দুধ নিয়ে কারসাজি আছে কিনা খতিয়ে দেখা উচিত: প্রধানমন্ত্রী

0
90

বাংলা খবর ডেস্ক: দুধ আমদানিকারকদের কোনো কারসাজি আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের বিশেষ জরুরি সভায় লন্ডন থেকে মুঠোফোনে বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই একজন দুধ পরীক্ষা করে বলে দিলেন দুধ ব্যবহারযোগ্য নয়, এবং সঙ্গে সঙ্গে রিট করা হয়। সেখানে বলে দেয়া হয়, পাঁচ সপ্তাহ দুধ ব্যবহার করা যাবে না বা খাওয়ানো যাবে না।

তিনি বলেন, আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি, মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে চেয়েছি। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যাতে খেতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি।

‘যথাযথভাবে এগুলো যাতে পরীক্ষা করা হয় সে জন্য আমাদের বিএসটিআইকে উন্নতমানের করে দিয়েছি। প্রত্যেকটা খাদ্যপণ্যের কী কী বিষয় পরীক্ষা করা হয়, তার একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আছে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে এগুলো পরীক্ষা করা হয় এবং বাজারজাত করা হয়। সরকারের সুনির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে সেখানে আমরা করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি সাধারণ মানুষের যে বেঁচে থাকার পথগুলো সৃষ্টি করা হয়, সেগুলো কেন বাধাগ্রস্ত করা হয় এটিই আমার প্রশ্ন।

‘এখানে আমার মনে হচ্ছে যে, আমদানিকারক যারা তাদের কোনো কারসাজি আছে কিনা, সেটি আমাদের দেখা উচিত- তারা কোনোভাবে উৎসাহিত করছে কিনা। আর যারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন, তাদের এ বিষয়ে ভেবে দেখা উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ একটা গুজব ছড়িয়ে রফতানিকে বাধাগ্রস্ত করা বা দেশের উৎপাদিত পণ্যের মান সম্পর্কে কথা বলা- এটি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কাজেই যারা গুজব ছড়াবে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করবে তাদের বিরদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের এক শিক্ষকের দুধ পরীক্ষার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি ঠিক জানি না হঠাৎ একজন প্রফেসর সাহেব, তার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে একটা কথা ছড়িয়ে দিয়ে রিট করা বা সিদ্ধান্ত নেয়াটা এর প্রকৃত ফল কী হবে, সেটি হয়তো কেউ চিন্তা করেন না। দুধ বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার গরুর দুধ বিক্রি করে সেই গরুর খাবারও জোগাড় করা হয়।

‘যারা খামার করেছেন বা গরু পালন করছেন, তাদের কাছে থেকে দুধ কেনা হচ্ছে। এই মানুষগুলোর কাছে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য মানুষকে গরু কিনে দিয়েছি। এই মানুষগুলো যদি দুধ বিক্রি করতে না পারে, অর্থ জোগাড় করতে না পারে, তা হলে গরুকে কী খাবার দেবে আর নিজে কীভাবে খাবার কিনে খাবে- এই বাস্তবতাটা চিন্তা করা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে যেসব গুঁড়ো দুধ আমদানি করা হয়, আমি জানি না যিনি আমাদের দেশের দুধটা পরীক্ষা করেছেন, তিনি বিদেশ থেকে আমদানি করা গুঁড়ো দুধগুলো পরীক্ষা করেছেন কিনা?

‘আমার মনে হয় তিনি এটা কখনও করেননি। আমি অনুরোধ করব- বিদেশ থেকে যেসব দুধ আমদানি করা হচ্ছে, বাজারজাত করা হচ্ছে; তিনি যেন সেগুলো পরীক্ষা করে দেখেন। আমরা আমদানিনির্ভর থাকতে চাই না, স্বনির্ভর থাকতে চাই। আমরা দেশের চাহিদা দেশের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে মেটাতে চাই।’

সম্প্রতি ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইদানীং একটা উপদ্রব দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। এই ডেঙ্গুজ্বরটা প্রথম দিকে যখন শুরু হয়, তখন আমরা দেখেছি যে বিশেষ করে শহর এলাকা বা ঢাকা শহরে এটা বিস্তার লাভ করছিল। তবে এটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সামনে আমাদের কোরবানির ঈদ, ঈদুল আজহার সময় মানুষ সবাই বাড়িতে যাবে, যারা ডেঙ্গুজ্বরে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বা যাদের শরীরে এটা রয়ে গেছে, নিজ নিজ এলাকায় গেলে পরে ফের যদি মশা কামড় দেয়, তা হলে এই রোগটা সংক্রমিত হতে পারে।

‘এ জন্য আমি সবাইকে বিনীত অনুরোধ করব, যার যার নিজের ঘরবাড়ি, কাপড়-চোপড় যেগুলো আলনায় ঝোলানো থাকে বা বাক্স বা আলমারিতে থাকে, এগুলো ঝেড়ে রাখা, কোথাও মশা আছে কিনা দেখা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। কোথাও যেন পানি জমে না থাকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়, পানি জমে থাকে, ওই পানিতে মশার লার্ভা পাওয়া যায়, মশা জন্মগ্রহণ করে। তবে এডিস মশা বেশি ওপরে উঠতে পারে না, বিশেষ করে পায়ের দিকে কামড়ায়। এ জন্য ঘুমানের সময় মশারি টানানো।

সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কী কী করণীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিফলেট তৈরি করেছি, আমি বলে দিয়েছি সব জায়গায় দিতে। আর সরকারিভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রত্যেকের উচিত এই বিষয়গুলোতে নজর দেয়া।

‘আমাদের ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন পেশাজীবী, বিভিন্ন সংগঠন, সবাইকে বলব- অফিস-আদালতে এসির পানি, ফুলের টব, ভাঙা হাঁড়ি, আবদ্ধ জলাশয় সব জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া দরকার। আমি আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের সবার প্রতি আহ্বান করব- আমাদের নেতাকর্মীরা যেন মাঠে নেমে পড়ে।’

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয়, আমি ঢাকার দুই সিটি মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি, মশা যেন ডিম পাড়তে না পারে, মশার লার্ভা যেন তৈরি না হয়, বংশ বিস্তার করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া এবং প্রটেকশন দেয়া। প্রত্যেককে নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে- এটিই হচ্ছে বাস্তবতা। আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি- প্রত্যেকের ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন যেন থাকে, সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ডেঙ্গুর বিষয়ে সাংবাদিকদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদেরও বলব- বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয়, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। পাশাপাশি এটিও দেখতে হবে সবাই যেন সাবধান থাকে। কাজেই কর্মস্থানে যেন মশা কামড়াতে না পারে বংশ বিস্তার করতে না পারে। সবাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে আমরা রক্ষা পেতে পারব। চিকিৎসার ব্যাপারেও কী কী করণীয়, এগুলো আমাদের চিকিৎসকরা মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে প্রচার করছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here