হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজ, রসুনের দাম

0
105

গত এক মাসের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে দুবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর শুক্রবার (১২ জুলাই) আরেক দফা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। আর এক দিন আগেই বেড়েছে আদা-রসুনের দাম। গত এক মাস ধরেই এই তিনটি পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে।

কোরবানির ঈদের এখনো এক মাস বাকি। ঈদে এই তিনটি মসলার চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এবার ঈদের আগেই পেঁয়াজ, রসুন ও আদার বাজার রীতিমতো অস্থির হয়ে উঠেছে। ফলে বিপাকে পড়েছে ভোক্তারা। তাদের আশঙ্কা, কারসাজি করে একটি অসাধু চক্র এভাবে দাম বাড়াচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত মাসে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে প্রণোদনা তুলে নেওয়ার পর থেকেই সেদেশের পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। আর ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যায় পেঁয়াজের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে স্থানীয় বাজারেও পেঁয়াজের সরবরাহ কম। আর দেশের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকেই চাহিদার বেশির ভাগ পেঁয়াজ আমদানি করে থাকেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। তাই দেশের বাজারেও দাম বাড়তি।

শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, দেশি রসুন ১১০ থেকে ১৩০ টাকা এবং আমদানিকৃত রসুন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, আদা মানভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।

কিন্তু এক মাস আগে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৩০ টাকা, দেশি রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং আমদানিকৃত রসুন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, আদা মানভেদে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ১২ থেকে ২০ টাকা, রসুন ২০ টাকা ও আদা ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৬৩ শতাংশ, রসুন ৩৫ শতাংশ এবং আদার দাম ৬ শতাংশ বেড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ লাখ টন দেশে উত্পাদিত হয়। বাকি পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এনবিআরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ রয়েছে।

এদিকে দেশের অন্যতম বড়ো পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আমদানিকৃত চীনা আদা ও রসুনের দাম কমেছে। বর্তমানে এই বাজারে চীনা রসুন ১০৫ থেকে ১১০ টাকা এবং আদা ৯৮ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল যথাক্রমে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা এবং ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, খুচরা বাজারে দাম কমতে দু-এক দিন সময় লাগবে।

গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করা হয়। বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট তিন জেলা সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকদের ফোন করে নির্দেশ দেন বাণিজ্যসচিব মো. মফিজুল ইসলাম। এছাড়া বৈঠকে বাজারে তদারকি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আবির ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মোরশেদুর রহমান বলেন, স্থানীয় বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কম। কারণ, মজুত কমে এসেছে। অন্যদিকে ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ফলে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দামও বেশি পড়ছে। তিনি বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ। এছাড়া এখন বৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here