আমরা পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিকে অন্ধের মতো অনুকরণ করছি

0
309

ড. জিনাত হুদা : লক্ষ্য করা যাচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ধর্ষণ হয়েছে ৩৬৩, নারী ১৮৭ এবং শিশু ১৭৬। ২০১৭ সালে ছিল এই সংখ্যা ১৪১১ এবং ২০১৬ সালে ছিল ১১৭০। এসব ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। এ সকল জরিপ কারা করছে? কিসের ভিত্তিতে করছে? কোন মেথডে তারা এসব করছে? তা আমার জানা নেই। এই পরিসংখ্যানের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তারা কখানো বলে না সব শ্রেণীর, উচ্চবিত্ত পরিবার কিংবা নি¤œবিত্ত পরিবারের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য আমরা জরিপে দেখি না। এর পরেও যদি মনে করেন যে, এত দ্রুত কিংবা এত গভীরভাবে এই ঘটনাগুলো কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য একটি অশনি সংকেত। এই বিষয়গুলোর সাথে পারিবারিক মূল্যবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ, আমাদের সংস্কৃতি, আচার অনুষ্ঠান এবং আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এসব ধাক্কা খাচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির ভিতর দিয়ে আমরা আসলে পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিকে অন্ধের মত অনুকরণ করছি।
আমরা তো পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির কথা বলছি, কিন্তু পাশ্চাত্য সংস্কৃতি এভাবে আমাদের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে নাই। সোফিয়া লরেন বা লিজ টেনলর এর নাম শোনা গেছে। তাদের সিনেমা গুলো যখন দেখানো হয়েছে, তখন সমাজে এইভাবে এ ধরণের ঘটনাগুলো ঘটেনি। কারণ, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ভাষা, তার চরিত্র, তার পোশাক-আশাকের জন্য এভাবে অনুপ্রবেশ করতে পারে নাই। কিন্তু সমস্যা হলো, এই আধুনিক যুগে, এই বিশ্বায়নের যুগে, স্যাটেলাইট চ্যানেলের যুগে, পাশ্চাত্য জিনিসটাকে আমাদের ঘটনার আদলে, অর্থাৎ বাঙালী -হিন্দী ঘটনার আলোকে ভারতীয় চ্যানেলগুলো এগুলোকে প্রবেশ করাচ্ছে। তারা পাশ্চাত্য বিষয়টাকেই আমাদের দেশীয় কাহিনী ঘটনার ভেতর দিয়েই, আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। ফলে এগুলো খুব দ্রুত, ড্রইং রুম থেকে বেডরুম, অফিস থেকে পারিবারিক বিষয়, উচ্চবিত্ত থেকে নিম্মবিত্ত সকল স্তরেই ঘটে যাচ্ছে।
ফলে ডাক্তার বলেন, শিক্ষক বলেন, অর্থাৎ যাদের কে আমরা মহান পেশাজীবি হিসেবে দেখি, তাদের নামও এসব ঘটনায় দেখছি। আবার যারা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, তারাও এসব কাজ করছে। তবে, এসব থেকে আমাদের উঠে আসতে হলে প্রথমত, আমাদের বিশেষ একটি মনিটরিং সেল করা দরকার। যারা এসব ঘটনার সাথে জড়িত, তাদের কাছ থেকেই ডাটা বের করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এসব ঘটনার পেছনে আমদের নীতিবোধ, আদর্শ, অন্যের প্রতি ভালবাসা এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, নিজের একটি সুন্দর রুচিবোধ, ভালো মন্দের ব্যবধান এগুলো যেন মানুষকে আকর্ষণ করে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। অথচ স্যাটেলাইট, মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রভাবিত করে যাচ্ছে। এই উৎসমুখ বন্ধ করতে হবে। এই উৎসমুখ বন্ধ না করলে, আমরা যতই টকশো, আলোচনা সমালোচনা করি না কেন, তাতে খুব একটা কাজ হবে না। সর্বশেষ আমি বলব, যারা এসব কাজ করেই যাচ্ছে, তাদের বড় ধরনের একটি বিচার হওয়া উচিত।
পরিচিতি : অধ্যাপক, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here