বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন করে উত্তাপ ৷ তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক নাকি না এ নিয়ে চলছে অভিযোগ-পালটা অভিযোগ৷ আবার নাগরিক না থাকলে তিনি কীভাবে বিএনপির চেয়ারপার্সন হন প্রশ্ন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর৷

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত শনিবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন৷ তাহলে তিনি কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন? সোমবার বিকেলে গুলশানের বাসায় সাংবাদিক সম্মেলন করে একই কথা বলেছেন শাহরিয়ার আলম৷ তবে এবার তিনি কিছু তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে বলেন, ‘২০১৪ সালের ২ জুন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ও কন্যার পাসপোর্ট জমা দেন৷ এরপর আর তারা নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেননি৷ ফলে তাদের নাগরিকত্ব থাকতে পারে না৷’ তিনি দাবি করেন, এর পক্ষে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত তার কাছে রয়েছে৷ তার এই বক্তব্যের পর তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে৷

এই পরিস্থিতিতে বিএনপি কী ভাবছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম কী বলেছেন তা তিনিই জানেন৷ এ নিয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না৷’ তারেক রহমান কি সহসা দেশে ফিরবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন৷ তিনি সেখানে চিকিৎসা করাচ্ছেন৷’ সরকার প্রধান থেকে শুরু করে অনেক মন্ত্রীও বলছেন, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ আপনাদের ভাষ্য কী? জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা সরকারে আছেন, তারা ভালো বলতে পারবেন তারা কী করছেন৷ এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই৷’

সোমবার দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, তারেক রহমানের বাংলাদেশি পাসপোর্ট জমা দেওয়ার যে খবর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বরাতে সংবাদমাধ্যমে এসেছে, বিএনপি তা প্রতাখ্যান করছে৷ এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নির্জলা মিথ্যা কথা বলেছেন৷ আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটি প্রদর্শন করুন৷ হাইকমিশন তো সরকারের অধীনেই, তাদের বলুন সেটি দেখাতে৷’

রিজভীর এ বক্তব্যের পরই তারেক রহমানের আইনজীবী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের লন্ডনে দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে তাকে আইনি নোটিশ পাঠান৷ সোমবার দুপুরে সরকারি ডাকযোগে নোটিশটি পাঠিয়েছেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান৷

পাসপোর্ট জমা দিলে কি নাগরিকত্ব চলে যায়? সংবিধানে কী ব্যাখা আছে, এ নিয়ে আইনই বা কি বলছে? সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী মনসুর হাবিব বলেন, ‘সংবিধানে নাগরিকত্ব চলে যাওয়ার কোনো ব্যাখা নেই৷ আর তারেক রহমান যদি পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাকেনও, তাহলেও নাগরিকত্ব যাওয়ার প্রশ্ন উঠছে কেন? অনেকেই দেশের বাইরে আছেন৷ কিন্তু তাদের তো নাগরিকত্ব চলে যাচ্ছে না৷ আমাদের আইনে নাগরিকত্ব পাওয়ার নানা ব্যাখ্যা আছে, যাওয়ার ব্যাখ্যা নেই৷’

সম্প্রতি লন্ডন সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরিয়ে আনতে ওই দেশের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে৷ এরপর রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে একই কথা বলেছেন৷

আইনমন্ত্রী একটু যোগ করে বলেছেন, ‘বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকলেও এখন এই ধরনের চুক্তি করতে তো আমাদের বাধা নেই৷ তাছাড়া মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাক্ট বলে একটি আইন আছে৷ এই আইনের আলোকে কিছু অপরাধীকে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু আনতে পারি৷ সেই মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাক্ট আমাদের দুই দেশেরই আছে৷’

নাগরিকত্ব নিয়ে নির্বাচনী আইনে কী ব্যাখ্যা আছে? সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন করতে হলে বাংলাদেশের ভোটার হতে হবে৷ ভোটার হতে হলে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে৷’

কেউ যদি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেয় তাহলে কি তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারেন? জবাবে জনাব সাখাওয়াত বলেন, ‘আরপিওতে এমন কিছু বলা নেই৷ এটা যে কোনো রাজনৈতিক দলের নিজস্ব বিষয়৷ আমাদের উপমহাদেশে তো এমন উদাহরণ আছে৷ ভারতে কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী৷ বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তিনি তখন প্রধানমন্ত্রী হননি৷ ফলে নাগরিকত্ব না থাকলে পার্টি প্রধান হওয়া যাবে না, এমন কোনো কথা কোথাও লেখা নেই৷’

প্রসঙ্গত, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে লন্ডনে যান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান৷ এরপর থেকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে তিনি সেখানেই বসবাস করে আসছেন৷ দুই বছর আগে মুদ্রাপাচারের এক মামলায় তারেককে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট৷ আর গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত৷ ওই মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর এখন কারাগারে আছেন তারেকের মা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here