বাংলা খবর ডেস্ক: ডেঙ্গুর প্রকোপ নগরবাসীর জন্য একটি আতঙ্ক। পরিসংখ্যান বলছে, গত এক মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগের সংখ্যা ১৫ হাজার। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অন্যসব রোগে আক্রান্ত রোগীরাও। তবে এসব রোগীর মধ্যে বেশ ঝুঁকিতে রয়েছেন হৃদরোগীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে প্রকাশ, বাংলাদেশের মোট মৃত্যুর ২৭ শতাংশই হৃদরোগের নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর এসব হৃদরোগী যখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, তবে মৃত্যুঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।
যেখানে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ মানুষই হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছেন, সেখানে যারা হার্টের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন, তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হবেই।
জানা গেছে, হার্টে রিং পরানো কিংবা বাইপাস সার্জারি হয়েছে এমনও অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন রাজধানীতে। ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এসব হৃদরোগীর বিষয়ে আরও সতর্কতা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হৃদরোগীদের জন্য ডেঙ্গুজ্বর কতটা ভয়াবহ তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রাজীব কুমার সাহা।
তিনি বলেন, হৃদরোগীদের ওষুধ মানেই রক্ত তরল করার ব্যবস্থা। এগুলোর সবই এন্টি প্লেটলেট। অথচ ডেঙ্গু হলে প্লেটলেট ভেঙে যায়। তা হলে একজন হৃদরোগীর ডেঙ্গু হলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে তা সহজেই অনুমেয়।
সে হিসাবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে বিপদ ঘটতে পারে বলেন জানান তিনি।
তিনি বলেন, এ কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাকে আরও দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
অন্যসব ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর তুলনায় কমপক্ষে পাঁচটি ঝুঁকি বেশি রয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হৃদরোগীদের।
বিশেষজ্ঞ রাজীব কুমার সাহা বলেন-
১. রোগীর প্রেসার কমে যেতে পারে।
২. হাইপোটেনশন থেকে বিপদ ঘটতে পারে।
৩.ডেঙ্গু থেকে লিভার আক্রান্ত হতে পারে। বিলুরুবিন বেড়ে যাতে পারে।
৪. রক্তের অণুচক্রিকায় রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
৫. হৃদরোগ ছাড়াও যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিচ্ছেন তাদের সেসব ওষুধ রক্তচাপ দ্রুত কমিয়ে দিতে পারে।
মি. সাহা বলেন, ডেঙ্গু হলেই তো বিপদ। তার ওপর যাদের একবার হলেও হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কিংবা রিং পরানো আছে, তাদের নিজেদেরই উপলব্ধি করতে হবে যে ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কিনা। অন্যসব ডেঙ্গু আক্রান্তের থেকেও দ্রুত চিকিৎসকের কাছে তাদের যেতে হবে।
এমন সব রোগীর প্রথমে জ্বর নিয়ন্ত্রণে আনতে হৃদরোগের ওষুধ বন্ধ করে দিতে হবে। জ্বর সেরে গেলে যত দ্রুত সম্ভব আবার সেসব ওষুধ চালু করতে হবে। এর পর শরীরের ফ্লুয়িড ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখতে হবে। উচ্চ বা নিম্নরক্তচাপ ঠিক করতে হবে। জ্বর কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হার্টের চিকিৎসায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে সবই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে বলে জানান তিনি।
মি. সাহা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হৃদরোগীদের জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত ও দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত। তবে এ নিয়ে কোনো আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।