বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছেন লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় নেতা এই প্রস্তাবকে উদ্ভট এবং বাস্তবসম্মত নয় বলে নাকচ করে দিয়েছেন; এমনই খবর প্রকাশ হয়েয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ইনসাইডারে। তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ সংবাদেও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, এসব খবর সত্যের অপলাপ মাত্র।

বাংলা ইনসাইডার বলেছে, তারেকের প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির মধ্যে এখন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাভোগ করছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বিএনপির সবপক্ষই একমত যে আন্দোলন সংগ্রামের চেয়ে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসাই হওয়া উচিৎ বিএনপির প্রথম লক্ষ্য এবং কর্মসূচি। এই কর্মসূচি কী ধরনের হওয়া উচিৎ তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। বিএনপির মধ্যে এই নিয়ে ৩টি মতামত রয়েছে। প্রথমত, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি অংশ মনে করছে, আন্দোলন এবং আইনী প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অবাস্তব এবং অসম্ভব ব্যাপার।

এজন্য সরকারের সঙ্গে একটা আপোস রফার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আনতে হবে। সেখানে সরকারের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসার জন্য সরকার আর বিএনপির শর্তগুলো নিয়ে পর্দার আড়ালে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানে আসা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, একটি অংশ মনে করছে যে, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনী প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা উচিৎ এবং প্রক্রিয়াটি জোরদার করা উচিৎ। ব্যারিস্টার নওশাদ জামিরসহ তরুণ আইনজীবীরা এখনো বিশ্বাস করেন যে আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব। এজন্য তারা আইনী প্রক্রিয়াকে জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। যদিও বিএনপির সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ অন্যান্যরা মনে করছেন যে আইনী প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি এখন সুদূর পরাহত।

তৃতীয়ত, যারা অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং তৃণমূল, তারা মনে করছেন যে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একটাই পথ আছে, সেটা হলো রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা। অথবা এমন কোন কর্মসূচি গড়ে তোলা যাতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ হয় এবং সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এই কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে নানা রকম আলাপ আলোচনা চলছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে গত পরশু তারেক জিয়া এক ফর্মুলা দিয়েছেন। সে ফর্মুলায় তারেক জিয়া বলেছেন, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য ভিন্ন রকমের কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। ভিন্ন রকমের কর্মসূচি হিসেবে তিনি বলেছেন স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি। তিনি সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে স্বেচ্ছায় কারাবরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ফর্মুলা দলের তৃণমূলের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও দলের সিনিয়র নেতারা মনে করছেন এই কর্মসূচি হলো আত্মঘাতী ও বাস্তবতাবিবর্জিত।

এটার ফলে বিএনপির যেটুকু শক্তি অবশিষ্ট আছে সেটুকুও শেষ হয়ে যাবে। বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি নেতার উপর শতাধিক মামলা রয়েছে। এই বাস্তবতায় স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচিতে তারা যদি প্রকাশ্যে আসে এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হলে সরকারের উপর কোন চাপ সৃষ্টি হবে না। এ পর্যন্ত বিএনপির যত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে তাতে সরকারের উপর ন্যূনতম চাপ সৃষ্টি হয়নি, সরকার কোন প্রতিক্রিয়াও দেখায়নি। তাই, বিএনপি নেতাকর্মীরা যদি স্বেচ্ছায় কারাবরণ করে তাতে বিএনপি সরকারের উপর কোন চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এর কোন প্রভাব পড়বে না। কাজেই বাস্তবতার নিরিখে এ ধরনের কর্মসূচিতে না যাওয়ার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা তারেক জিয়াকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারেক জিয়া এখন পর্যন্ত তার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন।

তার এই কর্মসূচি যেন গৃহীত হয় সেজন্য তিনি তৃণমূল দিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন। বিএনপির সিনিয়র নেতারা মধ্যবর্তী জায়গায় গিয়ে গণঅনশন, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিগুলোকে জোরদার করা এবং গণ-মানুষের নিত্যদিনের দাবি দাওয়া যেমন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিরাপদ সড়ক, ইত্যাদি বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কিন্তু চূড়ান্তভাবে বিএনপি কোন ধরনের আন্দোলনে যাবে, কিংবা আদৈ তারা আন্দোলনে যাবে কি না বা সেরকম শক্তি তাদের আছে কি না সেটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। বিএনপিতে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে তারেক জিয়ার কথাই ছিলো শেষ কথা। তার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া কঠিন ছিলো এবং তার সিদ্ধান্তের কেউ প্রতিবাদ করতে পারতো না। কিন্তু এখন সময় পাল্টে গেছে। এখন তারেক জিয়ার প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে, সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে এবং সিদ্ধান্তগুলো প্রত্যাখাত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপি আন্দোলন করতে পারুক না পারুক বিএনপিতে যে তারেক জিয়ার রাজত্বে অবসান ঘটতে যাচ্ছে সেটি স্পষ্ট।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী এই ধরনের সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, এটা সরকারের সৃষ্ট মিডিয়া দ্বারা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্যান্তি সৃষ্টি করার জন্যই এই ধরণের মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করা হছ্ছে। এটা নিছক গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ধরণের খবর শুধু হাস্যকরই নয়,এটা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদৈর মধ্যে বিভেদ তৈরি করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তুি এসব করে লাভ হবে না বরং বিএনপির জনপ্রিয়তা মিডনাইট সরকারকে ছাড়িয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here