একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৪৩টিতে প্রার্থী মনোনয়নের খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

মনোনয়ন চেয়ে জমা পড়া ১৫১০টি আবেদনপত্র চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এটি চূড়ান্ত করেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক শেষে এ তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে।

দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। তারা আরও জানান, এবারের মনোনয়নে কেউ কোনো তদবির কিংবা সুপারিশ করতে পারেনি। এমনকি প্রভাবশালী নেতাদের বিশেষ সুপারিশও আমলে নেয়া হয়নি।

বিভিন্ন জরিপ সংস্থার রিপোর্ট ও প্রার্থীর পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত দেখে যোগ্যদেরই চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান মঙ্গলবার বলেন, সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার একমাত্র এখতিয়ার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

তিনি অনেক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যোগ্যতম প্রার্থী বাছাই করছেন। সময়মতো এ তালিকা প্রকাশ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, ত্যাগী ও দলের জন্য অবদান আছে- এমন প্রার্থীদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

পাশাপাশি যারা এবারের নির্বাচনী প্রচারে কাজ করেছেন তারাও মনোনয়নের জন্য বিবেচিত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কেউ কেউ এ মনোনয়ন পেতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ৪ মার্চ ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। রোববার কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন।

তিনি বলেছেন, এ নির্বাচনে অংশ নিতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১২ ফেব্রুয়ারি ও প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন ১৫১০ জন। গত ১৫ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এই ফরম বিক্রি করে দলটি। এতে আওয়ামী লীগের আয় হয় ৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী; অভিনেত্রী, হিজড়া, বিভিন্ন পেশাজীবী নারীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া সমাজে বিশেষ অবদান রাখা নারীনেত্রী এবং প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতাদের সহধর্মিণী ও সন্তানরা সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীও কিনেছেন এ ফরম।

গণভবন সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের আহ্বানে ১৫১০টি আবেদনের মধ্য থেকে গত মাসের শেষ সপ্তাহে প্রার্থী যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব আবেদনপত্র চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ৪৩টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য ৪৩ জনের নামের একটি খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট এবং দলের নিজস্ব জরিপকে গুরুত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি দশম জাতীয় সংসদে বঞ্চিত ২৫ জেলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

এদিকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেই তদবির-লবিংয়ে নেমে পড়েন প্রার্থীরা। ধরনা দেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের বাসা ও অফিসে।

আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থী নির্বাচনে এবার প্রভাবশালী নেতাদের কোনো ধরনের সুপারিশ গ্রহণ করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই গণভবনে গেলেও তা প্রকাশের সাহস করেননি। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজ থেকে পরামর্শ চাইলেও তারা বলেছেন- ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) আপনি যেটি ভালো মনে করেন, সেটিই নির্ভুল।’

সূত্রটি আরও জানায়, রোববার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য গণভবনে গিয়ে তিনজনের নাম সুপারিশ করেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী আমলে নেননি। এ ঘটনা জানাজানি হলে অন্যরা এ নিয়ে দলীয় সভাপতির কাছে আর মুখ খোলার সাহস করছেন না। তবে এসব সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত না গড়ালেও অনেক প্রার্থী গণভবনে গিয়ে সরাসরি তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন।

আরও জানা গেছে, দশম সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন না পাওয়া ২৫ জেলার জন্য ২৫টি আসন রাখা হয়েছে। ঢাকায় এবার দুটি আসন কমিয়ে ৬টি করার চিন্তা করা হচ্ছে। সে হিসাবে বাকি ১২টি আসনে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত মুখ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও আলোচিত নারী ও পুরনোদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, শুক্রবার এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রথা অনুযায়ী সেদিনই তালিকা ঘোষণা করার কথা। ব্যত্যয় ঘটলে শনিবার প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে গণমাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হতে পারে।

জানা যায়, সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনে ভোটের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে রাখা হলেও ফল জানা যাবে তার আগেই। ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের বিপরীতে দল ও জোটগতভাবে সমানসংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে।

এতে প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার দিনই তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হতে পারে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়। সংসদের সাধারণ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের ভোটার হন। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকাও প্রকাশ করেছে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে মহিলা আসন বণ্টন করা হয়। প্রতি ৬টি আসনের বিপরীতে যে কোনো দল বা জোট ১টি সংরক্ষিত আসন পেয়ে থাকে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার ৫০টি সংরক্ষিত আসন বণ্টন করা হবে।

এদিকে ইসি সচিব জানিয়েছেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, বিএনপি ১টি, অন্যান্য দল ১টি (ওয়ার্কার্স পার্টি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১টি সংরক্ষিত আসন পাবেন।

তিনি বলেন, বিএনপির এমপিরা শপথ না নেয়ায় তাদের প্রাপ্য একটি আসনে নির্বাচন স্থগিত থাকবে। বাকি ৪৯টি আসনে ৪ মার্চ ভোট হবে। আর বিএনপির এমপিরা শপথ নিলে ওই আসনে প্রার্থী দিতে পারবে।

দশম জাতীয় সংসদে ৫০ জন সংরক্ষিত মহিলা এমপির মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪২, জাতীয় পার্টির ৬ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ও ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন করে প্রতিনিধি ছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here