উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছর পূর্তি উদযাপন

0
110

বাংলা খবর ডেস্ক : উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরপূর্তি উদযাপিত হয়েছে নিউইয়র্কে। সে সাথে হয়েছে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও হেমন্ত উৎসব। উদীচীর ২ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় গত ২০ ও ২১ অক্টোবর। জ্যাকসন হাইটসের ৭৩-১০, ৩৪ এভিনিউতে আইএস ২৩০ এ উদীচী স্কুলের এ আয়োজন ছিল উল্লেখ করার মত। উদীচীর অনুষ্ঠানের এবারের ম্লোগান ছিল ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। এবারের অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হয় সদ্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রমা চৌধুরী ও বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংসকে।


২ দিনব্যাপী উৎসবের কর্মসূচির সূচনা ঘটে ২০ অক্টোবর সকাল সাড়ে এগারোটায় শিশু কিশোর অভিভাবকদের বর্ণাঢ্য র‌্যালির মধ্য দিয়ে। র‌্যালি, সম্মেলন ও হেমন্ত উৎসবসহ অন্যান্য কর্মসূচির উদ্বোধন করেন কানাডা থেকে আগত উদীচী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল মালিক। র‌্যালির নেতৃত্ব দেন প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মোহম্মদ উল্লাহ, লেখক বুদ্ধিজীবী বেলাল বেগ, উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক ও প্রিন্সিপাল জীবন বিশ্বাস ও অন্যতম পরিচালক সাবিনা হাই উর্বি।

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জীবন বিশ্বাসের পরিচালনায় সাংগঠনিক অধিবেশন ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সভাপতি ড. আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে। সেখানে উদীচীর জন্মের ইতিহাস, আদর্শ, উদ্দেশ্য নিয়ে কাউন্সিলরা আলোচনা করেন। শেষে সাবজেক্ট কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে কয়েকটি পদে কো-অপ্ট কর করার সুযোগ রেখে যে কমিটি পাশ হয়। তাতে পুরনো কমিটির সবাই দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এতে সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন যথাক্রমে ড. আব্দুল্লাহ, সুব্রত বিশ্বাস, জীবন বিশ্বাস, সাবিনা হাই উর্বি।
মূল কর্মসূচি শুরু হয় জীবন বিশ্বাসের নেতৃত্বে ২টি গান এবং শফি চৌধুরী হারুনের পরিচালনায় ২টি গানের মধ্য দিয়ে। এসব গানে উদীচীর ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়।


এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আজিজুল মালিক। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিশু কিশোরদের অংকন ও বাংলা লিখন প্রতিযোগিতা মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র প্রদর্শন, কবিতা ও নাটক কর্মশালার আয়োজন করা হয় ফারুক ফয়সাল ও ফজলুল করিমের পরিচালনায়।
আলোচনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুব্রত বিশ্বাস। অংশ নেন আজিজুল মালিক, বেলাল বেগ, খোরশেদুল ইসলাম ও ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান।
উদীচীর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাংস্কৃতিক সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা হয। এরপর অনুষ্ঠিত হয় নৃত্যানুষ্ঠান ও তবলা লহরী।

সন্ধ্যার পর পরিবেশিত হয় মুত্তালিব বিশ্বাসের পরিচালনায় ঐতিহ্যের বাংলা গান। এই গান সবাই উপভোগ করেন।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় সকালে। আর শেষ হয় রাত দশটায়। এই দিনের অনুষ্ঠানের মধ্যে শিশু কিশোরদের বাংলা বই পাঠের প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র প্রদর্শন, সংগীত বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত হয় প্যানেল আলোচনা।

বাংলা বই পাঠের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোর অংশ নেয়। সংগীত বিষয়ক কর্মশালা পরিচালনা করেন মুত্তালিব বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে সংগীত বিষয়ক কর্মশালাতে প্রবাসের বিভিন্ন শিল্পীরা অংশ নেন। মুত্তালিব বিশ্বাস সংগীতের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সুর, তাল, লয়, সুরের প্রকার ভেদ, স্বরের কাজ ও বিভিন্ন ধরণের গান নিয়ে আলোচনা করেন। তার কর্মশালা অংশগ্রহণকারীরা বেশ উপভোগ করেন। মুত্তালিব বিশ্বাস বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করেন।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী বেলাল বেগ। তিনি তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের উদীচী, যুক্তরাষ্ট্রের উদীচীর পথ চলা নিয়ে কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল কর্মসূচী শুরু হয় জীবন বিশ্বাসের রচনা ও সুরের একটি গান দিয়ে। ‘আমরা যে এক ঝাক পায়রা’ এই গানটি দিয়ে। তিনি তার গানে উদীচীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন। তার নেতৃত্বে শিশু কিশোরদের ২টি গান এবং শফি চৌধুরী হারুনের পরিচালনায় ২টি গান পরিবেশিত হয়। এসব গানে উদীচীর ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়।
সত্যেন সেন স্মারক পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয় ডাঃ ওয়ালেদ চৌধুরীকে। এরপর অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। নৃত্য পরিবেশন করে উদীচীর শিল্পীরা। একক সংগীতানুষ্ঠান ছিল প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীর। সুবীর নন্দী তার জনপ্রিয় বিভিন্ন গান পরিবেশন করে দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন।
মেলায় কোন প্রবেশ মূল্য ছিল না। অনুষ্ঠানে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর গণসংঙ্গীতের অনুষ্ঠানও দর্শক শ্রোতারা উপভোগ করেন। আগামী দিনে আরও নতুন নতুন বিষয় উপস্থাপন করারও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। শেষ দিনে সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী।

এবারের উদীচীর সত্যেন সেন স্বারক পুরস্কার পেয়েছেন ডাঃ ওয়ালেদ চৌধুরী: ডাঃ ওয়ালেদ চৌধুরী একজন নিভৃতচারি প্রচারবিমূখ মানুষ। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ এই নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। নিউইয়র্কের প্রগতিশীল কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে সাচ্ছন্দবোধ করেন। যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর জন্মলগ্ন থেকে এর সাথে নানাভাবে জড়িয়ে রেখেছেন। বিভিন্ন সময় উদীচীকে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। তিনি একজন সংস্কৃতি মনা মানুষ। নিউইয়র্কের কোথাও কোনো সংস্কৃতি অনুষ্ঠান হলে ডাঃ ওয়ালেদ চৌধুরী এবং স্ত্রী নিলূফার চৌধুরীকে দেখা যায়। লিংকন সেন্টার, কার্নেগি হল, টাউন হল, সিম্পনি স্পেস, নিউইয়র্ক, নিউজার্সিসিটির স্কারবল সেন্টার, লংআইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির সি ডব্যু পোস্ট ক্যাম্পাসের টাইমস সেন্টার, ব্রুকলিন একাডেমি অব মিউজিক, নিউজার্সি পারফর্মিং আর্টস সেন্টার বা অন্য কোথাও যদি উপমহাদেশের কোন ধ্রুপদি শিল্পীর সংগীতানুষ্ঠান বা যন্ত্র সংগীতের আসর হয়, সেখানে যদি দু’জন বাংলাদেশীকে দেখা যায়, তাহলে তিনি ডাঃ ওয়ালেদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী নিলূফার চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here