প্রভাষ আমিন
কিছুতেই পায়েলের ছবিটা মাথা থেকে সরাতে পারছি না। আসলে পায়েলের ছবিটা দেখলে মনের ওপর সাংঘাতিক চাপ পড়ে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল আমার ছেলের চেয়ে একটু বড়ই হবে। কিন্তু যতবার পায়েলের ছবি দেখি, ততবার আমার প্রসূনের কথাই মনে হয়। আমি নিজেকে পায়েলের বাবার জায়গায় ভাবি, পায়েলের মায়ের কথা ভাবি। কিভাবে তারা সইছেন এ শোক। আমি পায়েলকে চিনতাম না। আমারই এত কষ্ট হচ্ছে, বাবা-মা কিভাবে সইছেন?

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর হারিয়ে যাওয়ার খবর পত্রিকায় দেখেছি, অত পাত্তা দিইনি। লাশ উদ্ধারের খবরও সাংবাদিকসুলভ নির্মোহতায় দেখে গেছি। কিন্তু তার মৃত্যুর ধরনটা নিষ্ঠুরতার এত কালো অধ্যায় সামনে নিয়ে এলো। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মদনপুর এলাকায় যানজটে আটকে পড়া বাস থেকে নেমেছিলেন পায়েল। তিনি ফিরতে ফিরতে বাস ছেড়ে দেয়। দৌড়ে তিনি বাস আটকান। কিন্তু উঠতে গিয়ে এসি বাসের অটো দরজার ধাক্কায় ছিটকে পড়েন। তার নাক-মুখ রক্তাক্ত হয়ে যায়। এ পর্যন্ত ঘটনার পর আপনি কী করবেন? আমি জানি একশতে একশ জনই পায়েলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে দ্রুত নিকটস্থ কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। কিন্তু হানিফ পরিবহনের সেই বাসের চালক জালাল, তার সহকারী ফয়সাল এবং সুপারভাইজার জনি মিলে ‘আপদ’ বিদায় করতে চাইলেন এবং আহত পায়েলকে একটি ব্রিজের ওপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে বাস নিয়ে চলে গেলেন। আপনারা বলতে পারেন জালাল-ফয়সাল-জনি কি একশ জনের বাইরে? আসলে আমি যে একশ জনের কথা বলেছি, তারা মানুষ। কিন্তু এই তিনটা মানুষ নয়, পশু।

এ ঘটনায় আমার অনেকগুলো প্রশ্ন। ভোর রাতে একজন যাত্রীকে রেখেই বাসটি চলতে শুরু করল কেন? পায়েলের দুজন বন্ধুও ছিল গাড়িতে। জনি তাদেরকে বোঝায়, পায়েল পরের গাড়িতে আসছে। এতেই সেই দুই বন্ধু বুঝ মেনে গেল? তাদের একবারও মনে হলো না, ভোররাতে বন্ধুদের ফেলে, মুঠোফোন ফেলে পায়েল কেন পরের গাড়িতে উঠবে? তারা যদি তখনই অন্য যাত্রীদের নিয়ে বাসের কর্মচারীদের চেপে ধরতেন, তাহলে হয়তো পায়েলকে জীবিত উদ্ধার করা যেত। এ ঘটনার পর বাস মানেই আমার কাছে আতঙ্ক। বাসে উঠতে গেলেই মনে হবে, রাস্তায় আমাকে ফেলে দেবে না তো। অন্তত আমি আর কখনো হানিফ পরিবহনের বাসে উঠব না। এটা আমার প্রতিবাদ।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় চালকদের শাস্তি কম। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বারবার ঢাল হয়ে চালকদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন। খুনি বাস চালকদের গ্রেপ্তার করলে ধর্মঘট করে সারাদেশ অচল করে দেন অন্য চালকেরা। কিন্তু এটি দুর্ঘটনা নয়; পরিস্কার খুন, ঠান্ডা মাথার খুন। আমি তিন খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। আশা করি শাজাহান খান বা অন্য চালকেরা তাদের বাঁচাতে রাস্তায় নামবেন না।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here