মন্ত্রীর অসহায়ত্ব ও জনপ্রশাসনে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য

0
65

বুধবার আলাদা দুটি অনুষ্ঠানে দুজন মন্ত্রী প্রশাসনকে গতিশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী। প্রশাসন গতিশীল না হলে যে কোনো উন্নয়ন অগ্রগতি মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। এ অবস্থা কারো কাম্য হতে পারে না। অবস্থার উন্নতিকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাজে গতি আনার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমি যে কয়েকটা দিন আছি, দয়া করে আমাকে সাহায্য করেন। কী সাহায্য? গতিটা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। আর কিছুই না।’
বুধবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক কর্মশালায় যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনো জেদ করব না। আপনারা যে ধাঁচে কাজ করছেন, এটা অত্যন্ত টাইমার। বহুদিন যাবত এটা চলে আসছে। এখানে হাত দিয়ে আঙুল পুড়াতে চাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনার কাছে কাগজটা আসলে, আমার কাছে কাগজটা আসলে যেন তাড়াতাড়ি আমরা ছেড়ে দিই। না বলার অধিকার অবশ্যই আপনার আছে। কিন্তু হ্যাঁ-ও বলি না, না-ও বলি না– ধরে নিয়ে বসে থাকি, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি নোট দিয়ে দেন। কাগজটা নিয়ে বসে থাকা উচিৎ না।’

অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ে মাঝে মধ্যে সকালে গিয়ে কর্মকর্তাদের খোঁজেন কিন্তু প্রায়ই পান না বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বুধবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে অধীন ১৭টি সংস্থার সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদক চুক্তি স্বাক্ষরের পর তিনি এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি এখন যতটুকু আছে সন্তুষ্ট না হলেও অসন্তুষ্ট নই। মাঝামাঝি জায়গায় আছি। কাজের গতি আমরা বাড়াব।’

জনপ্রশাসনের দক্ষতার উপরই আসলে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নির্ভর করে। আমাদের দেশে সচিবালয় কেন্দ্রিক যে এককেন্দ্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাতে উন্নয়ন অগ্রগতির মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে তা। কাজেই এখানকার কাজের গতিশীলতা, দক্ষতা, অনিয়ম দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশই আসলে দেশের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এ জন্য প্রশাসনকে দলমতের ঊর্ধ্বে ওঠে কাজ করতে হবে। মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বও অনেক। গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনকল্যাণমুখি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রয়োজনীয় সংস্কার, জনপ্রশাসনে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কৌশল বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে সরকার। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক।

এছাড়া সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করাটাও জরুরি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন আইন প্রণয়ন, সংস্কার ও এবং তা যুগোপযোগী করা জরুরি। এছাড়া মানুষ যাতে যথা সময়ে বিচার বিচার পায় সেজন্য বিচার বিভাগের জনবলবৃদ্ধিসহ অন্যান্য সমস্যাদি সমাধান করতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। এলক্ষ্যে সরকারকে নিরন্তর সচেষ্ট থাকতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা কিংবা উন্নয়নের জন্যও সম্ভাব্য সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এভাবে মানুষের মধ্যে একটি নিরাপত্তা বোধ সৃষ্টি করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে দেশিবিদেশি বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্ভব হয় না।

এছাড়া মানুষের আয় বাড়াতে হবে। এ জন্য বেকারত্ব হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। সকল ধরনের ধর্মীয় মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদ থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। কূপমণ্ডুকতা এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। ক্ষুধা-দারিদ্র এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থায়ই আসলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারে। এ জন্য উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি বিদ্যুত ব্যবস্থার কাঙ্খিত উন্নয়ন করতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি অঙ্গীকার এবং সদিচ্ছা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here