নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের আমন্ত্রণে কূটনীতিকরা অভিভূত

0
137

বাংলাদেশের শিল্পী তৈয়বা বেগম লিপির শিল্পকর্মের চলমান একক প্রদর্শনীতে ১৪ মে বিভিন্ন দেশের কন্সাল জেনারেলসহ জাতিসংঘের পদস্থ কর্মকর্তাগণের এক সমাবেশ ঘটে। জনবান্ধব কূটনীতির অংশ হিসেবে এ আয়োজন করেছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা।

নিউইয়র্ক সিটির মিড টাউনে চেলসির ‘সুন্দরম টেগোর গ্যালারি’তে ২ মে শুরু এই প্রদর্শনী চলবে ১ জুন পর্যন্ত। এরই মাঝে শিল্পীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে এই সমাবেশের মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাঙালিদের বিশেষ শৈল্পিক চেতনাকে উপস্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছেন সাদিয়া। শিল্পীর নিজস্ব ভঙ্গিমার ভাস্কর্য, আলোকচিত্র এবং ভিডিও ইন্সটলেশন। নারীর অস্তিত্ব এবং তার চেতনার স্বরুপকে সন্ধান করতে চেয়েছেন তৈয়বা বেগম লিপি। আর সে প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ইকোলজিক্যাল এবং বায়োফিজিক্যাল নিরিখে। লিপির স্বপ্নের এ নারীরা তারই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন ব্লেডে তৈরি এসব শিল্পকর্মে। তিনি তার ভাস্কর্যকর্মের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন শাণিত প্রতীক। সে প্রতীক হচ্ছে স্টিলের রেজর ব্লেড। একটির সাথে আরেকটির সুনিপুণ জোড়া লাগিয়ে তৈরি করেছেন ভাস্কর্য। তার সাবজেক্ট হচ্ছে, মেয়েদের জুতা, বুট, হাইহিল, স্যান্ডেল, ব্যাগ, ইস্ত্রি, ইস্ত্রি করার টেবিল, সেলাই মেশিন, ট্রেডমিল, মেয়েদের অন্তর্বাস, দোলনা ইত্যাদি। সবই মেটালিক, ব্লেড দিয়ে তৈরি।

 প্রদর্শনী কেন্দ্রে  বক্তব্য রাখছেন কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা। পাশে শিল্পি লিপি এবং সুন্দরম টেগোর গ্যালারি কর্মকর্তা।

কেন রেজর ব্লেডকে ভাস্কর্য তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে নিয়েছেন সে প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, নিজের জন্ম থেকেই ব্লেডের ব্যবহার। তিনি তার মা-বাবার ১২ সন্তানের এগারতম। সকলের জন্মই বাড়িতে। লিপি দেখেছেন জন্মের সময় ধাত্রিরা কেবল একটি যন্ত্র ব্যবহার করেন। সেটি রেজর ব্লেড, নাড়ি কাটার জন্যে। সেই স্মৃতিতে তাড়িত হয়েই রেজর ব্লেডকে তার মাধ্যমে পরিণত করেছেন এবং ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সাড়া জাগিয়েছে। কারণ, তিনি নারীবাদী শিল্পে যুক্ত করেছেন অভিনব পন্থা।

সমাবেশে নিজের অনুভূতি ব্যক্তকালে লিপি উল্লেখ করেন, প্রদর্শনীস্থলে এসে অনেকেরই মনে হতে পারে যে, এটি একটি শো রুম, বিক্রয় কেন্দ্র। সেভাবেই সাজানো সবকিছু। আর এ প্রদর্শনীর নাম দেয়া হয়েছে, দিস ইজ হুয়াট আই লুক(ড) লাইক।

প্রদর্শনীতে ভাস্কর্য়ের পাশাপাশি রয়েছে দুই গ্রুপে ১০টি করে আলোকচিত্র। সবগুলোই শিল্পী লিপির। এক গ্রুপের ছবি উঠিয়েছেন ফরাসি শিল্পী আউয়েনা কোজানেট। কৈশোরের উদ্দাম সময় থেকে বিয়ে এবং পরিণতি মৃত্যুতে। মোটা কাঠের ফ্রেমে বাধানো ছবিগুলো। অপর গ্রুপের আলোকচিত্রগুলো লাইট বক্সে, ট্র্যান্সপেরেন্সি। এ ছবিতেও শৈশব এবং বর্তমানের প্রতিচ্ছবি। অপরদিকে, ভিডিও ইন্সটলেশনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এখানেও লিপি নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। ভিডিও শুরুতেই একজন নারী অর্থাৎ লিপি, তার চোখ দুটো ছাড়া পুরো মুখ স্টিলের ছোট ছোট চাকা দিয়ে ঢাকা। মনে হবে রেজর ব্লেড। একই ব্লেডে তৈরি হিজাব দিয়ে ঢাকা মাথা থেকে বুক পর্যন্ত। চোখে না দেখলে শিল্পীর এমন প্রতিবাদী ভাষা বিশ্বাস করা যায় না।

নারী ক্ষমতায়নের স্লোগানে গোটাবিশ্ব প্রকম্পিত। বাংলাদেশের মত বহুদেশেই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দতে নারী থাকা সত্ত্বেও নারীরা নিগৃহীত হচ্ছেন, অবহেলিত থাকছেন, নিষ্ঠুর ও বর্বরতার শিকার হচ্ছেন। এহেন অবস্থার বিরুদ্ধে রেজর ব্লেডে তৈরি এসব ভাস্কর্য সভ্য সমাজকে ন্যূনতম নাড়া দিতে সক্ষম হলেও লিপির এ প্রয়াস সার্থক হবে বলে সুধীজন মনে করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টি থেকে ড্রইং ও পেইন্টিংয়ে ১৯৯৩ সালে মাস্টার্স করেছেন তৈয়বা লিপি। এরপর ২০০০ সালে তিনি ডাবলিনে আইরিশ মিউজিয়াম অব  মডার্ন আর্টে আর্টিস্ট ইন রেসিডেন্স হন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়ান আর্ট বিয়েনেলে সেরা শিল্পীর পুরস্কার পান। ২০১১ সালে ভেনিস বিয়েনেলে বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নের কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন।

কন্সাল জেনারেল সাদিয়ার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছিলেন ভারতের কন্সাল জেনারেল সন্দ্বীপ চক্রবর্তী, জর্জিয়ার কন্সাল জেনারেল ডায়ানা জিগনেটি, সৌদি আরবের কন্সাল জেনারেল খালেদ আলশরিফ, থাইল্যান্ডের কন্সাল জেনারেল নিপন পেচপর্ণপ্রপাস, তুরস্কের ভাইস কন্সাল ডেমলা সেমলিক, কুয়েতের কন্সাল জেনারেল হামাদ এ আল হাজিম, সিঙ্গাপুরের কন্সাল জসিম উই, মেক্সিকোর রাজনীতি বিষয়ক কন্সাল জর্জ টুডন, এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক নিকিতা দেশাই, নেপালের কন্সাল জেনারেল মি. পুষ্প। এছাড়াও ছিলেন নাইজেরিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার শামিম আহসান, বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণবিজয়ী আর্টিস্ট খুরশিদ আলম সেলিম, আর্টিস্ট-অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত, আর্টিস্ট মাহবুবুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক কানু দত্ত। ছিলেন জাতিসংঘের পদস্থ কর্মকর্তারাও। তারা সকলেই লিপির শিল্পকর্মের প্রশংসা করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here