ঢাকায় ৬৯ চিকিৎসকসহ ২০২ স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত

0
74

চিকিৎসক ফারহান ইয়াসমিন এ মাসে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন। চার দিন পর ৯ আগস্ট তাঁর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই চিকিৎসক।

বুধবার বিকেলে ফারহান ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার বাসায় তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন। আমি ঠিক নিশ্চিত না, বাড়িতে, নাকি মুগদা মেডিকেলে আক্রান্ত হয়েছিলাম।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের হিসাব বলছে, গতকাল পর্যন্ত মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ জন চিকিৎসক ও ২২ নার্স ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা শহরে ৬৯ জন চিকিৎসক, ৮০ নার্স, ৫৩ জন সহকারীসহ মোট ২০২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জন চিকিৎসক, ১১ জন নার্স ও ৪ জন সহকারী এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬২ জন শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর মধ্যে ২৫ জন চিকিৎসক, ২২ জন নার্স ও অন্যান্য কর্মচারী ১৫ জন।

সম্প্রতি সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার দুটি সরকারি হাসপাতালে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে এডিস মশা আছে। একটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, অন্যটি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১১ জন চিকিৎসক ও ১৪ জন নার্স ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘হাতা লম্বা জামা, লম্বা প্যান্ট ও মোজা পরে কাজ করার জন্য জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রত্যেককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালের চারপাশ পরিষ্কার করা হচ্ছে।’

কন্ট্রোল রুমের হিসাব বলছে, বেসরকারি হাসপাতালের ৩০ জন এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন চিকিৎসক, ৪ জন নার্স ও ১৭ জন সহকারী কর্মী।

তবে হাসপাতালের কাজের বাইরে তপন কুমার মণ্ডল নামের একজন স্বাস্থ্য সহকারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১২৬ জন স্বাস্থ্য সহকারীকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু প্রতিরোধের কাজে যুক্ত করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তপন এসেছিলেন মাদারীপুর থেকে। গতকালও একজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা ছেড়ে গেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর রক্ত খায় এডিস মশা। সেই মশার মাধ্যমে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংক্রমিত হন। এ জন্য হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের মশারির মধ্যে রাখা বাঞ্ছনীয়।

তিন নারীর মৃত্যু

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিন নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ১৬৩ জনের মৃত্যুর খবর জেনেছে গণমাধ্যম। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে এই মৃত্যুর খবর জেনেছে গণমাধ্যম। সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৭।

সরকারের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৬২৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ৭১১ ও ঢাকা শহরের বাইরে ৯১৫ জন। আর এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৭ হাজার ৯৯৫।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পিংলাকাঠি গ্রামের নাছিমা বেগম গত মঙ্গলবার রাতে মারা যান। ডেঙ্গুতে নাসিমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মির্জা মাহবুব।

বরগুনার আমতলী উপজেলার আসমা বেগম গত সোমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বিষয়টি তাঁর বোন নাসিমা বেগম জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন খাদিজা আকতার। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম নাছির উদ্দীন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here