রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের ১৫ ঘণ্টা পর আগুন নিভিয়ে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ফায়ারব্রিগেড ৮১টি লাশ উদ্ধার করেছে। এখনো পর্যন্ত ৩৬ জনের নিখোঁজ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। শতাধিক আহতের মধ্যে ৪১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ৪৫ এ এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আগুন নিভেছে। তবে ভেতরে পুরোপুরি নেভানোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন ক্যামিক্যাল, বডি-স্প্রে, প্লাস্টিক দ্রব্য এসবের কারণে আগুন ছড়িয়েছে। আর চিকন রাস্তার কারণে আগুন নেভানোর কাজে সমস্যা হয়েছে।’ লাশের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এর আগে আগুন পুরোপুরি নেভাতে বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছেটানোর কথা জানিয়েছেন এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন। বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সোয়া ৪টার দিকে তিনি এই তথ্য জানান।

ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইলিয়াস হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর পুরান ঢাকার চুড়ি হাট্টা শাহী মসজিদের সামনে ৬৩ নং নন্দ কুমার দত্ত রোড চুড়ি হাট্রা, চকবাজার-১২২১ এর হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনের সামনে দাড়ানো একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আশেপাশের ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পাশে ছিলো একাধিক সিএনজি অটোরিক্সা। সে সব সিএনজির সিলিন্ডারও একে একে বিস্ফোরিত হয়। এ সময় ঐ পিকআপে ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলার একটি বডি স্প্রের গুদাম থেকে স্প্রের কার্টুন ভরা হচ্ছিলো। চুড়ি হাট্টা শাহী মসজিদের সামনের এই চিকন তিন রাস্তার মোড়ে ছিলো ভয়াবহ যানজট। ফলে মুহূর্তে যানজটে আটকা শতাধিক যাত্রীবাহী রিক্সা, প্রাইভেট কার, মোটর সাইকেল এবং পায়ে হাটা পথচাররির শরীরে আগুন ধরে যায়। মুহুর্তে আগুন ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলার স্প্রে গুদামে এবং পশের ৬৪ নং ভবনের রাজ মহল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হোটেলের সিলিন্ডার এবং গুদামের স্প্রে ক্যানের বিস্ফোরণ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সৃষ্টি করে। মুহুর্তে রাস্তার উত্তর পাশের্^র ১৫ নং ভবনের রহমানিয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে আগুন লেগে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। পুরো এলাকায় তখন বিভিষিকার সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে ওয়াহেদ মঞ্জিল সংলগ্ন জামাল কমিউনিটি সেন্টার ও রাস্তার উল্টো পাশে থাকা দুটি ভবন সহ রাস্তার দু’পাশের পাশাপাশি ৫টি ভবন তখন দাউ দাউ করে জ্বলছিলো।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সকালে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান, ৩৭টি ইউনিটের দু’শতাধিক কর্মকর্তা ও ফায়ার কর্মী সাড়ে চারঘণ্টার মতো কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। এই ঘটনায় দগ্ধসহ আহত কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৭০টি। তিনি জানান, চিকন তিন রাস্তার মোড় থেকে একত্রে ৩৬টি দগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কয়লা হয়ে যাওয়া আড়াই-তিন বছরের এক শিশুর বিভৎস লাশ ছিলো।

সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, যে ভবনটিতে প্রথমে সাত তলার ওয়াহেদ ম্যানশনে আগুন লাগে। ভবনটির দ্বিতীয়তলায় কেমিক্যাল গোডাউন এবং প্লাস্টিক তৈরির উপকরণের দোকান রয়েছে। ভবনটির পাশের ওয়াহিদ মঞ্জিলে আমানিয়া হোটেল, রাজ হোটেল এবং উল্টা পাশের চারটি বাসায় আগুন ছড়িয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশিস ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, যে ভবনে প্রথম আগুন লেগেছে, সেটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনও সময় ধসে পড়তে পারে।

এদিকে, রাত ২টার পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ও সংসদ সদস্য হাজী সেলিম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here