আজ ৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। এবারের দিবসে প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মানুষ ও পৃথিবীর জন্য জলজ প্রাণী’। সারাবিশ্বে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জন্য এ বিষয় নির্ধারিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পাচার রোধে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। প্রাণী পাচারের অন্যতম রুট বিবেচিত হয় বাংলাদেশ। বন্যপ্রাণী ব্যবসার ওপর নজরদারির আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘ট্রাফিক’-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫০০ কোটি টাকার বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ পাচার হয়।
সূত্রমতে, বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে বিদেশ থেকে বন্যপ্রাণী আকাশপথে এসে সড়কপথে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশে চলে যাচ্ছে। ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট শুল্ক বিভাগের সহযোগিতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাচারের সময় ৮ হাজার ২৪৭ বন্যপ্রাণী জব্দ করে। এর মধ্যে কচ্ছপ ৭ হাজার ২০, পাখি ১ হাজার ৬৭ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী ১৬০টি।
গত বছরে দুই পাচারের ঘটনায় সিংহ ও চিতাবাঘের শাবক এবং জেব্রা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬ আগস্ট বিমানবন্দরের কার্গো এলাকা থেকে বানর, লাভবার্ডসহ ৭৬৯ বন্যপ্রাণী জব্দ করা হয়েছে। প্রাণী ধরা হলেও পাচারকারীরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে। বিভিন্ন ধরনের বন্দর থেকে প্রাণী ও উদ্ভিদ পাচার রোধে ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিমানবন্দরসহ অন্যান্য সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্টে দুইশতাধিক প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ছবিসংবিলত নমুনা দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা দি এনভায়রনমেন্টাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (ইআইএ) প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ থেকে ধনেশ পাখি প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া বিলুপ্তপ্রায় মদনটাকের দাম পড়ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে বাংলাদেশ থেকে বাঘের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবচেয়ে বেশি পাচার হয় বলে জানায় তারা। তাদের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতিটি বাঘের চামড়া পাচার হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা দরে। এ ছাড়া বাঘের হাড়ের কেজি ৩৫ হাজার টাকা ও হাড়ের গুড়া বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা কেজি দরে পাচার হচ্ছে। এ ছাড়া বাঘের চোখ জোড়া ২০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এর পাশাপাশি মেছো বাঘ ও বনবিড়ালের চামড়া ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়।
আর বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি ডলার বা ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার অপরাধ হয় বন্যপ্রাণীকে ঘিরে। আফ্রিকার ৪১ দেশ থেকে ১৩ লাখ প্রাণী ও উদ্ভিদ এবং ১৫ লাখ চামড়া ও দুই হাজার কেজি মাংস ও অন্যান্য অংশ এশিয়া ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় ১৭ দেশে ২০০৬ সাল থেকে পাচার হয়েছে। চলতি মাসে ট্রাফিকের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০০৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বণ্যপ্রাণী পাচারের বিষয় পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
বন্যপ্রাণী পাচার ২০০৬ সাল থেকে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ২০০৬ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে মোট ৬৬ শতাংশ বন্য প্রাণী পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই ধরনের পণ্য পাচারের ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক ও সামাজিক পদক্ষেপ দৃশ্যমান না থাকার কারনে পাচার আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র নাইল কুমিরের চামড়া পাচার হয়েছে ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৪৮৭ থেকে ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৪টি। এ ছাড়া ১১ হাজার ২৮৫ হাতির চামড়াও পাচার হয়েছে। মাদাগাস্কার থেকে উভচর প্রাণী বেশি পাচার হয়। আর জাপান এর মূল ক্রেতা। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরে পাখি ও হংকংয়ে সরীসৃপ প্রাণী বেশি পাচার হয়। ৫০ টনের বেশি জলহস্তীর দাঁত উগান্ডা ও তানজানিয়া থেকে পাচার হয়। নাইল কুমির, ইউরোপিয়ান ইল ও সিল মাছের মাংস সবচেয়ে বেশি পাচার হয়, যা কোরিয়া ও হংকংয়ে বেশি হয়। এ ছাড়া প্রায় ৪৪ হাজার ৫৭৫ ক্যাকটাস ও অন্যান্য প্রজাতির উদ্ভিদ পাচার হয়।