নির্বাচনী ব্যবস্থায় অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে: মেনন

0
104

বাংলা খবর ডেস্ক:
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, নির্বাচন ও সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এটা কেবল নির্বাচনের জন্য নয়, গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ দেশ ও নির্বাচনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে রাজনৈতিক দল কেবল নির্বাচন নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলবে। এটা যেমন সবার জন্য, তেমনি আওয়ামী লীগের জন্যও প্রযোজ্য।

বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি ও গণফোরামের বন্ধুরা আজ জল ঘোলা করে হলেও সংসদে এসেছে। কিন্তু তাতে আত্মতৃপ্তির অবকাশ নেই। বরং নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনার কাজটিই করতে হবে। কারণ রোগ এখন উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। পাঁচ দফার উপজেলা নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি, এমনকি আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা করুণ। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং তাদের যোগসাজশ রয়েছে।

জোট ছাড়াই এবারের সরকার গঠন প্রসঙ্গে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিও নেতা মেনন বলেন, “১৪ দলের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার কারণে আজও আমরা জোটে ঐক্যবদ্ধ আছি। প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের শরিকদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। কিন্তু গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকলে কেউ সংগঠন, আন্দোলন ও ভোট নিয়ে এগোতে পারে না। জোটবদ্ধ নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগ এ সরকারকে ‘আওয়ামী লীগ সরকার’ বলছে। এজন্য দুঃখবোধ নেই। কোনো প্রত্যাশাও নেই, যে ইঙ্গিত মাঝে মাঝেই করা হয়। একটিই প্রত্যাশা, যাতে স্বাধীনতা ঘোষণার সাম্য, মানবিক মর্যাদাবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত দেখতে পাই। দেখতে পাই একটি সত্যিকার অর্থেই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ।”

শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন করতে পারলে শিক্ষাখাত অনেক দূর এগিয়ে যেত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ধর্মবাদী দল শিক্ষানীতির বিরোধিতা করেছে মাত্র। জানি না এখানেও আপোষ হয়েছে কিনা। এক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষায় যেমন পরিবর্তন আনতে হবে মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে স্বীকৃতি দিলেও তারা নিচের দিকে কোনো পরিবর্তন আনতে রাজি নয়। এমনকি জাতীয় সঙ্গীতকে ‘রবীন্দ্র সঙ্গীত’ আখ্যা দিয়ে সে নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘ঠ্যাং ভেঙে দেবে’ বলেছে। দাবি করেছে বেফাক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের হুজুরের কথা ছাড়া সরকারের কোনো নির্দেশ তারা মানবে না।”

এর আগে হেফাজত সম্পর্কে মন্তব্য করায় তাকে ‘মুরতাদ’ ঘোষণাসহ ফাঁসি দাবি করার প্রসঙ্গ টেনে মেনন বলেন, ‘গত অধিবেশনে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আমি যে মন্তব্য করেছিলাম তা নিয়ে এক সংসদ সদস্য আমাকে ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার কথা বলেছিলেন। আর বলেছিলেন ওইসব শিক্ষায়তনের শিক্ষার্থীদের রক্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্তের চেয়ে পরিশুদ্ধ। আমি নুসরাত হত্যা, ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন ও বালকদের ওপর বলাৎকারের যেসব খবর প্রতিদিন প্রকাশ হয়, সে কথা বলব না। কারণ এটা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নয়, এখন এক চরম সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। কিন্তু এসব ব্যক্তিরা যারা আমার কথার জন্য ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ করেছে, আমাকে মুরতাদ ঘোষণা করেছে— তারা প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কী ধরনের উক্তি করেন ইউটিউট খুলে তা শোনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি আইনে সাংবাদিকসহ যে কাউকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু এদের করা হয় না। জামায়াত রাজনৈতিকভাবে পরাজিত, বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত। কিন্তু এদের মাধ্যমেই সমাজ জুড়ে সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বিস্তার ও একটি উত্তেজনাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করার বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অশান্তি সৃষ্টি হবে। বঙ্গবন্ধু এ কারণেই ধর্মকে রাজনীতি থেকে বিযুক্ত করে সংবিধানের বিধান করেছিলেন। আমরা সে জায়গায় থাকতে পারিনি।’

বাজেটের বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনা করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার এক অংকের ওপর না রাখার বিষয়ে কথা দিয়ে এলেও সরকার সে কথা রাখেনি। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও, মাত্র কয়েকদিন আগেই খেলাপী ঋণ আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে ওই ঋণ খেলাপীদের বরং পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় তথা কালো টাকা দিয়ে জমি-ফ্ল্যাট কেনার বিশেষ সুবিধা দানের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এ যাবত এ ধরনের ব্যবস্থা থেকে বিশেষ সাফল্য পাওয়া যায়নি। এতে ফ্ল্যাট-জমির দাম মধ্যবিত্তের আওতার বাইরে চলে যাবে। আর অনৈতিকতাই উৎসাহিত হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here