ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন

0
65

বাংলা খবর ডেস্ক:
সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন দেশের পত্রিকাগুলোর সম্পাদকরা। সম্প্রতি কার্যকর হওয়া ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’র নয়টি ধারা সংশোধনের দাবিতে তাঁরা আজ রাস্তায় নামেন। কর্মসূচিতে ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’ সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পাশ হওয়ায় আগ থেকে আমরা আইনটির বিভিন্ন ধারা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। আমরা মনে করি এ আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে এ আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে। আমরা চাই এসব সংশোধনী আগামী সংসদ অধিবেশনে সংশোধন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা হোক।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন- এ আইন নিয়ে এখনো আলোচনার সু্যোগ আছে। আমরা এ প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানাই। আমরাও আলোচনায় বসতে চাই। তবে আলোচনার নামে কোনো প্রহসন মানা হবে না।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যমে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের কেবল নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে, কিন্তু কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তারা তখনই কোনো বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন তারা সেই সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে কেন সেটা প্রকাশ হলো সে বিষয়ে (প্রতিষ্ঠান) যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে না।


মাহফুজ আনাম বলেন, সংবাদমাধ্যমে কম্পিউটার জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে। সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ও যথাযথ আইনি পক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না। সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা ঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি-না তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত। এ লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করতে হবে।সম্পাদক পরিষদের সাত দফা দাবি‘বর্তমান সরকারের পাশ করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্বার্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এ আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে সেগুলো সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।’ উল্লেখ করেন সম্পাদক পরিষদের এ সাধারণ সম্পাদক।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সংবাদ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সমকাল ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি প্রমুখ।

সাংবাদিক মহল ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের আলোচনার মধ্যেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ পাস হয়। এ আইনের বহুল আলোচিত ৩২ ধারাসহ নয়টি ধারা নিয়ে সাংবাদিক সমাজ আপত্তি জানিয়ে আসছে।

এসব ধারা রেখে আইনটি বাস্তবায়ন হলে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি’ হয়ে উঠবে আপত্তি জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ এর আগেও মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছিল। তখন মানববন্ধন স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন আইন, তথ্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। সেখানে গণমাধ্যমের আপত্তিতে থাকা ধারাগুলো আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।

এরপর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আইন প্রসঙ্গে বলেন, যাদের অপরাধী মন নেই, তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নোংরামি ঠেকাতেই এ আইন করা হয়েছে।মানববন্ধনে কথা বলছেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম। এরপর ৮ অক্টোবর সেই ধারাগুলো নিয়েই ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’-এ স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তার সম্মতির ফলে আইনটি কার্যকর হয়ে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here