বিএনপির প্রচারে নামবেন জোবাইদা

0
88
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিএনপি। খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন আশা করে এক ধরনের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি; আবার বিচারাধীন ৩৪ মামলার বেড়াজালে তিনি মুক্তি না পেলে বিকল্প প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এক্ষেত্রে কারারুদ্ধ দলের চেয়ারপারসন নির্বাচনে প্রার্থী এবং প্রচারে অংশ নিতে না পারলে পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেবেন।

দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া আগামী ৮ মে উচ্চ আদালতে মামলার শুনানিতে জামিন না পেলে আসন্ন রমজান মাসে শাশুড়িকে দেখতে দেশে আসবেন ডা. জোবাইদা। এ সময় তিনি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন। কিছুদিন দেশে থেকে আবার লন্ডনে চলে যাবেন। তবে নির্বাচনের আগে আবার দেশে এসে সারাদেশে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেবেন ডা. জোবাইদা রহমান।

এ বিষয়ে লন্ডন যাওয়ার আগে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, তারা এ মুহূর্তে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির আইনি লড়াইয়ে ব্যস্ত। তারা আশা করছেন, খালেদা জিয়া শিগগির জামিনে মুক্তি পাবেন। নির্বাচনী প্রচারে ডা. জোবাইদা রহমান দেশে আসবেন কি না- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিস্থিতিই বলে দেবে তিনি আসবেন কি না।

একইসঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ এও বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর কাছে ডা. জোবাইদা রহমানের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

দলীয় সূত্র জানায়, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের মতো আর ‘ভুল’ করবে না বিএনপি। দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করতে না পারলেও অন্তত নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে কিছুটা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ হলেই অংশ নেবে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়েও চলছে প্রার্থী জরিপের কাজ। ২০ দলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর জন্য অর্ধশতাধিক আসন রেখে বাকি আড়াইশ’ আসনে তিনজন করে সম্ভাব্য যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীর নামও তালিকা করছে দলটি।

বিএনপির কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা জানান, বিএনপিতে যোগ্য প্রার্থীর সংকট নেই। প্রার্থী নিয়ে দলটির কোনো মাথা ব্যথা নেই। তাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নির্বাচনের আগে দলের চেয়ারপাসনের জামিনে মুক্তি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৪টি মামলা রয়েছে। নির্বাচনের আগে তিনি জামিন পেতেও পারেন; আবার নাও পেতে পারেন। আইনি লড়াইয়ে জামিন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেও শারীরিকভাবে অসুস্থ তিনি। আগের মতো সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না খালেদা জিয়া। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প চিন্তাভাবনাও করতে হচ্ছে তাদের। এক্ষেত্রে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের ‘ইতিবাচক ইমেজ’কে কাজে লাগাতে চায় দলটি।

দলের ওই নেতাদের মতে, বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিয়ে দল পরিচালনা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে দলের কট্টরপন্থি ও উদারপন্থিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও নয়াপল্টন কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে কোন্দল থাকলেও এখন আর তা প্রকাশ্যে নেই। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে মনোনয়ন দেওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার লড়াই শুরুর আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ওই পরিস্থিতি কারাগার থেকে খালেদা জিয়া এবং লন্ডন থেকে তারেক রহমানের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে পরিবারের ‘প্রতীক’ হিসেবে ডা. জোবাইদা রহমান নির্বাচনী মাঠে থাকলে নেতাকর্মীরা আরও বেশি ‘ঐক্যবদ্ধ’ থাকতে ‘সহায়ক’ হবে বলে মনে করেন তারা।

বিএনপি নেতারা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতিমধ্যে ডা. জোবাইদা রাজনীতিতে এলে স্বাগত জানাবেন বলে মত প্রকাশ করেছেন। তার মতো একজন শিক্ষিত মেয়ে রাজনীতিতে এলে ভালো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোভাব ইতিবাচক। দলের ভেতর ও বাইরে তার ব্যক্তি ইমেজ দলের সংকটকালে কাজে লাগানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বিএনপি।

নাম প্রকাশ না করে একজন নেতা বলেন, আগামী ৮ মে মামলার শুনানিতে শাশুড়ি খালেদা জিয়া জামিন না পেলে তাকে দেখতে ডা. জোবাইদা রহমান রমজান মাসে দেশে আসতে পারেন। চিকিৎসক হিসেবে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। পাশাপাশি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ তিনি নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দেবেন। কিছু দিন পর আবার লন্ডন চলে যাবেন তিনি। পরবর্তী পরিস্থিতি দেখে নির্বাচনের আগে আবার দেশে আসবেন তিনি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করে সারাদেশে নির্বাচনে প্রচার ও গণসংযোগে অংশ নেবেন জোবাইদা রহমান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন বলে তারা আশাবাদী। তিনিই নির্বাচনে ও প্রচারেও অংশ নেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডা. জোবাইদা রহমানের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের প্রয়োজনে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজন হলে তখন দলের হাইকমান্ড প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। সূত্র : সমকাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here