বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভিতে সম্প্রতি প্রচারিত ‘এবং পূর্ণিমা’ অনুষ্ঠানের একটি পর্বে অতিথি হয়ে আসেন খলনায়ক মিশা সওদাগর। এই পর্বে চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা চলচ্চিত্র বিষয়ে অনেক কথার পাশাপাশি ‘পর্দায় ধর্ষণ সিন’ নিয়ে কথা বলেন তার অতিথির সঙ্গে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

গত ২৪ মার্চ প্রচারিত এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক পূর্ণিমা তার অতিথি মিশা সওদাগরের কাছে জানতে চান, ‘আপনি সিনেমাতে কতবার ধর্ষণ করেছেন? কার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ধর্ষণের সিন করতে?’ মূলত পূর্ণিমার এমন প্রশ্ন নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অথচ গেল দু’দিন এ বিষয়ে তার কোনও মন্তব্য, আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছিলো না।

অবশেষে, রবিবার (১ মার্চ) পুরো বিষয়টি নিয়ে পূর্ণিমা কথা বললেন বিস্তারিত। প্রথমেই তিনি দুঃখ প্রকাশ করে নেন- অনুষ্ঠানটি দেখে যারা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন কিংবা কষ্ট পেয়েছেন তাদের প্রতি। তিনি বললেন, ‘সাধারণ মানুষ হয়তো এতকিছু বুঝতে চাইবেন না। তাদের ভাববারও সময় নেই। সত্যি কথাটা হলো আমরা আসলে অনেক কিছুই সহজভাবে নিতে পারি না। একটু শুনেই ঝাঁপিয়ে পড়ি। বোঝার চেষ্টা করি না- এটা একটা ফান শো বা চলচ্চিত্রের ২জন মানুষের আড্ডা। ফলে এই অনুষ্ঠান দেখে আমার কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন- সেটার জন্য সত্যি সত্যি আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কারণ, আপনাদের দুঃখ দেওয়ার জন্য এত কষ্টকরে এই অনুষ্ঠানগুলো বা সিনেমা আমরা করি না। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য আপনাদের আনন্দ দেওয়া। তাই আমার অনুষ্ঠান দেখে কেউ কষ্ট পেলে আমি সত্যিই দুঃখিত।’

কিন্তু পূর্ণিমার এই দুঃখ প্রকাশের মধ্যেও একটা ক্ষোভ অনুভব করা যাচ্ছে। তবে কি এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনও ঘটনা রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে পূর্ণিমা বললেন, ‘দেখুন এই বিষয়টা নিয়ে যা যা ঘটছে- সেটার পেছনে অন্য একটা কারণ রয়েছে। ব্যক্তিগত রেষারেষি থেকে পুরো অনুষ্ঠানের ঐ অংশটি কেটে ভিডিওটা ছড়ানো হয়েছে। কেন করেছে কারা করেছে সেই প্রশ্নটা দয়া করে আমাকে করবেন না। সময় হলে সব নাম-পরিচয়-কারণ বলে দেবো। অনেকের নাক কাটা যাবে তখন। কিন্তু আমি এখনই তাদের নাক কাটতে চাই না। এখনও আমি প্রত্যাশা করি- তারা ভালো থাকুক, ভালো হয়ে উঠুক।’

ঠিক এরা কারা? সেই প্রশ্ন করতে মানা। কিন্তু পূর্ণিমাকে এই প্রশ্ন তো করাই যায়- টিভি অনুষ্ঠানে এমন প্রশ্ন করাটা কি খুব প্রাসঙ্গিক ছিল? জবাবে এবার একটু বিস্তারিত বললেন এই চিত্রনায়িকা। যিনি সাম্প্রতিক সময়ে মঞ্চে ও টিভি পর্দায় অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তার সাবলীল উপস্থাপনা দিয়ে।

পূর্ণিমা বললেন, ‘দেখুন টানা ২০ বছরের পরিচয়-সম্পর্ক আমার আর মিশা ভাইয়ের। আমার প্রথম ছবির প্রথম দৃশ্যের সহশিল্পী ছিলেন তিনি। এবং সেটি ছিল ধর্ষণের দৃশ্য। মিশা ভাই তার পুরো ক্যারিয়ারের ন্যুনতম হাজারটা এমন সিন করেছেন। আমি কমপক্ষে ৫০টি ছবিতে এই সিন করেছি। এসব তো চিত্রনাট্যের দাবিতে একটি দৃশ্য মাত্র। সিনেমায় তো খুনোখুনিও হয়, ভালোবাসাও। আমরা তো সেই সিনেমারই মানুষ। অথচ মজার ছলে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে সেটা অপরাধ! এটা তো আমি ভাবতেই পারিনি।’

পূর্ণিমা আরও বলেন, ‘সেই অনুষ্ঠানে আমাদের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। কথা প্রসঙ্গে ধর্ষণ সিন বিষয়টাও এসেছে। কারণ, এটি যে কোনও শিল্পীর জন্য একটু কঠিন বিষয়। যেমন মিশা ভাই এই অনুষ্ঠানেই বলেছেন- মৌসুমী আপুর সঙ্গে তার যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সেটার কারণে তার সঙ্গে এই ধরনের বিশেষ সিন করতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারণ, সহশিল্পীর সাপোর্ট ছাড়া আপনি কোনও দিনই ভালো অভিনয় করতে পারবেন না। অথচ এই জানতে চাওয়াটাই এখন জীবনের বড় ভুল হয়ে ধরা দিলো। মিশা ভাইতো আমার সামনে বসে আমার কথাও বললেন। কারণ, আমরা বিষয়টাকে একটি দৃশ্য হিসেবেই ট্রিট করেছি। আমাদের মনে কোনও কালি ছিলো না। যেটা নিয়ে এত বড় নোংরা রাজনীতি হয়ে গেল।’
পূর্ণিমার মনে, এটা নিছকই একটা দৃশ্য নিয়ে কথা বলা। যেগুলো তারা চিত্রনাট্যের দাবিতে নিয়মিত করে আসছেন। তার প্রশ্ন, সিনেমার ধর্ষণ দৃশ্য নিয়ে টিভিতে কথা বলা যদি অপরাধ হয় তাহলে তাকে কেন ৫০টি সিনেমায় এই সিন করতে হয়েছে। তখন কেন এইসব সিন নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি? তার আরও প্রশ্ন, ‘আমরা ফিল্মে এসব সিন করি বলেই কি বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে? তা তো নয়। সিনেমায় তো রেপ সিন করার পর সেটার বিচার হয়, ভিলেন মার খায়, শাস্তি হয়। সিনেমার রেপ সিন তো মানুষকে কখনও প্রভাবিত করেনি। আরও সচেতন করে। আর সেটা নিয়ে একটি ফিল্মের টকশোতে কথা বলতে গেলে অপরাধ!’

বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ধর্ষণের ঘটনা টেনে এনে পূর্ণিমা এটাও বললেন, ‘এটা ঠিক গেল এক সপ্তাহে দেশে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কাছাকাছি সময়ে এই অনুষ্ঠানটা অনএয়ার যাওয়ার পর- স্বাভাবিক বিষয়টাকে অস্বাভাবিক খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। ভিডিও ক্লিপ বানিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে কয়েকটি মানুষ। এটাই শুধু আফসোস।’

জানতে মানা, তবুও প্রশ্ন- তারা আসলে কারা? মিডিয়ায় আপনার শত্রু আছে- সেটা তো সচরাচর শোনা যায় না। বরং প্রেমিকদের গুঞ্জনটাই বেশি। এবার পূর্ণিমার মেঘমুখে এক চিলতে হাসি। হাসি গিলে আবারও কড়া কণ্ঠে বললেন, ‘নামগুলো অব দ্য রেকর্ড পরে বলছি। তবে যারা জেনে-বুঝে এই ছোট্ট বিষয়টাকে উসকে দিলো তাদের উদ্দেশ্যে বলি- যত মন চায় লিখুন, আমার ভিডিও ভাইরাল করুন। কারণ, যাকে নিয়ে আলোচনা হবে তাকে নিয়েই সমালোচনা হবে। যে উপরে উঠবে তাকেই তো নিচে নামানোর চেষ্টা হবে। এটাই নিয়ম।’
প্রসঙ্গত, সৈয়দ আশিক রহমানের মূল ভাবনায় আরটিভিতে প্রচারিত সেলিব্রেটি টক-শো ‘এবং পূর্ণিমা’ অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করছেন সোহেল রানা বিদ্যুৎ এবং গ্রন্থনা করছেন অনিন্দ্য মামুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here