যুক্তফ্রন্ট ও ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উষ্মা প্রকাশ

0
404

বাংলা খবর, নিউইয়র্ক:
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তফ্রন্ট ও ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এরা সব এক জায়গায়। কেউ সুদখোর, কেউ ঘুষখোর, কেউ মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত, কেউ খুনি। এভাবে সব আজকে এক জায়গায়।স্থানীয় সময় রবিবার রাতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের হোটেল হিলটনের গ্র্যান্ড বলরুমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, সমস্ত দুর্নীতিবাজকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, তারা লড়াই করবেন! কামাল হোসেন লড়াই করবেন? বি চৌধুরী লড়াই করবেন? মান্না লড়াই করবে?

বদরুদ্দোজা-কামালদের সমাবেশে মইনুল হোসেনের উপস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সাথে গেছেন মইনুল হোসেন। সে আবার কাকরাইলের বাড়ির জমি দখল করে; সে জায়গা নিয়ে মামলা আছে। সাজু হোসেন ভার্সেস রাষ্ট্র। সে মামলায় সে সাজাপ্রাপ্ত। ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে এক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের ভাইয়ের নামে দখল নেওয়ার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা সবগুলো এখন এক জায়গায় হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অপরাধটা কী? দোষটা কী? সরকার উৎখাত করতে হবে কেন? কী কারণে? কী কাজটা করিনি দেশের জন্য?”

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক এলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ফজলুর রহমান, আক্তার হোসেন, সৈয়দ বসারত আলী, লুত্ফুল করিম, শামসুদ্দীন আজাদ, আবুল কাশেম ও মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আইরীন পারভীন প্রমুখ।

বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ শান্তিতে আছে। শুধু শান্তিতে নেই বিএনপি। আর নতুন করে যোগ হয়েছে যুক্তফ্রন্ট। প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে আর আমেরিকায় আসার সুযোগ হবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। আপনাদের আত্মীয়-স্বজনদের বলবেন নৌকায় ভোট দিতে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দেশের উন্নয়ন হয়, আর অন্যরা থাকলে শুধু দুর্নীতি হয়।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসীরা দেশের দুঃসময়ে সবসময় পাশে দাঁড়িয়েছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় তারা সোচ্চার ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্দোলন করেছেন, সর্বোপরি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে চলেছেন। তিনি ঢাকা- নিউইয়র্ক- ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমান পুনরায় চালু করার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দুঃশাসন এবং দুর্নীতির কারণে ইমার্জেন্সি সরকার এসে প্রথমে আমাকে জেলে নিয়েছিল। সেই জেলখানায় বসেই আমি দিন বদলের সনদ তৈরি করেছিলাম। আমরা ক্ষমতায় এসে দিনবদল করেছি, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি। এবার ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। কিন্তু ডিজিটাল করে সমস্যাও হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। সেই অপপ্রচার বন্ধে এবং সামাজিক নিরাপত্তায় আমরা ডিজিটাল আইন পাস করেছি। কিন্তু সমস্যা তৈরি করছে সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না। ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের সময় অনেকেই স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করেছে। তিন দিনের মাথায় আমরা দেখলাম বিভিন্ন লেবাসে বুড়া খোকাদের। একজন ফটো সাংবাদিক সরকারের বিরোধিতায় নেমে পড়লেন। পুলিশ তাকে বুঝানো চেষ্টা করলেন, তিনি পুলিশকেও ধমক দিয়ে বললেন, আমি বলে দেবো আপনারা আমাকে নির্যাতন করছেন। তখন পুলিশ উনাকে চালান করে দেয়। এখন তা নিয়ে দেশে বিদেশে হৈ-চৈ।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার চাচা কামাল হোসেন, তারেকের বদু কাকা (বি. চৌধুরী), এরশাদ-জিয়ার সুনজরে থেকে ডাকসুর নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, সুদখোর ড. ইউনূস, কাকরাইলে বাড়ি দখলকারী ব্যারিস্টার মঈনুল, মৃত ব্যক্তির জাল সাটির্ফিকেট তৈরি করে গুলশানে বাড়ি দখলকারী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদরা যুক্তফ্রন্ট করেছেন। ড. ইউনুস হিলারির সহযোগিতায় আমাদের চোর বানাতে চেয়েছিলো। কিন্তু কানাডার আদালত বিশ্ব ব্যাংকের সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয়।

তিনি বলেন, বিএনপি এত দুর্নীতি করেছে যে তারা এফবিআই’র অফিসার ক্রয় করেছিল সজিব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা এবং অপহরণ করতে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাই জেলে রয়েছে, তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী। এসব মামলা আমার সরকার করেনি। তার পছন্দের লোকজনই করেছিলো। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি। জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় থাকবো, না দিলে থাকবো না। আমার চাওয়া- পাওয়ার কিছু নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। আমার বোন রেহান আমাকে বলেছে ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকেও খাওয়াতে পারবে না কেন?

সমাবেশে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরও তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়েন না। কারণ, এমডির পদ ছাড়লে তো গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা মারা যাবে না।
শিগগিরই ঢাকা-নিউ ইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালুর আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের সাথে যা কথা হচ্ছে, ডাইরেক্ট ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক আসতে পারব।

ছবি : নিহার সিদ্দিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here