প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ১৭ ব্যাংকের মাধ্যমে মোট ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ জন ব্যাংক হিসাব খুলেছেন। এর মধ্যে গ্রামের মানুষ ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৩৭৭ জন। গত জুন পর্যন্ত শহরে দুই লাখ ৩৭ হাজার ২৩ জন ব্যাংক হিসাব খুলেছেন।

অর্থাৎ শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ছয় গুণ। তবে নারী হিসাবধারীর চেয়ে পুরুষ হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় দুই গুণ বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জন্য ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৪ জন পুরুষ ব্যাংক হিসাব খুলেছেন। ব্যাংক হিসাব খোলা নারী রয়েছেন ছয় লাখ ৯ হাজার ৮২৪ জন ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারির পর ২০১৪ সালে প্রথম এ সেবা চালু করে ব্যাংক এশিয়া।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ছিল আট লাখ ৭২ হাজার ৮৬৫ জন। এই হিসাবে গত একবছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নতুন গ্রাহক হয়েছেন ৯ লাখ চার হাজার ৫৩৫ জন। আর গত তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নতুন গ্রাহক হয়েছেন  তিন লাখ আট হাজার ৬০৩ জন। মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক ছিলেন ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৯৭ জন। ছয় মাসের ব্যবধানে নতুন গ্রাহক হয়েছেন পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩ জন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক ছিলেন ১২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৭ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত ও সরকারি সহযোগিতার কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিতে একধরনের পুনর্জাগরণ ঘটেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুসন কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কারণে।’

প্রসঙ্গত, ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর হিসাবে যোগ দেওয়ার পরই ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুসন কর্মসূচি হাতে নেন।

আতিউর রহমান বলেন, ‘ওই সময় ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুসনকে কার্যকর করতে মুদ্রানীতিকে কাজে লাগানো হয়। টাকা যাতে গ্রামের মানুষের হাতে সহজে পৌঁছয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ জন্য পেমেন্ট সিস্টেমকে আধুনিক করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আগে চেক দিলে টাকা জমা হতে একসপ্তাহেরও বেশি সময় লাগতো। এখন সেটি কয়েক সেকেন্ডে জমা হয়। যখন পেমেন্ট সিস্টেম আধুনিক হলো, তখনই মোবাইল ব্যাংকিং আইডিয়া মাথায় আসলো। পাশাপাশি শুরু করা হয় এজেন্ট ব্যাংকিং। যেখানে ব্যাংক কখনও যেতে পারেনি, সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিং কাজ করছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন হাজার ৫৮৮টি এজেন্টের আওতায় পাঁচ হাজার ৩৫১টি আউটলেটের মাধ্যমে সারাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়া, মধুমতি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংক এশিয়ার দুই হাজার ২৪২টি আউটলেটের মধ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা এক হাজার ৮২৮টি। তিন মাস আগে অর্থাৎ মার্চে তিন হাজার ২১৬ এজেন্টের আওতায় আউটলেট ছিল চার হাজার ৯০৫টি।

২০১৮ সালের ৩০ জুনের পর এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবে মোট জমার পরিমাণ (আমানত) দাঁড়ায় দুই হাজার ১২ কোটি টাকায়। তিন মাস আগে অর্থাৎ মার্চের শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবে মোট জমার পরিমাণ (আমানত) ছিল এক হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। এই হিসাবে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।

জানা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক তার চলতি হিসাবে সর্বোচ্চ চারবার ২৪ লাখ টাকা নগদ জমা এবং সর্বোচ্চ দুটি লেনদেনে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করতে পারেন। সঞ্চয়ী হিসাবে সর্বোচ্চ দুবার আট লাখ টাকা নগদ জমা এবং সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা করে দুটি লেনদেনে ছয় লাখ টাকা তুলতে পারেন। তবে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে উত্তোলনসীমা প্রযোজ্য হয় না। দিনে দুবার জমা ও উত্তোলন করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খোলা মোট হিসাব সংখ্যার ৫৩ শতাংশের বেশি হিসাব খুলেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ব্যাংক এশিয়া লি. ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণও হচ্ছে। বেসরকারি খাতের ছয়টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট ১৩৭ কোটি ৩২ লাখ ৯৪ হাজার টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে শহর অঞ্চলে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২৩ কোটি ৭৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং গ্রামাঞ্চলে ঋণ বিতরণ হয়েছে ১১৩ কোটি ৫৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামের উন্নতি মানেই দেশের উন্নতি। এ কারণেই গ্রাম এলাকায় ব্যাংকের শাখা স্থাপন, এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যয় সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় প্রতিনিয়ত এর প্রসার ঘটছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ২০টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি ব্যাংক মাঠপর্যায়ে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ব্যাংকগুলো হলো এনআরবি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here