‘জোটে অথবা পাশে’ আরও দলকে জোটে চায় ঐক্যফ্রন্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে চাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একসঙ্গে না হলে, যুগপৎ আন্দোলনের জন্য অন্যদের পাশে চাইবে ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া নির্বাচন-পরবর্তী অবস্থা নিয়ে করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে একটি জাতীয় সংলাপ করবে তারা।

গত বছরের অক্টোবরে সরকারবিরোধী জোট হিসেবে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এ জোটে অংশ নেয়। এখানে দলের সংখ্যা ৫টি। তবে ওই সময় বাম গণতান্ত্রিক জোটকে এই ঐক্যে ডাকা হয়েছিল, কিন্তু তারা আসেনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটও পরে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ‘মিলেমিশে’ নির্বাচনে অংশ নেয়। এই জোটে দলের সংখ্যা ২৩টি। ফলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও ড. কামালের ঐক্যফ্রন্টে এখন দলের সংখ্যা ২৭টি। দুটি জোটেই আছে বিএনপি।

নির্বাচন শেষে ক্ষমতাসীন মহাজোট ছাড়া বেশির ভাগ দলই এবারের নির্বাচনকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। সম্প্রতি বাম গণতান্ত্রিক জোট এই নির্বাচনকে বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচন চেয়ে মানববন্ধনও করেছে। বাম জোটকে নির্বাচনের আগে পাশে পায়নি ঐক্যফ্রন্ট। তবে আবারও বামদের নির্বাচন-পরবর্তী কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানাতে যাচ্ছে তারা। এ ছাড়া ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও যুগপৎ আন্দোলনের জন্য ডাকা হতে পারে।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় ঢাকার বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনটি কর্মসূচির কথা জানানো হয়। এগুলো হলো: জাতীয় সংলাপ, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করা ও নির্বাচনে সহিংসতা হওয়া এলাকায় গণসংযোগ। তবে বৈঠকে অন্য দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়েও আলোচনা হয় বলে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নেতা জানান।

ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যুগপৎ আন্দোলন বা কীভাবে কী করা যায়, সে বিষয়ে বৈঠকের জন্য দু-এক দিনের মধ্যে অন্য দলগুলোর কাছে আমন্ত্রণপত্র যাবে। এ ছাড়া জাতীয় সংলাপের জন্যও তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানান তিনি।

ঐক্যফ্রন্টের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, নির্বাচনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছে। অন্য দলগুলোকে বলা হবে যে, নির্বাচনে তাদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে, তাদেরও মামলা করার ব্যাপারে অনুরোধ করা হবে। একত্রে না হলেও যুগপৎ আন্দোলন করা যায় কি না, সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। তিনি জানান, বাম জোট সরাসরি কিছু বলেনি। নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও ভাবার কথা বলেছে। এই নেতা আরও জানান, জাতীয় সংলাপ ও যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির অন্যতম জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে বাকি সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, ‘যেসব রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নির্বাচন করেছে, তারা বিচ্ছিন্নভাবে যে যেখান থেকে পারছে কথা বলছে, বাম জোট কর্মসূচি দিচ্ছে। যদি ওনারা যুগপৎভাবে নিজেদের পন্থায় করতে চায় এবং একসঙ্গে যদি করতে চায়, সে বিষয়েও আলাপ করা হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি দু-এক দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।’

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও দলকে সঙ্গে নিয়ে একটি সর্বদলীয় জাতীয় সংলাপ করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ জোটের কয়েকজন নেতা জানান, কামাল হোসেনের দাওয়াতে এবং তাঁর নেতৃত্বে এ সংলাপ হবে। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাসহ প্রায় সব দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হবে। সর্বদলীয় একটি জাতীয় সংলাপ হবে। নেতারা বলেন, এবারের নির্বাচনের ভুক্তভোগী প্রায় সব দলই। পরবর্তী সময় কী করা উচিত বা কী ধরনের কর্মসূচিতে যাবে, সেসব বিষয়ে এ সংলাপ হবে। দুই সপ্তাহের মধ্যেই জাতীয় সংলাপটি হতে পারে বলে জানান একাধিক নেতা।

যুগপৎ আন্দোলন বা সংলাপের বিষয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম বলেন, এখন পর্যন্ত বাম জোট নিজেদের মতো করেই চলার সিদ্ধান্তে আছে।

এ ছাড়া আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেলে দলের মধ্যে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির রাজনৈতিক উপদেষ্টা আশরাফ আলী আকন বলেন, তাঁরাও জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে চান। তবে আমন্ত্রণ পেলে তাঁরা ভেবে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here