প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যক্তি স্বার্থের রাজনীতি দেশ ও জনগণকে কিছু দিতে পারে না। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। তিনি বলেন, এটা প্রমাণিত যে, বিএনপি’র ওপর জনগণের কোনো আস্থা ও বিশ্বাস নেই। কারণ তাদের শাসনামলে অর্থাৎ ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলছিল। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সরকারি বাসভবন গণভবনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যারা অতীতে লুটপাট করেছে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসলে আবারো লুটেপুটেই খাবে এবং শুধু নিজেদের ভাগ্য গড়বে। এ প্রসঙ্গে তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘর লুটপাট এবং ২০১৩ সালে সন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াও এবং নির্বাচন প্রতিহত করার নামে প্রিজাইডিং ও সরকারি প্রিজাইডিং অফিসার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়ে সেই আগুনে ফেলে বিদ্যুতের ইঞ্জিনিয়ার হত্যা এবং ২৭ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে হত্যার অভিযোগ করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওসারও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। ১৯৯৪ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠার পর গতকাল স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৪ বছর পূর্ণ হয়। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের শুরুতেই দলের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সন্তান এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু করতালি এবং স্লোগানের মাধ্যমে জয়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরকারের সাফল্যগাথা ও অর্জনসমূহ জনগণের কাছে তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায় থেকে আরো সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং বিগত সাড়ে নয় বছরে তার সরকারের অর্জনগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, জনগণকে উন্নয়নের কথাগুলো বার বার বলতে হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরতে হবে। কারণ সুখ পেলে জনগণ দুঃখের (অতীত স্মৃতি) কথা ভুলে যায়। ১৯৭১ সালের ২৭শে জুলাই ধানমন্ডির একটি বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে সপরিবারে বন্দি থাকার সময় জয় জন্মগ্রহণ করেন উল্লেখ করে সে দিনের কথা অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২৭শে জুলাই দিনটি আমার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে যখন বন্দি ছিলাম তখনই আমার প্রথম সন্তান জয় জন্মগ্রহণ করে। আজকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সঙ্গে জয়ের জন্মদিন এক হয়ে গেছে। এজন্য আমার দোয়া ও আশীর্বাদ সকলের জন্য। আমেরিকায় তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পর হত্যার ষড়যন্ত্র করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতৃবৃন্দকে অভিযুক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) দুর্নীতির মাধ্যমে এত টাকা বানিয়েছিল যে, আমেরিকার যে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র একজন অফিসারকে তারা কিনে ফেললো, জয়কে অপহরণ এবং হত্যা করার জন্য। যা আবার ধরা পড়লো সেই এফবিআই’র হাতে। বিএনপির যে নেতা এই কাজ করেছিল সে ধরা পড়ার পর তার বিচার হলো এবং সেখানে সেই নেতার শাস্তি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সেই মামলার রায়ে বেরিয়েছে- খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শফিক রেহমান অর্থ-পরামর্শ দিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এই বিষয়ে এই দু’জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের ওপর দেশের সাধারণ মানুষের আর কোনো আস্থা নেই। তারা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করলেও বায়তুল মোকাররমের ধর্মীয় বইয়ের দোকানে আগুন দিয়ে হাজার হাজার কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। মসজিদে ঢুকে মানুষ হত্যা করেছে। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে কলেজছাত্রী কেউ তাদের নির্যাতন-নৈরাজ্য থেকে রেহাই পায়নি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় খালেদা জিয়ার কারাগারে যাবার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ১০ বছরেরও বেশি সময় আদালতে মামলা চললো, বিএনপি’র এত বাঘা বাঘা আইনজীবীরা প্রমাণে ব্যর্থ হলো যে, খালেদা জিয়া অর্থ আত্মসাৎ করেনি। তিনি বলেন, আদালত তাকে জেল দিয়েছে। কাজেই আমাদের কাছে এখন মুক্তির দাবি করে লাভ কি, আমরা কিছুই করতে পারবো না। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ তাকে জেল দেয় নাই। সে রকম হলে তো ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি’র সন্ত্রাস ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা যেত। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রশ্ন করে বলেন, ‘যারা এতিমের অর্থের লোভ সামলাতে পারে না তারা কিভাবে দেশ চালাবে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকাও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, ২০০১ সালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে না পারায় তাদের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো এমনকি দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি পর্যন্ত পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশ আবারো পিছিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশে উন্নয়নের ধারা সূচিত হলেও মাঝে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত একটা কালো অধ্যায় গেছে এবং বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের কারণেই দেশে জরুরি অবস্থা এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী ’৭৫এর পট পরিবর্তনের পর ৬ বছর প্রবাসে জীবনে কাটাতে বাধ্য হয়ে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর দেশে ফেরার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে দেশে ফিরেছি, কারণ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং ভাত-ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়াই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। তিনি এ সময় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৭ দশমিক ৭৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আমাদের দারিদ্রের হার কমিয়েছি। ২০০৮ সালে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসলে তার সরকার এই বর্তমান সময় পর্যন্ত মেয়াদে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের হারানো সম্মানকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে কারো কাছে হাত পেতে আমাদের চলতে হয় না। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির শতকরা ৯০ ভাগ আমাদের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বাস্তবায়নের সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here