প্রতিবেশী দুই দেশ বাংলাদেশ আর ভারত। বাংলাদেশে যেখানে উচ্চমূল্যে ইন্টারনেট কিনতে হয়, সেখানে ভারতে পানির দামে মেলে ইন্টারনেট। ব্যবধান আকাশ-পাতাল বললেও কম হবে। ভারতের কলকাতায় ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনলে ভয়েস কল একদম ফ্রি। আর বাংলাদেশে প্রতি মিনিট ভয়েস কলে এখনো গড়ে এক টাকার বেশি গুনতে হয়। কলকাতায় রিলায়েন্স গ্রুপের জিও মোবাইল ফোনে ১৪৯ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮১ টাকা) দিয়ে ২৮ দিনের একটা প্যাকেজ নিলে পাওয়া যায় প্রতিদিন ফোরজির দেড় জিবি ইন্টারনেট। ভয়েস কল ফ্রি। কোন কারণে একদিনে দেড় জিবি শেষ হয়ে গেলে টুজির ইন্টারনেট আনলিমিটেড ফ্রি। সেখানে বাংলাদেশে শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোনের ২৮ দিন মেয়াদের ৫০০ মেগাবাইট ইন্টারনেট কিনতে লাগে ১৪৯ টাকা। এর সঙ্গে ট্যাক্স ভ্যাট ও এআইটি মিলিয়ে আরো প্রায় ২০ টাকা। শুধু কলকাতা নয়, গোটা ভারতেই একই চিত্র।

দুই দেশের ইন্টারনেটের তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভারতে জিও যেখানে মাসে ৪২ জিবি ইন্টারনেট দিচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে টেলিটক ছাড়া অন্য অপারেটরের ৪২ জিবির প্যাকেজই নেই। টেলিটকের ৩০ দিন মেয়াদী ৪০ জিবির ইন্টারনেট প্যাকেজ নিতে লাগে ১ হাজার ৮২৭ টাকা। ট্যাক্স ভ্যাট মিলে এটা প্রায় দুই হাজার ২০০ টাকার মতো। গ্রামীণফোনের সর্বোচ্চ ২০ জিবির প্যাকেজ আছে। সেখানে এটা কিনতে ২ হাজার ৪৩৬ টাকা গুনতে হয়। ট্যাক্স ভ্যাট যোগ করলে তিন হাজারের কাছাকাছি চলে যায়।
ভারতে শুধু এক মাস নয়, প্রায় তিন মাসেরও প্যাকেজ আছে। বাংলাদেশে কোন অপারেটরের এক মাসের বেশি প্যাকেজ নেই। জিও ফোনে ৩৯৯ রুপিতে একই সুবিধা মেলে ৮৪ দিন। অর্থাত্ প্রতিদিন দেড় জিবি ইন্টারনেট, ল্যান্ড ফোন বা মোবাইল ফোনে ভয়েস কল ফ্রি, সঙ্গে একশ এসএমএস। আর ১৯৮ টাকা দিলে দৈনিক ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে ২ জিবি করে। আর ২৯৯ রুপিতে মিলবে ৩ জিবি করে ৪জি ইন্টারনেট।
শুধু জিও না সবগুলো মোবাইল ফোন অপারেটরের মূল্য তালিকা কাছাকাছি। এয়ারটেলে গোটা ভারত জুড়ে ফ্রি কথা বলার পাশাপাশি দৈনিক ১.?৪ জিবি ডেটা দিচ্ছে ৪৪৮ রুপিতে। যার মেয়াদ ৮২ দিন। সঙ্গে দৈনিক ১০০ এসএমএস। এছাড়া ২৪৯ রুপিতে ২৮ দিন এসব সুবিধায় পাওয়া যাবে। ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে দৈনিক ২ জিবি। ভোডাফোনে ৪৫৮ রুপিতে ৮৪ দিন অফুরন্ত কথা বলার সুযোগ, সঙ্গে ১.?৪ ডিবি ?৪জি ডেটা, দৈনিক ১০০ এসএমএস। আর ১৯৯ রুপিতে একই সুবিধা মিলবে ২৮ দিন। এছাড়া ১৮ রুপি রিচার্জ করলে ১ ঘণ্টা যত খুশি ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। আইডিয়া ফোনে ১৯৯ টাকায় ২৮ দিন যত খুশি ফোন, দৈনিক ১০০ এসএমএস এবং ১.?৪ জিবি ৪ জি ডেটা। এই সেবা ৭০ দিন পাওয়া যাবে ৩৯৮ টাকায়। এখানেই শেষ নয়, একবার ব্যবহার করে পরের বার রিচার্জের সময় মেলে ২০ টাকা ছাড়।
বাংলাদেশে এই চিত্র পুরোই উল্টো। প্রতিদিন একজিবি-দেড়জিবি দূরে থাক গোটা মাসেই গ্রামীণফোনের দেড় জিবি ইন্টারনেট নিতে লাগে ৩০০ টাকার কাছাকাছি। ১০ জিবি নিতে লাগে দেড় হাজার টাকার কাছাকাছি। একমাত্র রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটকের মূল্য তুলনামূলক কম। তাদের ৩০ দিন মেয়াদী এক জিবি ইন্টারনেট নিতে লাগে দেড়শ’ টাকার মতো। আর ১০ জিবি নিতে লাগে এক হাজার টাকার মতো। বাংলাদেশের অপর দুই অপারেটর বাংলালিংক ও রবির অবস্থাও একই। রবিতে এক মাস মেয়াদী দুই জিবি কিনতে লাগে ৪০০ টাকার মতো। আর ৭ জিবির একটা প্যাকেজ কিনতে লাগে ৮০০ টাকার কাছাকাছি। বাংলালিংকে দেড় জিবি ইন্টারনেট কিনতে লাগে ৩০০ টাকার কাছাকাছি। আর ৩ জিবি কিনতে লাগে প্রায় ৪০০ টাকা। ২৫ জিবির একটি মাসিক প্যাকেজ নিলে লাগে প্রায় ২ হাজার ২৫০ টাকা।
এসব তো গেল খরচের হিসাব। বাংলাদেশে কোথাও ফোরজি তো মেলেই না, কখনও কখনও টুজিও মেলে না। অথচ ইন্টারনেট কাটা যাচ্ছে, মাসে বিল চলে যাচ্ছে সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো ভারতের কলকাতার কোথাও ফোরজি থেকে থ্রিজি হয় না। কলকাতার নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মোবাইল ফোন অপারেটরদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কলকাতায় ব্যবসা করতে হলে ভালো সেবা দিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও সেবার ব্যাপারে কঠোর। বাংলাদেশের চিত্র খানিকটা উল্টো। তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো প্যাকেজ নির্ধারণসহ সব ধরনের তত্পরতাই চালাচ্ছে।
টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মোবাইল ফোন অপারেটরদের বারবার বলা হচ্ছে, কিন্তু তারা কেয়ার করছে না। ইন্টারনেট সেবার মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এখন যা ইন্টারনেট মেলে তাদের সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কিছু নেই। প্রত্যেক গ্রাহকই ইন্টারনেট সেবা নিয়ে অপারেটরদের উপর ক্ষুব্ধ।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here