সরকার ভরা মৌসুমে না কেনায় কৃষক পাটের প্রকৃত দাম না পেয়ে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষক প্রকৃত দাম না পেলে পাটের অগ্রযাত্রা আবারও থেমে যেতে পারে বলে আশংক্ষা। কৃষকের হাত থেকে পাট যখন মধ্যস্বত্ত¡ভোগি ফড়িয়া এবং মহাজনের গুদামে যায় তখন সরকার পাট কেনে।
এতে কৃষক সরাসরি সরকারের কাছে পাট বিক্রির সুযোগ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পর্যাপ্ত ফান্ড এবং সময়মত ফান্ড রিলিজের অভাবে সরকারিভাবে সঠিক সময়ে পাট কেনা হয়না। জেটিপিডিসি ( জুট এন্ড টেক্সটাইল প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তারিক হোসেন বলেন, সরকার ভরা মৌসুম অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসে না কিনে পাট কেনে কার্তিক মাসে। সদিচ্ছা থাকলে মৌসুম শুরুর অনেক আগেই সরকারীভাবে পাট কেনার জন্য পর্যাপ্ত ফান্ড রিলিজ করা সম্ভব।
এতে সরকারের কাছে সরাসরি বিক্রির সুযোগ পেয়ে কৃষক পাট চাষে আরও উৎসাহিত হতো। কৃষক প্রকৃত দাম না পেলে দেশে পাটের উৎপাদন টেকসই হবেনা। শুধু কথা আর আবেগ দিয়ে হবেনা। আবেগ ও কথার সঙ্গে কাজেরও মিল থাকতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। স্বদিচ্ছা থাকলে সরকারের প্রতিটি অফিসের দরজা- জানালাতেই পাটের সূতার কাপড়ের তৈরী পর্দা দেখা যেত, ব্যবহার হতো পাটপন্য। প্রধানমন্ত্রী পাটের শাড়ি পরে সাবলিলভাবেই জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আসতে পারেন। কিন্তু আমরা অনেকেই পারি না। বহুমুখি পাটপণ্যের মৌলিক উপাদান হচ্ছে জুট-কটন বেøন্ডেড সূতা। যেটা তৈরী করেছে এই উইং অর্থাৎ বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের জুট এন্ড টেক্সটাইল প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (জেটিপিডিসি)। প্রধানমন্ত্রীর পাটের শাড়ির সূতাও এই উইং এ তৈরী হয়েছে। পাট ও পাটপণ্যর রপ্তানী এবং উৎপাদন বেড়েছে। বহুমুখি পাটপণ্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে। এই বহুমুখি পাটপণ্যের সূতিকাগারই হচ্ছে জেটিপিডিসি।
পাটপণ্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে দেশের বিপুল সংখ্যাক যুব ও তরুনসহ বহু মানুষের কাজের সংস্থান হবে। এতে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা আরও ভাল হবে। পাট এমন একটি ফসল যা নানাভাবে মানুষের উপকারে আসে। বোনার ২০ থেকে ২৫ দিন পরেই বাছাইকরা পাটগাছ শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বাছপাটের (৭০/৮০ দিনের বাছাই করা পাটকে বাছপাট বলা হয়) আঁশ হিসেবে বিক্রি হয়। যা বহুমুখি পাটপণ্যের মৌলিক কাঁচামাল। আর গাছপাটের ( ১২০ দিনের পূর্ণাঙ্গ পাটগাছ) আঁশ ছাড়াও পাটখড়ি থেকে তৈরী হয় মূল্যবান কার্বন। যা রপ্তানী করে বর্তমানে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। পাট পরিবেশ বান্ধব। ফসলের মধ্যে পাটই বাতাস থেকে সর্বোচ্চ পরিমানে কার্বন-ডাই- অ´াইড গ্রহন এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে।