দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কারাগারে আটক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া নিয়ে সপ্তাহখানেক ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তুমুল আলোচনা। আওয়ামী লীগের নেতারা সর্বশেষ জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে আগ্রহী তিনি, তবে একটি একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। আর সেই শর্ত নিয়েই যত আপত্তি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের। আর এ কারণেই ঝুলে আছে খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে এই ক্ষেত্রে তার একটি শর্ত রয়েছে। তিনি আগে জেল থেকে মুক্তি চান, তারপর বিদেশে যেতে চান। অবশ্য তার শর্তের সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা রাজি নয়। আর এ কারণেই বিদেশ যাত্রায় দেরি হচ্ছে খালেদা জিয়ার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে বন্দি হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী যেতে হবে।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী এ সূত্রগুলো আরও দাবি করেছে, জেলে থেকেই প্যারোলে মুক্তি নিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিদেশে যাওয়ার লিখিত অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন সেটা তারা চান। কারণ, খালেদা জিয়ার চাওয়া অনুযায়ী বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হলে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ক্ষমতাসীনরা। তাদের সংশয়, খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে রাজি হলে এর রাজনৈতিক সুফলও বিএনপির ঘরে চলে যেতে পারে।খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আদালতের ওপর। দেখি আদালত কী বলে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- এটা আমাদের কোনও ব্যাপারই না। এটা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার ব্যাপার হলে সেই অনুযায়ী আদালতে কাগজপত্র দাখিল করবে। আদালত যেভাবে আদেশ দেবে, জেল কর্তৃপক্ষ সেভাবে পদক্ষেপ নেবে।আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা করার মতো শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে, অবশ্যই সরকার সেই বিষয়টি সদয় বিবেচনার মধ্যে রাখবে। সরকার নিজে থেকে তাকে বিদেশ পাঠাতে চায় এই অভিযোগ সত্য নয়।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্যারোলে ‍মুক্তি পেয়ে বিদেশ গেলে প্যারোলের শর্তানুসারে তাঁর বক্তৃতা বিবৃতি দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। দেশে বসেও কথা বলতে পারবেন না। কিন্তু মুক্তি পেলে তাঁকে ‘আটকানো‘ যাবে না। ফলে বক্তব্য-বিবৃতি পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা হতে পারে। মাঠ গরম করে সরকারের বিরুদ্ধে পাবলিক সেন্টিমেন্ট তৈরি করার চেষ্টা করতে পারেন। এই সুযোগ তাকে দিতে রাজি নয় ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়। মুক্তি লাভ করে রাজনৈতিক বিজয় এসেছে দাবি করে দলের নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করে তুলতে চেষ্টা করবে। ফলে আগে মুক্তি দিলে তারপর বিদেশ যাবে খালেদা জিয়া এতে কোনোভাবেই রাজি নয় ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারকরা। নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হবে কারাবন্দিরা যে নিয়ম অনুসরণ করে বিদেশ যায় সেই নিয়ম অনুসরণ করে। খালেদা জিয়া এই প্রক্রিয়ায় এখনও রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হবেন বলে মনে করে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা। তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রায় সুফল আসবে আওয়ামী লীগের ঘরে যা কারাগারে থাকলে আসবে না। তার বিদেশ যাত্রার মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনেও চিড় ধরবে। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্যে দেশের বাইরে গেলে মনোবলও হারাবে দলের নেতাকর্মীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here