রাজনীতিবিদরা চাঁদাবাজি না করলে পুলিশও করবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদে। সোমবার (১৩ আগস্ট) রাতে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা সঠিক হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এ জন্য সবার আগে রাজনীতিবিদদের সঠিক হতে হবে। রাজনীতিবিদরা ঠিক হলে পুলিশও ঠিক হবে। অনেকে বলেন, পুলিশ চাঁদাবাজি করে। আমরা রাজনীতিবিদরা কি চাঁদাবাজি করি না? রাজনীতিবিদরা চাঁদাবাজি না করলে পুলিশও চাঁদাবাজি করবে না।’

উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার চেয়ে কেউ বড় আওয়ামী লীগার হবেন না, প্লিজ। আপনাদের আওয়ামী লীগার হওয়ার দরকার নেই। এতদিন ধরে যেভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ও অসহিংসার পক্ষে কাজ করেছেন সেটিই করে যাবেন। আপনাদের কাছে নিরপেক্ষতা আশা করি।’

স্কুল ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে রাজনীতি কি করে অনুপ্রবেশ করলো এমন প্রশ্ন তুলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কি করে দলীয় ক্যাডারদের স্কুল পোশাক পরিয়ে রাস্তায় নামানো হয়েছিল? তারা কি করে স্কুল ব্যাগে শিল, নুড়ি, চাপাতি নিয়েছিল? এটা কি সত্য নয়? এটাকি অস্বীকার করার মতো?’

অনেককে ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়ে আন্দোলনে নামানো হয়েছিল দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাজধানীর জিনজিরা থেকে স্কুল পোশাক ও ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়ে অনেককে আন্দোলনে নামানো হয়েছিল। যেভাবে ভুয়া আইডি কার্ড বানানো হয়েছে, দুদিন পর সংসদ সদস্যেরও ভুয়া কার্ড তৈরি হবে। আছাদ ( ডিএমপি কমিশনার) সাহেব এসব সিরিয়াসলি দেখেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’

জিগাতলায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে চার মেয়েকে আটকে রেখে ধর্ষণের গুজবের ব্যাপারে কাদের বলেন, ‘যারা মুখ ঢেকে লাইভে বলে মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছে, এরা কারা? এরা জাতির শত্রু। এদের চিনে রাখতে হবে।’

সড়কে এখনও শৃঙ্খলা ফেরেনি মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা আগে ছিল না, এখনও নেই। প্রকৌশল ও শক্তি প্রয়োগের চেয়ে সবার সচেতনতা বেশি প্রয়োজন। মানসিকতা পরিবর্তন না হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না। শুধু কি চালকরা বেপরোয়া, পথচারীরা বেপরোয়া নয়? অনেককে দেখি কানে হেড ফোন লাগিয়ে রাস্তা পারাপার হন।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংলাপের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘তার ছেলে কোকো যখন মারা গেল, তখন প্রধানমন্ত্রী তার বাড়ির গেটে গেছেন কিন্তু তিনি গেট খোলেননি। তাদের সঙ্গে কি করে সংলাপ করবো। তিনি তো তার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে সংলাপের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন।’

অনুষ্ঠানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। এদেশে রাজনীতি করতে হলে বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করতে হবে।’

জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু কিছু সৈনিকদের হাতে মারা যাননি। এর পেছনে বড় বড় রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র রয়েছে। আমরা বিশাল ষড়যন্ত্রে শিকার হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা যত বড় অপরাধ, তার চেয়ে বড় অপরাধ তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা। কে বেশি অপরাধী; যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তারা, নাকি যারা তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল? যিনি দেশটি উপহার দিয়েছিলেন, একটা সময় সেই দেশের টেলিভিশনে তাকে দেখানো হয়নি।’

জাফর ইকবাল বলেন, ‘ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা একটা সময় প্রশ্ন করতো স্বাধীনতার ঘোষক কে? এদেশের শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্নভাবে পড়ানো হতো। তারা এখন জেনে গেছে একটা ঘোষণা দিয়ে একটা দেশ স্বাধীন হয় না। এখন আর তারা এ প্রশ্নটা করে না, তারা এখন সঠিক ইতিহাস জানে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, অতিরিক্ত আইজি প্রসাশন মোখলেসুর রহমান, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজির আহমেদ প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here