মন্টুর পদে রেজা কিবরিয়াকে বসানোর কারণ

0
106

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামে নেতৃত্বের পরিবর্তন এসেছে। সভাপতি পদে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও বর্তমান সভাপতি ড. কামাল হোসেন থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে আনা হয়েছে পরিবর্তন।

দলের দ্বিতীয় শীর্ষ এ পদটিতে দীর্ঘ ৯ বছর দায়িত্ব পালন করা মাঠ কাঁপানো সাবেক ছাত্রনেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াকে।

গণফোরামের দুঃসময়ে ড. কামাল হোসেনের বিশ্বস্ত সহকর্মী মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাদপড়া নিয়ে দলের ভেতর-বাইরে চলছে তোলপাড়। কানাঘুষা হচ্ছে ড. কামালের সঙ্গে মতবিরোধ থেকেই মন্টুকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। আর এই মতবিরোধের সূত্রপাত একাদশ নির্বাচনে গণফোরামের দুই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির শপথ কেন্দ্র করে।

দীর্ঘ আট বছর পর গত ২৬ এপ্রিল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। কাউন্সিলের পর শনিবার বিকাল ৩টায় গণফোরামের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও পরিবর্তন আনা হয় নির্বাহী সভাপতি পদে। এই পদে আগে একক দায়িত্বে ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। এবার দুজনকে করা হয়েছে নির্বাহী সভাপতি। সুব্রত চৌধুরীর পাশাপাশি এই পদে আনা হয়েছে একাদশ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেয়া সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে।

গণফোরামে নেতৃত্বের বদল আসার বিষয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ চলছে গত কয়েক মাস ধরে। দলের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ নেতাদের দূরত্বও তৈরি হয়েছে। চলছে মান-অভিমানও। এসব কারণেই মূলত নেতৃত্বে বদল আনা হয়েছে।

জানা গেছে, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খানের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথগ্রহণের ইস্যুতে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মোস্তফা মোহসীন মন্টুর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। একই ইস্যুতে গণফোরামের আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা দলীয় প্রধানের ওপর ক্ষুব্ধ। গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে মোকাব্বির খানের উপস্থিতি নিয়ে অনেকে প্রকাশ্যে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। তাদের একজন রফিকুল ইসলাম পথিক। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- তিনি আর গণফোরামের সঙ্গে থাকতে চাচ্ছেন না।

সূত্র জানায়, মোস্তফা মহসীন মন্টু ড. কামাল হোসেনের একক কিছু সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছিলেন না। বিশেষ করে একাদশ নির্বাচনের পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন কারও সঙ্গে পরামর্শ না করেই ঘোষণা দিয়ে দেন যে, গণফোরাম সংসদে যাবে। পরের দিন বিবৃতি দিয়ে মন্টু এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া মোকাব্বির খানের শপথ নিয়ে গণফোরামে যে নাটকীয়তা হয় সেটিও ভালো চোখে নেননি মন্টু। মোকাব্বির খান দলীয় প্যাডে স্পিকারকে শপথবাক্য করানোর চিঠি দেন। অথচ দলের সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি জানতেনই না। এ নিয়ে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। দলীয় ফোরামে এসব নিয়ে আলোচনার সময় ড. কামাল হোসেন মন্টুকে একবার ধমকের সুরে কথা বলেছেন বলেও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সব মিলিয়ে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মন্টুর মান-অভিমান চলছিল। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক মন্টুর অনুপস্থিতির মাধ্যমে। ওই কাউন্সিলে ড. কামালের তিন চেয়ার পরে বসেন মোকাব্বির খান।

এ বিষয়ে জানতে মোস্তফা মোহসীন মন্টু কমিটি ঘোষণার দিন একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ঢাকার একটি গণমাধ্যম তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে অনিচ্ছুক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। তিনি বিষয়টি দলের হাইকমান্ডকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।

গণফোরামের কমিটি ঘোষণার দিন দলের সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা উপস্থিত থাকলেও মোস্তফা মোহসীন মন্টু উপস্থিত ছিলেন না। এদিন সাধারণ সম্পাদক পদে ড. রেজা কিবরিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়। তরুণ এ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের বিশ্বস্ত বলে জানা গেছে।

এসব বিষয়ে গণফোরামের নতুন কমিটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে বাদ দেয়ার সঙ্গে শপথের কোনো সম্পর্ক নেই।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে গণফোরাম গঠনের পর থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন- আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রকৌশলী আবুল কাশেম, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী (ভারপ্রাপ্ত); সর্বশেষ ২০১১ সাল থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here