ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরলেন টাইগার

0
193

বাংলা খবর ডেস্ক:
নিউজিল্যান্ড থেকে ভয়ঙ্কর স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। গতকাল রাতে সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহীমরা।

ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর সিরিজ বাতিল করে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। বিসিবিও তাদের ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। সরকারি পর্যায়েও যোগাযোগ করেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। টিম ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলট জানান, টিকিট পেলেই তারা দেশে ফিরবেন। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ফ্লাইটে ওঠার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত একইসঙ্গে ফেরেন সবাই। বিশেষ ব্যবস্থায় টিকিট পান তামিম-মুশফিকরা।

দেশের পথে রওনা দেয়া বাংলাদেশ দলকে ক্রাইস্টচার্চের বিমানবন্দর পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা দেয় নিউজিল্যান্ড পুলিশ। স্থানীয় সময় দুুপুর ১২টায় (বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা) সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিমানে চাপেন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা।

এরপর সিঙ্গাপুরে ট্রানজিট করে অবশেষে বাংলাদেশে ফেরেন তারা।

চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ক্রাইস্টচার্চ থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা দেয়ার আগে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, ক্রাইটস্টচার্চের ঘটনা এখনো গেথে রয়েছে তাদের মনে। চোখের সামনে রক্ত, লাশ, মানুষের আহাজারি। এ দৃশ্য কি সহজে ভুলে যেতে পারবেন তারা? তামিম তো বললেনই, ‘ট্রমা থেকে বের হতে সময় লাগবে।’

বাংলাদেশ দল সত্যিই ভাগ্যবান। শুক্রবার সংবাদ-সম্মেলনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৯ মিনিট বেশি সময় দেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এতে ক্রাইস্টচার্চের আল-নুর মসজিদে একটু দেরিতে পৌঁছান সবাই। জুমার ওয়াক্তে হত্যাযজ্ঞ চললো সেই মসজিদেই। টিম ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলটের ভাষ্য মতে, মৃত্যুর মাঝে কয়েক মিনিটের ব্যবধান ছিল কেবল।

নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কোনো নিরাপত্তারক্ষী ছিল না। ভাগ্যের জোরে এ যাত্রায় বেঁচে ফিরেছে তারা। অন্য দেশ বাংলাদেশ সফরে এলে তাদের ভিআইপি নিরাপত্তা দেয় বাংলাদেশ সরকার। তাহলে এদেশের ক্রিকেটাররা কেন নিউজিল্যান্ডে অরক্ষিত? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের ক্ষোভটা অতি স্বাভাবিক ছিল। তিনি এটাও বলেন, ‘এখন থেকে আগে নিরাপত্তা, পরে সফর।’ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিদেশ সফরে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুত্বারোপ করেছেন।

ক্রাইস্টচার্চ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল অভিবাসী। বাংলাদেশি ক্রিকেট দল ছিল কি-না স্পষ্ট করে বলা মুশকিল। কিন্তু অতীত ইতিহাস বলে যুগে যুগেই সন্ত্রাসের কালো থাবা পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনে। ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকের ঘটনা। ৫ই সেপ্টেম্বর ১১ জন ইসরায়েলি অ্যাথলেট ও তাদের কোচদের ১৬ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখার পর হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় মিউনিখ অলিম্পিকের সব আনন্দ-উচ্ছ্বাস মাটি হয়ে যায়।

যে নিউজিল্যান্ডে হত্যাকাণ্ড ঘটলো, সে দেশের ক্রিকেট দলও কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার সাক্ষী। ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিল কিউইরা। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলেই দেশে ফিরে গিয়েছিল তারা। কারণ, প্রথম ম্যাচের পর টিম হোটেলের খুব কাছেই পুঁতে থাকা বোমা বিস্ফোরণে মারা যান ১১৩ জন বেসামরিক নাগরিক। একই কারণে আরো একবার শ্রীলঙ্কা সফর বাতিল করে নিউজিল্যান্ড। সর্বশেষ ২০০২ সালে পাকিস্তানে এসে ভীতিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় কিউই ক্রিকেট দল। টিম হোটেলের খুব কাজেই বোমা বিস্ফোরণে মারা যান ১৩ জন। হামলায় নিউজিল্যান্ড দলের কারো কোনো ক্ষতি না হলেও সিরিজ বাতিল করে দেশে ফিরে যান ক্রিকেটাররা।

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার পাকিস্তান সফরের কথা প্রায় সবারই জানা। লাহোরে শ্রীলঙ্কার টিম বাসেই এবার হামলা করে বসে জঙ্গিরা। ছয়জন লঙ্কান ক্রিকেটার আহত হন। এরপর থেকে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ। ২০১০ সালে আফ্রিকার কাপ অব নেশন্সে টোগো জাতীয় দলের টিম বাসে হামলা করে বিচ্ছিন্নবাদীরা। হামলায় জাতীয় দলের কোচ এবং মিডিয়া অফিসার নিহত হন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here