খোঁজ নেয়া শেষে এ বিষয়ে কমিশনের নথি প্রস্তুত করেছে সংশ্লিষ্ট শাখা। আর তাতে শর্ত পূরণ না হওয়ায় দল দুটিকে নিবন্ধন না দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, তারা দল দু’টির নিবন্ধন না দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বাকিটা কমিশনের হাতে।

এর আগে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও গণআজাদী লীগ- এ দল দু’টিকে নিবন্ধনের জন্য কমিশনে সুপারিশ করা হয়েছে। এখন তাদের কাগজপত্রের সঙ্গে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে মিল পেলে নিবন্ধন দেয়া হবে। তবে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নেবে।

জানা গেছে, ৩০ অক্টোবর নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। আবেদনের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৫টি দল রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে ইসি কর্তৃক নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী দলগুলোর সঠিক কাগজপত্র/ দলিলাদী যাচাই-বাছাই করা হয়।

ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৯টি দলের আবেদন বাতিল করা হয়। বাকি ৫৫ দলকে কাগজপত্র ঠিক করে দেয়ার জন্য ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। এ পর্যায়ে আরও নয়টি দলের আবেদন বাতিল হয়। অবশিষ্ট ৪৭টি দলের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৪৫টি দলকে নিবন্ধন না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বাকি দুটি বাংলাদেশ কংগ্রেস ও গণআজাদী লীগের আবেদন আমলে নেয় ইসি।

দল দু’টির উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তাদের যে অফিস থাকার কথা বলেছে সেগুলো আছে কিনা এবং এর সঙ্গে ভোটারদের সমর্থনের যে তালিকা যুক্ত করা হয় সেসব বিষয়ে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নেয় ইসি। খোঁজ নিয়ে মাঠপর্যায়ে শর্ত অনুযায়ী অফিস পায়নি ইসি কর্মকর্তারা। তাই এ দু’টি দলও নিবন্ধন পাচ্ছে না বলে ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে।

নিবন্ধনের ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, তিনটির মধ্যে একটি শর্ত পূরণ হলেই তারা নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। শর্তগুলো হলো-

১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনে আগ্রহী দলটির যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন।
২. যেকোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থীর অংশ নেয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায়। এবং
৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে।

ইসি সূত্র জানায়, এর আগে দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী নতুন ৪৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৪১টিই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদের ‘যোগ্যতার’ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। মাত্র দুটি দল শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যালয় ও কমিটি থাকার তথ্য দিয়েছিল। এরপর তাদের নিবন্ধন দেয় কমিশন। দল দুটি হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। প্রথম বছরে ১১৭টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ৩৯টি দল নিবন্ধন পায়। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। আর আদালতের আদেশে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ হয়। একই বছর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নামে নতুন একটি দলের নিবন্ধন দেয়া হয়।

এছাড়া সম্প্রতি ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধনও বাতিল করে ইসি। বর্তমানে ইসির নিবন্ধনে ৩৯টি রাজনৈতিক দল রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here