কারাকর্তৃপক্ষে ফ্যাসিবাদের রোগ-লক্ষণ: রিজভী

0
395

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘তার দ্রুত এমআরআই করা দরকার।’

কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টি উপেক্ষা করছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে ফ্যাসিবাদের রোগ-লক্ষণ দেখা দিয়েছে।

রিজভী বলেন ‘আমরা গতকালই বলেছিলাম, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ। এখন তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে, তার হাত-পা ও কোমরের ব্যথা আরও বেড়েছে।’
সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলে বিএনপির মুখপাত্র। বলেন, ‘চেয়ারপারসন দীর্ঘদিন ধরে হাঁটু ও পায়ের সমস্যায় ভুগছেন। নির্জন, পরিত্যক্ত ও স্যাঁতসেতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাকে রাখা হয়েছে। তাকে দেয়া বিছানা বালিশ অর্থোপেডিকের একজন রোগীর জন্য অনুপযোগী।’

সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ‘অর্থোপেডিক’ বেড দেয়ার সুপারিশ করলেও এখনো তাকে তা দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে তার এমআরআইসহ উন্নত চিকিৎসার দরকার।’

খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ বারবার বলার পরেও কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে উপেক্ষা করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের দাপটে কারাকর্তৃপক্ষ তাদের মুঠোবন্দি।’

‘ফ্যাসিবাদের রোগ-লক্ষণ কারাকর্তৃপক্ষের মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে-সরকার দেশনেত্রীকে এক অবনতিশীল স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে রাখার জন্যই কারাকর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। বিষয়টি গভীর উদ্বেগের ও বন্দী নির্যাতনের শামিল।’
রিজভীর অভিযোগ, ‘আগে পরিবারের সদস্যদের সাত দিন পরপর বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হলেও এখন ১০ দিন পর দেখা করার নির্দেশ হতে যাচ্ছে। এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে বেগম জিয়াকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দেয়া।’

‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই নয়, দেশের একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও দেশের কোটি কোটি মানুষের আশা ও ভরসার স্থল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক এবং বারবার দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেত্রীর সুচিকিৎসা নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষের টালবাহানা অত্যন্ত রহস্যজনক। সরকারের নির্দেশেই কারাকর্তৃপক্ষ বেগম জিয়ার প্রতি করছে নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ।’

গত ২৮ মার্চ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজির না করার পর খালেদা জিয়ার অসুস্থতার গুঞ্জন ছড়ায়। পরদিন ঢাকার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন তিন সদস্যের একটি চিকিৎসক দল নিয়ে বিএনপি নেত্রীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে এসেছেন। আর ১ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার জন চিকিৎসককে দিয়ে গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড।

এই বোর্ড কারাগারে গিয়ে সেদিনই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর। আর তাদের পরামর্শে ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতা এনে খালেদা জিয়ার বেশ কিছু এক্সরে করানো হয়।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার গুঞ্জনের মধ্যে ৩০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি করেন। আর একই দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই প্রস্তাবে সম্মতির কথা জানান। বলেন, চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে এমনটিই হবে।

দুই নেতার এমন বক্তব্যের পর ঘটনাটি অন্যদিকে মোড় নেয়ার পথে ছিল। সরকারের সঙ্গে বিএনপি কোনো সমঝোতায় আসছে কি না, এমন আলোচনা তৈরি হয়। যদিও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের এক্সরে রিপোর্ট দেখে মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে এই মুহূর্তে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার দরকার নেই। এরপর এ নিয়ে আলোচনা থেমে যায়।

 

আর ৩০ মার্চ জোরাল দাবি তুললেও বিএনপি নেত্রীকে বিদেশে নেয়ার বিষয়ে দলের নেতারা আর কোনো দাবি তুলছেন না। যদিও চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেয়ার কথা বলে যাচ্ছেন তারা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here