বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে নির্যাতিত অমুসলিম সংখ্যালঘুদের ‘মা ভারতী’র সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, মা ভারতীর এসব সন্তানকে সহায়তা করতে ভারতের নাগরিকত্ব বিল (সংশোধিত) প্রণয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তার সরকার। নরেন্দ্র মোদি জম্মু সফরে গিয়ে ওই বিলটি পাস করানোর বিষয়ে তার জোরালো অবস্থান ঘোষণা করেন। রোববার তিনি জম্মুর বিজয়পুরে এক জনসমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইকোনমিক টাইমস।

ওই সমাবেশে মোদি বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে মা ভারতীয় অসংখ্য সন্তান আছেন। তারা নির্যাতনের মুখে। এক সময় যারা ভারতের অংশ ছিল, পরে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ফলে তারা আলাদা হয়ে গেছে, তাদের পাশে দাঁড়াবো আমরা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের যেসব হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পারসী, জৈন সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন নির্যাতনের অভিযোগে, তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। এ জন্য তারা নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে প্রণয়ন করেছে নাগরিকত্ব (সংশোধিত) বিল। এ বিলটি পাস করা নিয়ে ভারতে তো বটেই, পুরো উপমহাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে অবিরাম রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখান থেকে এ বিলের তীব্র বিরোধিতা করা হচ্ছে। ভারতের ভিতরে রাজনৈতিক বোদ্ধারা এ বিলের সমালোচনা করেছেন। প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যেও। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, এ বিলটির মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আরো ঝুঁকিতে ফেলা হবে। যেসব দেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হন বা হয়েছেন সেখানে তাদের জমিজমা দখল করে নিতে আরো বেশি উদ্যোগী হবে একটি মহল। হিন্দু বা অন্য সংখ্যালঘুদের যেহেতু ভারত আশ্রয় দেবে তাই তাদের ওপর এই নির্যাতনের খড়গ আরো তীব্র হতে পারে। এতে নতুন করে একটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।

অন্যদিকে ভারতের রাজনীতিকরা মনে করছেন, এ বছর অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বিলটিকে ভোট আদায়ের একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে বিজেপি। এ বিলটির বিরোধিতা করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস।

এমন বিরোধিতার জবাব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি কংগ্রেসকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ওই দলটি এক সময় ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তারা আমাদের ভাইবোনদের বেদনার দিকে দৃষ্টি দেয় নি। কিন্তু প্রতিশ্রুতিসহ আমরা সামনে এনেছি নাগরিকত্ব (সংশোধিত) বিল। যদি ওইসব মানুষ তাদের ধর্মবিশ্বাসের কারণে বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন তাহলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো।

কংগ্রেসকে টার্গেট করে নরেন্দ্র মোদি কর্তারপুর করিডোর ইস্যুতে কথা বলেন। সম্প্রতি ওই করিডোর খুলে দিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বলেন, পূর্ববর্তী সরকার দেশের প্রয়োজনীয়তা ও সেন্টিমেন্টের দিকে মোটেও নজর দেয় নি। আপনারা সবাই এ বিষয়ে সচেতন। ধরুন কর্তারপুর করিডোর ইস্যুর কথাই। তারা কি এ ইস্যুতে নজর দিয়েছিল?

এদিন জম্মুর বিজয়পুর ও লেহতে জনসমাবেশে বক্তব্য রাখেন নরেন্দ্র মোদি। এর আগে তিনি জম্মু ও কাশ্মিরে বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার কাশ্মিরি পন্ডিতদের বিষয়ে নজর দিতে আগ্রহী, যারা সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে কাশ্মির উপত্যাকা থেকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here