সরকার দরকার বারবার। উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা এগিয়ে নিতেও দরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বাংলাদেশ এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

ড. পার্থ ব্যানার্জি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের নর্থ কলকাতায় ১৮০ বছরের পুরনো ‘স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল’-এ ভর্তির সুযোগ পাওয়াটা একসময় সকলের জন্যেই প্রেস্টিজিয়াস ছিল। আমিও সেই স্কুলে অধ্যয়ন করেছি। এখন সেই স্কুলের সামনে ‘ভর্তি চলিতেছে’ সাইনবোর্ড দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, হিন্দি আর ইংরেজির আগ্রাসনে কলকাতা থেকে বাংলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর ভয়ংকর কী হতে পারে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মফস্বল এলাকায় বাংলা ভাষা টিকিয়ে রাখার মানুষের অভাব নেই।

পার্থ ব্যানার্জি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, হিন্দি না শিখলে চাকরি পাওয়া যায় না। ইন্টারনেটের যুগে উচ্চ বেতনের চাকরির জন্যে ইংরেজির বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সকলে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সরকারি স্কুলে ভর্তি হওয়াকে এখন প্রায় সকলেই (যাদের অর্থ-বিত্ত রয়েছে) অপমানজনক মনে করছেন। তারা সন্তানকে প্রাইভেট স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ায় পড়াতে ব্যস্ত। এমন প্রবণতা রোধ করতে হবে সম্মিলিতভাবে।

সন্দ্বীপের সন্তান ও যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ্ব কাদের মিয়া বলেন, সামনের নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে জয়ী করতে দরকার তৃণমূলে ঐক্য। এলাকার এমপির সাথে দলীয় নেতাদের সম্পর্কে উন্নয়ন ঘটাতে হবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করার মানসিকতা পরিহার করা জরুরি।

এ আলোচনায় আরও অংশ নেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, সেক্রেটারি রেজাউল বারি, যুগ্ম সম্পাদক ও নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি আলহাজ্ব কাদের মিয়া, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, কোষাধ্যক্ষ আবুল কাশেম, নির্বাহী সদস্য কানু দত্ত, সেক্যুলার ফোরামের শুভ রায়, সন্দ্বীপ পৌরসভা উন্নয়ন কমিটির আলহাজ্ব জাফরউল্লাহ প্রমুখ।

সুধী সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, চাকরির প্রয়োজনে কলকাতা তথা পশ্চিম বঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীরা হিন্দি এবং ইংরেজিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। অথচ এক সময় কলকাতাকেই বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতির তীর্থস্থান বিবেচনা করা হতো’।

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি তথা বাঙালিদের মাতৃভাষার জন্যে রক্তদানের অবিস্মরণীয় ইতিহাস এবং সেই ঘটনাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি আদায়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরেক দফা সাফল্যের ঘটনাবলীও স্থান পায় অনানুষ্ঠানিক এ আয়োজনে।

আলোচনার সময় বাইরে ঝরছিল তুষারপাত। তুষারে ঢাকা প্রকৃতির নয়নাভিরাম পরিবেশ আরও প্রস্ফুটিত হয় বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতির তুলনামূলক আলোচনাকালে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here