আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে টাকা আনা হয়। এর একটি টাকাও এতিমদের দেওয়া হয়নি। নিজেরা মেরে খেয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই অর্থ আত্মসাতের মামলা দেয়। মামলায় আদালত সাজা দিয়েছে। এখন আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। যে এতিমের টাকা চুরি করে তার জন্য কিসের আন্দোলন? বিএনপি নেত্রীকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তারা তো দুর্নীতি ও লুটপাটেই ব্যস্ত। ৯৮০ কোটি টাকা তার ছেলেরা ব্যাংক থেকে লুট করে নিয়ে গেছে। এর এক টাকাও ফেরত দেয়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে ঠাকুরগাঁও জেলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জনসভার আগে প্রধানমন্ত্রী ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৩৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন। পরে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।

কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নৌকায় ভোট দিন, আমরা সোনার বাংলা উপহার দেবো। এ সময় তিনি বলেন, আপনারা ওয়াদা করেন, হাত তুলে ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। তখন উপস্থিত লাখো জনতা হাত তুলে শ্লোগান দিয়ে নৌকায় দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক ঘরে পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের জীবনকে সুন্দরভাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমরা যেহেতু ২০০৮-এ সরকারে এসেছি, ২০১৪তে পুনরায় সরকারে এসেছি- সরকারের ধারবাহিকতা রয়েছে বলেই আজকে উন্নয়নের ছোঁয়া প্রতিটি এলাকায়- গ্রামে গ্রামে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নৌকা মার্কায় আমি আপনাদের কাছে ভোট চাই।

৩৮ মিনিটের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিন-রাত মিথ্যা কথা বলতে বলতে তার গলা ব্যথা হয়ে যায়; কিন্তু মিথ্যা বলারও একটা সীমা আছে। এত মিথ্যা বললে আল্লাহও নারাজ হয়।’ তিনি বলেন, ‘তিনি তো এক সময় বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন; কিন্তু বিমানের কী উন্নয়ন করেছিলেন? আমরা ক্ষমতায় এসে দেখলাম বিমান চলে না। সব টাকা পয়সা লুটপাট করে নেওয়া হয়েছে, বিমানকে ধ্বংস করে রেখে গেছে। বিমানের প্লেন ঝরঝরে। রাডার নষ্ট। এখান থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে সৈয়দপুর বিমানবন্দর। সেই বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা এই বিমানবন্দর চালু করে দিয়েছি। এখান থেকে এখন সব মানুষ আকাশ পথে যাতায়াত করতে পারছে। তারা রাজশাহী, বরিশাল বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল, আমরা তাও চালু করেছি।’ ঠাকুরগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, স্পেশাল ইকনোমিক জোন স্থাপন, আন্ত:নগর ট্রেন চালু, আইটি পার্ক, ভূল্লী থানা, কর্মজীবী মহিলাদের হোস্টেলসহ সকল উপজেলায় একটি করে স্কুল-কলেজ সরকারি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য যা যা উন্নয়ন দরকার তা আমরা করেছি। তারপরেও যেসব উপজেলায় সরকারি স্কুল-কলেজ নেই সেখানে আমরা প্রতিষ্ঠান করে দেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া রেল বন্ধ করেছিল আমরা নতুনভাবে আবার চালু করেছি, আলাদা মন্ত্রণালয় করে দিয়েছি। রেল যোগাযোগ যাতে উন্নত হয় ঠাকুরগাঁও যাতে আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয় সে ব্যবস্থা আমরা করে দেব। সমস্ত বাংলাদেশ যাতে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হয় তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে মানুষ শুধু লাশ উপহার পায়। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, প্রায় ৩ হাজার লোককে অগ্নিদগ্ধ করা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৭ জন সদস্যসহ প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার এবং বিদ্যুতের প্রকৌশলীকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আগুনে পুড়িয়ে হত্যারও তীব্র সমালোচনা করেন। বিএনপি সরকারের সময়ে সারের দাবিতে আন্দোলনরত ১৮ জন কৃষক হত্যার প্রসঙ্গও প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে আসে।

প্রায় ১৭ বছর পর ঠাকুরগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমণ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। ঠাকুরগাঁও ছাড়াও পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলা থেকেও দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ট্রাক, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক কুরাইশী প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী সেখানে ঠাকুরগাঁও স্টেশন সড়কের (আর-৫৮৭) ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তা হতে বালিয়াডাঙ্গী মোড় পর্যন্ত ৪.১৭ কি.মি. সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলাধীন উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সম্প্রসারণ, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলাধীন বালিয়াডাঙ্গী লাহিড়ী রাস্তায় ৯০৫ মি. চেইনেজে তীরনই নদীর ওপর ৬৯.০৫ মি. দীর্ঘ আরসিসি ব্রিজ, ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সম্প্রসারণ, ঠাকুরগাঁও জেলার পিটিআই ভবন সম্প্রসারণ প্রকল্পসহ ৩০টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন।

এডিপি বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প (এডিপি) বাস্তবায়নে তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল ঠাকুরগাঁও সার্কিট হাউসে জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো দেশের উন্নয়ন, আর এই লক্ষ্য অর্জনের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের যথাযথভাবে বাস্তবায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বিশেষ করে শিক্ষক, অভিভাবক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের মত অভিন্ন বিষয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি শিশু কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here