চার বছর গ্যাপে মোটে ২০ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব ফুটবলের মহাযজ্ঞ ফুটবল বিশ্বকাপ। যাতে ১৯ বার অংশ নিয়েছে আলবিসেলেস্তারা। আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপ দিয়ে ২০ বারের মতো অংশ নিবে আকাশি-সবুজ জার্সির দল। ইতিহাস বলছে, বিশ্বকাপ ফুটবলে পাঁচবার ফাইনাল খেলা আর্জেন্টিনার দুইবার শিরোপা এসেছে ম্যারাডোনার হাত ধরে। মজার তথ্য হচ্ছে, সেমিতে উঠে কখনোই বিদায় নেয়নি দলটি। অর্থাৎ যতবারই সেমিতে উঠেছে ততবারই পৌঁছেছে ফাইনালে।
সেই ১৯৮৬ থেকে ২০১৮। হিসাব মতে, ৩২ বছর শিরোপায় চুমু কাটা হয়নি ম্যারাডোনার উত্তরসূরীদের। তবে বিশেষজ্ঞদের আশ্বাস, এবার হয়তো মেসির হাত ধরে শিরোপা নিজেদের ঘরে নিবে আর্জেন্টিনা। রাশিয়া আসরে ডি-গ্রুপে পড়েছে মেসি-দিবালারা। তাদের গ্রুপে রয়েছে আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ও ‘সুপার ঈগল’ নাইজেরিয়ার মতো শক্তিশালী দল। আসরে আর্জেন্টিনার প্রথম খেলা নবাগত আইসল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৬ জুন মাঠে গড়াবে ম্যাচটি।
ফুটবল বিশ্বকাপের পর্দা উঠতে এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি। তারপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা চায়ের টেবিল মুখরিত হচ্ছে প্রিয় দলের গুণগানে। তাই আজ গোনিউজ পাঠকদের জন্য রয়েছে আর্জেন্টিনার সাত-পাঁচ।
মেসিতে পার হবে আর্জেন্টিনা?
ব্রাজিল-ফ্রান্স কিংবা জার্মানি; আসন্ন বিশ্বকাপে এই তিনটি দল অন্যতম হট ফেভারিট। ফুটবল বিশ্লেষকরা এদের যে কারে হাতে শিরোপা দেখছেন। কিন্তু না, এশিয়া উপমহাদেশের অর্ধেকেরও বেশি ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষি এসব পরিসংখ্যানে থোড়াই কেয়ার। তাদের অন্যতম জনপ্রিয় দল আর্জেন্টিনা। তা অনেকাংশে ব্রাজিলের আগে-পরে। ৩২ বছর ধরে বিশ্বকাপের শিরোপা অধরা, তারপরও ভক্তদের দাবি ‘এবার দুঃস্বপ্ন ঘুচবে মেসির হাত ধরে। খুদে জাদুকর হয়ে উঠবেন সেই ৭৮ কিংবা ৮৬ এর ম্যারাডোনা।
এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট অর্জনে নানা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। নিভু নিভু জ্বলেই শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে জিতে লাতিন আমেরিকার চতুর্থ দল হিসেবে বিশ্বকাপের টিকিট অর্জন করে দলটি। তাও মেসির একার চেষ্টায়। যদিও ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। বিশ্ব ফুটবল পাড়ায় কান পাতলে শোনা যায়, স্বাগতিকদের সঙ্গে ম্যাচটি নিয়ে দেনদরবার করেছে আলবিসেলেস্তারা। ইকুয়েডরের মাঠ কিটো যা কিনা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নয় হাজার মিটার উঁচুতে এবং তাতে বিশ্বের বড় বড় দলগুলোয় রীতিমত লজ্জা পায়। অথচ সেই মাঠেই চমক দেখান মেসি। পর পর তিন গোল। যা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য লেগেছে।
এরপর বিতর্কের বিষয়টি আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয় যখন জানা যায় ম্যাচের পর রবার্ট আরবলেদা, জেফার্সন ওরেজুয়েলা, গ্যাব্রিয়েল কোর্তেজ, এনার ভ্যালেন্সিয়া ও জোয়াও পালাতাকে নিষিদ্ধ করে ফেডারেশন অব ইকুয়েডর ফুটবল (এফইএফ)। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচের আগের রাতে কিটোতে তারা পার্টি করেছিল এবং যে কারণে তারা মনোযোগ হারিয়েছে ম্যাচে। যদিও বিষয়টি স্রেফ ছেলে খেলা এবং গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দেয় আর্জেন্টিনা।
বাজির ঘোড়া দিবালা।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ইতিহাস
১৯৩০ সালে লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসর। সেবার ১৩ দল নিয়ে মাঠে গড়ায় টুর্নামেন্টটি। গ্রুপ ‘এক’ এ নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। পরের দুই ম্যাচে মেক্সিকো-চিলি এবং সেমিতে আমেরিকাকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে আকাশি-সাদার দল। কিন্তু ফাইনালে স্বাগতিক উরুগুয়ের কাছে ধাক্কা। ৪-২ ব্যবধানে হেরে প্রথম আসরেই স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার।
এরপরের আসর অর্থাৎ ১৯৩৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডে বাদ। তারপর ১৯৩৮ বিশ্বকাপে অংশ নেয়া হয়নি রাজনৈতিক কারণে। এরপর ১৯৪২ ও ১৯৪৬ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইস্যুতে। দীর্ঘদিন পর খেলায় ফিরে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে দলটি বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। পরেরবার (ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৬৬ বিশ্বকাপ) কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়ে ধাক্কা খায় ১৯৭০ আসরে মুলপর্বে অংশ নিতে না পারা আর্জেন্টিনা। আর ১৯৭৪ বিশ্বকাপে বিদায় ঘণ্টা বাজে দ্বিতীয় গ্রুপ-পর্বে।
এতসবের পর ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার হাত ধরে প্রথম বিশ্বকাপ অর্জন করে আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপের ফরম্যাট ছিল নক-আউট পর্ব ছাড়া। অর্থাৎ প্রথম পর্বের চার গ্রুপের সেরা আট দল নিয়ে আবারো করা হয় দুইটি গ্রুপ। আর সেখান থেকে দুই গ্রুপের দুই শীর্ষ দল খেলে ফাইনালে। সেবার আর্জেন্টিনা গ্রুপ ওয়ানে সঙ্গী হিসাবে পান ইতালি-ফ্রান্স ও হাঙ্গেরিকে। প্রথম রাউন্ডে দাপটের সঙ্গে পার হলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিল-পোল্যান্ড ও পেরুকে পান ম্যারাডোনারা। পেরুর বিপক্ষে ৬-০ গোলে জয়লাভ করে আর্জেন্টিনা। ফলে ফাইনাল নিশ্চিত হয় তাদের। এরপর ফাইনালে ৩-১ গোলে জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ মঞ্চ রঙিন করে আর্জেন্টিনা!
৭৮-৮৬ শুধুই ম্যারাডোনার।
১৯৭৮ এর পর ১৯৮৬ বিশ্বকাপে সেই একই মহামানব ম্যারাডোনার হাত ধরে দ্বিতীয়বারের মতো ইতিহাস রচনা করে আর্জেন্টিনা। ৮৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানিকে (পশ্চিম) ৩-২ ব্যবধানে হারায় আকাশি-সবুজ জার্সির দল। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর ১৯৯০ বিশ্বকাপে ফাইনালে সেই জার্মানিকে পায় আর্জেন্টিনা। তবে দ্বিতীয় দেখায় আর পেরে উঠতে পারেনি ম্যারাডোনারা।
রাশিয়া আসরে তারার মেলা আর্জেন্টাইন দলে
রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন দলে রয়েছেন আলোচিত ফরোয়ার্ড পাউলো দিবালা। জুভেন্টাস তারকাকে মেসির উত্তরাধিকারী হিসেবে অনেকেই চিহ্নিত করেছেন। এছাড়া ডি মারিয়া-মাশ্চেরানোর কথা না বললেই নয়। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এই দুই তারকা হতে পারেন তুরুপের তাস।
ইনজুরিতে আক্রান্ত সার্জিও আগুয়েরোও রয়েছেন কোচ সাম্পাওলির পরিকল্পনায়। এছাড়া এবারের আসরে পুরো ফোকাস থাকবে পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জেতা মেসির ওপর। তবে দুঃসংবাদ রোমেরোকে নিয়ে। বুধবার (২৩ মে) জানা যায়, হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়েছে তার। তাই তাকে ছাড়াই নামতে হবে আর্জেন্টিনাকে। যদিও তার পরিবর্তে গুজম্যানকে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে টিম ম্যানেজম্যান্টের।
বুড়ো মাশ্চেরানো দেখাতে পারেন চমক।
আর্জেন্টিনার ২৩ সদস্যের দল:
গোলরক্ষক: গুজম্যান, ফ্রাঙ্কো আরমানি (রিভার প্লেট), উইলি কাবায়েরো (চেলসি)।
ডিফেন্ডার: ক্রিস্টিয়ান আনসালদি (তোরিনো), মার্কোস রোহো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), মার্কোস আকুনা (স্পোর্তিং লিসবন), নিকোলাস ত্যাগলিয়াফিকো (আয়াক্স), গ্যাব্রিয়েল মার্কাদো (সেভিয়া), নিকোলাস ওটামেন্ডি (ম্যানচেস্টার সিটি), হাভিয়ের মাশ্চেরানো (হেবেই চায়না ফর্চুন), ফেডেরিকো ফ্যাজিও (রোমা)।
মিডফিল্ডার: এভার বানেগা (সেভিয়া), লুকাস বিগলিয়া (এসি মিলান), এডুয়ার্ডো সালভিও (বেনফিকা), ক্রিস্টিয়ান প্যাভন (বোকা জুনিয়র্স), ম্যাক্সিমিলিয়ানো মেজা (ইন্দিপেনদিয়েন্তে), অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া (পিএসজি), ম্যানুয়েল লানজিনি (ওয়েস্ট হ্যাম), জিওভানি লো সেলসো (পিএসজি)।
ফরোয়ার্ড: লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা), পাওলো দিবালা (জুভেন্টাস)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here