ইলিয়াস কাঞ্চন
নামের বিচারেই ‘সড়ক পরিবহন আইন’ যথার্থ হয়নি। এটি হওয়ার কথা ছিল ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন’। বারবার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনুরোধ করেও সেটা করা যায়নি। সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া। নতুন আইনে চলমান ছাত্র আন্দোলনের দাবিও প্রতিফলিত হয়নি। জনকল্যাণে সরকারের সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। আইনটি আমাদের বিবেচনায় অগ্রহণযোগ্য।

২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। সেখানে কী ঘটেছিল? বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে। তাই ফাঁসির দাবি করেছে ছাত্ররা। অথচ আইনে রাখা হয়েছে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালালে ৫ বছরের জেল। ছাত্রদের দাবি তো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

নতুন আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর রাখা হয়েছে। অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে শাস্তি ৭ বছর হতে হবে। নতুন আইনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়নি। আবার সর্বনিম্ন শাস্তির দাবিও মানা হয়নি। ফলে আদালতের মাধ্যমে শাস্তি কমে যাওয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে।

আইনে বলা হয়েছে, হত্যা প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু সেটা হবে তদন্ত সাপেক্ষে ৩০২ ধারায়। এটা কি আমাদের দেশে আদৌ সম্ভব? ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো কেউ যদি মারা যায়, তাহলে ৩০২ ধারায় যাবে। সাধারণ মানুষ তো ওই জায়গায় যেতে পারবে না। রংপুরের একজন শ্রমিক মারা গেলে কেউ ৩০২ ধারায় নেবে? আসলে সুচিন্তিতভাবে মানুষকে ঠকানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে আইনে। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের জেল, আর নকল লাইসেন্স ব্যবহার করলে ২ বছরের জেল। এটা কী ধরনের কথা? তাহলে কে নকল লাইসেন্স দেখাবে, সে তো ধরা পড়লে লাইসেন্স ছুড়ে ফেলে দেবে। আইনে থাকা বৈষম্যগুলো দূর করা জরুরি।

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সব সময় চালককে দোষী ভাবা ঠিক নয়। দায়ী মালিক হতে পারে, পথচারীও হতে পারে। তাই আইনে চালক শব্দটির পরিবর্তে দায়ী ব্যক্তি ব্যবহার করা যেত। আবার চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা রাখা হয়েছে অষ্টম শ্রেণি, হেল্পারের (চালকের সহকারী) জন্য পঞ্চম শ্রেণি। তাহলে হেল্পার কি সারা জীবন হেল্পার থাকবে, নাকি হেল্পার থাকা অবস্থায় পড়াশোনা করবে? সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে তা পাঠ্যক্রমে (এইচএসসি পর্যন্ত) অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ছিল। কিন্তু সেটি করা হয়নি। সংসদে আইনটি পাস হওয়ার আগে বিষয়গুলো বিবেচনা করার অনুরোধ থাকবে। ২৫ বছর ধরে আমরা যা বলে আসছি, তা না মানার কারণেই বিস্ফোরণ হয়েছে।

আইন শুধু বানালেই হবে না, এর প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। সড়কে নৈরাজ্য দূর করতে মনিটরিং (তদারকি) কমিটি করতে হবে, সেই কমিটিতে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকারীদের কাউকে রাখতে হবে। নজরদারি কতটা হচ্ছে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

সুত্র: প্রথম আলো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here