বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য ও কর্মসূচী চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে যুক্তফ্রন্ট নেতা আ স ম আবদুর রবের বাসায় জাতীয় ঐক্যে নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকে এ কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন এবং জাতীয় ঐক্যের নেতা আ ও ম শফিকুল্লাহ। এ দু’জন বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্য এবং কর্মসূচীর একটি খসড়া তৈরী করবেন। আগামীকাল ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের নেতারা এই খসড়া নিয়ে আলোচনা করে একটি ইশতেহার চূড়ান্ত করবেন। এরপর ১২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা জাতীর সামনে প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে তাদের আলাদা আলাদা দাবি উপস্থাপন করেছে। কারো আছে সাত দফা কারো পাঁচ দফা। এসব আলোচনার ভিত্তিতে পাঁচ দফা দাবিতে এক সাথে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আলোকে একটি ইশতেহার বা ঘোষনা পত্রের খসড়া তৈরী করছি। এ নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ড. কামাল হোসেনের বাসায় নেতারা বসে আলোচনা করে ঘোষনাপত্র চূড়ান্ত করবেন। এটি শুক্রবার (১২ অক্টাবর) সাংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।
সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্দলীয় সরকার গঠন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও আটক রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি, অবাধ নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এই পাঁচ দফা দাবিতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই পাঁচ দফা ছাড়া তাদের বেশ কিছু লক্ষ্য রয়েছে। ক্ষমতায় গেলে কিভাবে দেশ পরিচালনা করা হবে সেসব বিষয় নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা বা ইশতেহার তৈরী করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের দিক নির্দেশনা থাকবে এই ইশতেহারে।
বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চায় জাতীয় ঐক্য। বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের সমন্বয়ে গঠন করা হবে এই প্ল্যাটফর্ম। যার নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও জাতীয় যুক্তফ্রন্ট বা জাতীয় ঐক্য এধরণের কোন একটি নাম আসতে পারে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
এই ঐক্য রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে চায়। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের মতো সব কিছু আগামীতেও কোন সরকারের একক নিয়ন্ত্রণে থাকুক সেটা চায় না। এজন্য প্রয়োজনে বিরোধী দলকে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার এবং সংসদ ও মন্ত্রী সভায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেয়া হবে। এই বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত না হলেও বিএনপি নেতা এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্ল্যাটফর্মে আরও আলোচনা হবে। এছাড়া এই প্ল্যাটফর্মের অধীনে একই সাথে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন ঐক্যের নেতারা।
জাতীয় ঐক্য যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারে তাহলে সংবিধান সংশোধন করা হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সর্বক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। যাতে ক্ষমতাসীন দল বা সরকার বর্তমান সরকারের মতো এককভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারে। জাতীয় ঐক্য আরও চায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন। যে অনুচ্ছেদে এমপিদের জন্য নিজ দলের বাইরে মতামত দেয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমানে কোন এমপি যদি তাদের দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দেয় তাহলে এমপি পদ বাতিল হয়ে যাওয়ার বিধান রয়েছে। জাতীয় ঐক্য চায়, এই বাধ্যবাধকতা তুল দিবে, এমপিরা তাদের পছন্দানুযায়ি, ইচ্ছেমত স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারবে। যেটি এখন ক্ষমতার ভারসাম্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র, তথ্য, অর্থ, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতির ওপর ক্ষমতাসীন দলের একক নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এছাড়া স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন করা হবে। তারা নিজেদের কাজ নিজেরা করতে পারে সেই সুযোগ দিতে হবে, তাদের পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেবে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে পৃথকীকরণ করতে হবে। যাতে বিচার বিভাগের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকে। সুপ্রিম কোর্ট এবং অন্যান্য সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য সম্পূর্ণ একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হবে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরী করা হবে। জাতীয় ঐক্যের নেতৃবৃন্দ গত কয়েকটি বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং যুক্তফ্রন্ট পাঁচ দফা দাবি এবং দেশ পরিচালনায় নয়টি লক্ষ্য উপস্থাপন করে। বিশিষ্ট আইনজীবী, গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন এটি উপস্থাপন করেন। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে তা জাতীয় ঐক্যের চূড়ান্ত রূপ নেয়। একমঞ্চে এদিন বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং যুক্তফ্রন্টের নেতারা জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।
উৎসঃ ইনকিলাব