প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ: মির্জা ফখরুল

0
49

বাংলা খবর ডেস্ক: হেফাজতে নির্যাতন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘সত্যের অপলাপ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টে আমরা দেখেছি প্রতি বছরে এখানে জুডিশিয়াল কাস্টডিতে ৪শ’ থেকে ৭শ’ জনের মৃত্যু হয়। এটা তো আমার কাছে পরিষ্কার যে, এখানে প্রধানমন্ত্রী সত্য কথা বলেননি।

ফখরুল বলেন, হেফাজতে যে টর্চার হয় এটা কমন ব্যাপার। পত্র-পত্রিকায় ছবিতে এসেছে, সিলিংয়ের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদের পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে।

এগুলো পত্র-পত্রিকায় এসেছে। সুতরাং উনি (প্রধানমন্ত্রী) অবলীলায় অস্বীকার করলেন এটা (হেফাজতে মৃত্যু) হয় না। আমরা মনে হয় এটা সঠিক তো নয়ই, এটা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র হল নির্যাতন সরকারিভাবেই চলছে। যারা বিরোধী দলে আছেন ও যারা ভিন্নমত পোষণ করেন তাদের ওপরে অতি মাত্রায় অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শিল্পী শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করে অত্যাচার করা হয়েছে। কাস্টডিতে নেয়ার পর অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার সঙ্গে নির্মম আচরণ করা হয়েছে।’

মঙ্গলবার বিবিসি বাংলা বিভাগে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি শ্রেণি হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু আছে যারা অসাংবিধানিক সরকার, জরুরি অবস্থা অথবা মার্শাল ল বা মিলিটারি রুলার এলে তাদের খুব দাম বাড়ে। কাজেই তারা সারাক্ষণ খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আমাদের পেছনে লেগে আছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইতিপূর্বেও প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা সত্যকে অস্বীকার করেছেন। যার ফলে দেশের মানুষ সাফার করেছে। ডেঙ্গুকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কর্মকর্তারা প্রথম দিকে কোনো গুরুত্বই দেননি এবং গুজব বলে নাকচ করেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, এটা এত বেশি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে যে এটা শুধু ঢাকাতে নয়, সারা দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, এটাকে আপদকালীন সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার কথা আমরা বলেছিলাম। ডেঙ্গু মোকাবেলায় রাজনীতিকে বাদ দিয়ে, দলীয় রাজনীতিকে বাদ দিয়ে জনগণের কল্যাণের জন্য সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিত।

সেটা তো কখনও হয়নি এখানে। যত জাতীয় সমস্যা এসেছে, কোনো সমস্যাতে আওয়ামী লীগ অন্য দলকে সম্পৃক্ত করেনি এবং তারা এতে বিশ্বাসও করে না। তারা একলা চলার নীতিতে বিশ্বাস করে। সে কারণে তাদের বড় ধরনের ভুল হতে থাকে, ত্রুটি হতে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মিডিয়ার কারণে ডেঙ্গু সমস্যা নিয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে- এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘উনারা সব সময়ই জিনিসগুলোকে এভয়েট করার চেষ্টা করেন। বাস্তব সত্য যেটা সেটাকে স্বীকার করতে উনারা সাহস পান না। আজকে প্রতিটি মানুষ এফেক্টটেড। যিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি ভয়ে আছেন, দৌড়াচ্ছেন। আর যার হয়নি সেও দৌড়াচ্ছেন। ব্যক্তিভাবে দু’দিন ধরে আমার শরীরে ব্যথা ছিল, আমি দু’বার টেস্ট করিয়েছি। এ বয়সে যদি ডেঙ্গু হয় তাহলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে নাটক চলছে এখন। ফটোসেশন চলছে। ওবায়দুল কাদের নিজেই ঝাড়ু দিলেন। আবার উনিই বলছেন যে, ফটোসেশন করা চলবে না। ইট ইজ ভেরি ইন্টারেস্টিং। আমরা সাধারণ মানুষ এগুলো দেখছি আরকি।

ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকার অপচেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। এবি সিদ্দিকীর করা মামলার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আসলে এ ধরনের ঘটনায় মামলা একটা আসবে এটা চিন্তাই করতে পারিনি। মামলাটি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা-বানোয়াট।

এ প্রথম দেখলাম যে, মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে গেল। মামলার কাগজে আমাদের নাম কোথাও নেই। আমি বিস্মিত হয়েছি যে, সে ক্ষেত্রে আদালত আমাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে দিয়েছেন। আমরা হাইকোর্টে গেছি।

হাইকোর্টও জিনিসটাকে আমরা বুঝলাম না, আমাদের মাথার মধ্যে এখনও পরিষ্কার না- এটাকে সেইভাবে না দেখে আমাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেন।

তিনি বলেন, বন্যা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ আপাতত স্থগিত আছে। তবে ঈদের পরে সমাবেশ হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here