বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী পর্যটক নাজমুন নাহার এখন নিউইয়র্কে

0
475

বাংলা খবর:
বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী পর্যটক নাজমুন নাহার এখন নিউইয়র্কে। তিনি দেশের ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে সাড়া জাগিয়েছেন ইতিমধ্যে! দেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছেন, অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তার যুগান্তরী বিশ্ব অভিযাত্রার জন্য! তিনি পৃথিবী ব্যাপী বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য, পতাকার সম্মানকে তিনি সর্বোচ্চ উচ্চতায় তুলে ধরার জন্য হেটেছেন পৃথিবীর দুর্গম থেকে দুর্গমতর পথে! আগামী ২৮ আগস্ট অনলাইন পত্রিকা বাংলা খবরের উদ্যোগে আয়োজিত এক মত বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন নাজমুন নাহার। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মিডিয়া ও প্রবাসের বিশিষ্টজনেরা অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানে তিনি তার বিশ্বভ্রমনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন।
এই দুঃসাহসিক অভিযাত্রীর পৃথিবীর পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমাদের লক্ষ কোটি নারীকে আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, নারীদেরকে কৌশলী হতে শিখাবে! শুধু তাই নয় ভয়হীন ভাবে কিভাবে আত্বপ্রত্যয়ী হয়ে নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে হবে সেই আল্পনা অংকিত করে যাচ্ছেন বিশ্বজয়ী পতাকা কন্যা নাজমুন নাহার! এই যাত্রা পথে তিনি মধ্যরাতে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে আটকা পড়েছেন, সাহারা মরুভূমিতে মরুঝড়ের মধ্যে রক্তাক্ত হয়েছেন, পোকা মাকড়ের কামড় খেয়েছেন আফ্রিকার জংলী
পথে, অন্ধকারে অচেনা শহরে পথ হারিয়েছেন, তিন মাস আফ্রিকাতে আলু খেয়ে ছিলেন, কখনো না খেয়ে ছিলেন! কখনো কাঠের মধ্যে, কখনো পাথরের উপর, কখনো আদিবাসীদের সাথে জঙ্গলে তাকে ঘুমাতে হয়েছে বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়ে! কখনো রাতের অন্ধকারে বর্ডার ক্রস করতে না পেরে অপরিচিত স্থানীয় পরিবারের সাথে ঘুমাতে হয়েছে!

কখনো পড়ে গিয়েছেন, কিন্তু ভেঙে পড়েননি, লাল সবুজের পতাকা হাতে আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন! মৃত্যুর হাতছানি দেখেও মৃত্যুকে জয় করে উঠেছেন সু উচ্চ পর্বতের চূড়ায় এই বিশ্বজয়ী! এখন পর্যন্ত ১৩০ টি দেশ ঘুরেছেন।
সম্প্রতি জুন- জুলাই ২০১৯ তিনি সফর করেন কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও চায়না। লক্ষ্য আরো বিশাল। বিশ্বের সব দেশে পড়বে তাঁর পা। সেই লক্ষ্যে ছুটে চলেছেন সর্বক্ষণ।

তিনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক নতুন পথ সৃষ্টি করে দিয়ে যাচ্ছেন। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রেমে পড়েছিলেন। সে থেকেই ভ্রমণই তার নেশা। উৎসাহ দিয়েছিলেন তার বাবা। বাবার অনুপ্রেরণায় ডানা মেলেছেন শৈশবেই। উড়ছেন এখনও। লাল সবুজের পতাকাকে সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার সংগ্রামে চাপা পড়েছে তার সংসার স্বপ্নও। বিশ্বরূপ দেখতে গিয়ে মানুষের মাঝে পরিচয় করে দিয়েছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে। দেশ-দেশান্তরে শিশুদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন জীবন দর্শনের শান্তির বার্তা।

সব সময় বাংলাদেশ সফরের শত ব্যস্ততার মাঝেও দেখা গেছে তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে খাবার বিতরণ করেছেন, ছুটে গিয়েছেন বাচ্চাদের বিভিন্ন স্কুলে তাদেরকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য, পৃথিবীর গল্প শোনানোর জন্য! চট্টগ্রামের রেড ক্রিসেন্ট এর প্রোগ্রামে তাকে দেখা গেছে তার পৃথিবীর গল্পের মাধ্যমে হাজার হাজার শিশু-কিশোরকে উৎসাহ দিতে। শুধু বাংলাদেশে নয় তিনি পৃথিবীব্যাপী ও তার যাত্রাপথে পৃথিবীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজে তুলে ধরেন তার বিশ্বভ্রমণের কথা, বাংলাদেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি ও ইতিহাসের কথা। তিনি পৃথিবীর পথে পথে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকার মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের মাঝে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আদিবাসীদের কাজ পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছেন শান্তির বার্তা।
বাংলাদেশের পতাকা হাতে পৃথিবীর পথে পথে তিনি যে সংগ্রাম করছেন, কয়েকবার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে, সড়ক পথে একা একা পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে পথ পাড়ি দিয়েছেন, না খেয়ে না ঘুমিয়ে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে, সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গ, সমুদ্রে, মরুভূমিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন।







ঐতিহাসিক বিশ্বভ্রমণের রেকর্ড ছুঁয়েছেন নাজমুন নাহার! বাংলাদেশের এই গর্বিত নারী এখন পর্যন্ত লাল সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন বিশ্বের ১৩০ টি দেশে! বাংলাদেশের কোনো মানুষের এই প্রথম এতো গুলো দেশ ভ্রমণ! পৃথিবীর মানচিত্র এক সময় যার অধ্যয়নে এবং স্বপ্নের মধ্যে ছিল এখন তার হাতের মুঠোয়! ছোটবেলা থেকেই যে নারী স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশের পতাকা হাতে ঘুরবেন সারাবিশ্ব- আজ তার বিশ্বজয়ের স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে! তিনি একা একা পৃথিবীর ১৩০ টি দেশ ভ্রমণ করে ফেলেছেন, কখনো সাহারার মরুভূমি, কখনো বিপদসঙ্কুল আফ্রিকান জঙ্গল আবার কখনো বা সমুদ্রের তলদেশে গিয়েছেন। নাজমুন নাহার পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশই ভ্রমণ করেছেন সড়ক পথে একা একা, এ তালিকার মধ্যে রয়েছে পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও যুগোস্লাভিয়ার প্রতিটি দেশ, ইউরোপ ও এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ!

নাজমুন নাহার বলেন, ‘ছোটবেলায় বাড়ির পাশের মাঠে পাখি ধরতে চাইলেই পাখি উড়ে যেত আকাশে। তখন আমার মনে হতো আমিও যদি এভাবে উড়তে পারতাম। তখন থেকেই আমার ইচ্ছা, আমি যদি বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারতাম। ছোট থেকেই আমি মানচিত্র দেখলে তাকিয়ে থাকতাম। কোন দেশের সঙ্গে কোন দেশ লেগে আছে তা দেখতাম। কোথাকার মুদ্রার নাম কি? রাজধানী কোনটা? এগুলো দেখে দেখে ভেতরে আকাঙ্খা তৈরি হতো যে একদিন আমি বিশ্বভ্রমণে যাব। এভাবে আমার স্বপ্নই ছিল বিশ্ব ভ্রমণ করা। ছোটবেলায় স্বপ্নের মধ্যেও পাখিদের মতো উড়তাম। সেই ইচ্ছাই আজকে আমাকে এখানে নিয়ে আসছে।’

দেশ ভ্রমণের রেকর্ড

বাংলাদেশের পতাকা হাতে তিনি বিশ্ব শান্তির এক অনন্য দূত হিসাবেও কাজ করে যাচ্ছেন সারা বিশ্বে! ২০০০ সালে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে তার প্রথম বিশ্বভ্রমণ শুরু হয়! সে সময় তিনি ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে যান। এটিই তাঁর জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমন! বিশ্বের আশিটি দেশের ছেলেমেয়ের সামনে তখন তিনি প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন! সেই থেকে বাংলাদেশের পতাকা হাতে তার বিশ্ব যাত্রার শুরু! এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ৯৩তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেছেন নিউজিল্যান্ড! এই দুর্দান্ত সাহসী নারী একে একে বাংলাদেশের পতাকাকে পৌঁছান সর্বোচ উচ্চতায়! বাংলাদেশের এই নারী ২০১৬ ও ২০১৭ সালে টানা ঘুরেছেন ৩৫টি দেশ! ২০১৮ সালে তিনি পৃথিবীর মানচিত্রের ৩২ টি দেশ সফর করেছেন!

২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ঘুরেছেন পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার ১২টি দেশ! ২০১৮ সালের ১ লা জুন নাজমুন একশ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়েতে! তিনি বাংলাদেশের পতাকা হাতে জাম্বিয়ার সীমান্তবর্তী লিভিংস্টোন শহরে অবস্থিত পৃথিবীর বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের ব্রিজের উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে জিম্বাবুয়েতে পৌঁছান! ইতিহাসে তার শততম দেশ ভ্রমণের সাক্ষী হয়ে রইলো ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত! যে জলপ্রপাতটির অর্ধেক বহমান জাম্বিয়ায়, বাকি অর্ধেক বহমান রয়েছে জিম্বাবুয়েতে! এরপর ২০১৮ সালের অক্টবরে ১১০ তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেন মধ্যে এশিয়ার ইরান!

সম্প্রতি ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত সড়ক পথে ঘুরেছেন পশ্চিম আফ্রিকার ১৫ টি দেশ, এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে সাহারা মরুভূমি ও উত্তর আটলান্টিকের পাশ ঘেঁষে যাওয়া সব দেশ গুলোর নাম! ১৮ নভেম্বর ২০১৯ সুইডেন থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের দ্বীপ গ্রান্ড ক্যানারিয়া হয়ে তিনি শুরু করেছিলেন মৌরিতানিয়া, সেনেগাল, গাম্বিয়া, মালি, গিনি বিসাও, গিনি কোনাক্রি, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া, আইভরিকোস্ট, বুরকিনা ফাসো, গানা, টগো, বেনিন, নাইজার ও নাইজেরিয়া ভ্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রের সবচেয়ে কঠিন পথ যাত্রা! নাজমুন নাহার এবারের যাত্রা শুরু করেছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার রাজধানী নোয়াকচট থেকে! শেষ করছেন নাইজেরিয়ার লাগোস শহরে! এর মাধ্যমে তার শেষ হলো পশ্চিম আফ্রিকার সাহারা মরুভুমি ও গোল্ড কোস্ট লাইনের প্রতিটি দেশ ভ্রমণ!
২০১৯ মে- জুন নাজমুল ভ্রমণ করে না কম্বোডিয়া, লাওস, চায়না!

নাজমুনের বিশ্বজয়ের পথে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে! বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী এই নারী এ তাঁর বিশ্বভ্রমণের দেশ জয়ে কোনো বাঁধাই তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি! লাল সবুজের পতাকা হাতে সাহারার তপ্ত মরু থেকে শুরু করে সমুদ্রের তলদেশ, পর্বত শৃঙ্গ, শহর, বন্দর, আফ্রিকার দুর্গম জঙ্গল সব জায়গায় যার পদচিহ্ন পড়ছে একে একে! সব কঠিনকে অতিক্রম করে বাংলাদেশের এই নারী সম্প্রতি কয়েক হাজার মাইল সড়ক পথে পা িড় দিয়ে পশ্চিম আফ্রিকার সব কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করে এক অনন্য মাইল ফলক গড়েন। বাংলাদেশের পতাকা হাতে নাজমুন নাহারের দেশ ভ্রমণের এই অনন্য রেকর্ড বিশ্বের ইতিহাসে সৃষ্টি করবে এক নতুন দিগন্ত!

ফ্ল্যাগ গার্ল উপাধি:
পৃথিবীর ইতিহাসে নাজমুনের মতো এমন নারী বিরল যিনি এক দেশ থেকে আরেক দেশে হাজার হাজার মাইল বাই রোডে একা একা ভ্রমণ করছেন নিজ দেশের পতাকা হাতে! দিনে রাতের অন্ধকারকে একাকার করে পর্বতে, সমুদ্রের তলদেশে, দুর্গম জঙ্গলে, বন্যপ্রাণীর পাহাড়ে, অজানা আদিবাসীদের এলাকায় কোথাও যেতে ভয় পায়নি এই নারী! বুকে তার লাল সবুজের শিহরণ, দুচোখে তার বিশ্ব, সে আমাদের লাল সবুজের পতাকা কন্যা নাজমুন নাহার! একজন নারী হিসেবে একাই শতাধিক স্বাধীন দেশ ঘুরে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নাজমুন নাহার।
তার এই মাইলফলককে সম্মাননা দিয়েছেন জাম্বিয়া সরকারের গভর্নর হ্যারিয়েট কায়েনা! জাম্বিয়া সরকারের গভর্নরের কাছ থেকে পেয়েছেন ফ্ল্যাগ র্গাল উপাধি!

তারপর ফ্ল্যাগ গার্ল খ্যাত নাজমুন নাহারকে নিয়ে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক মিডিয়া ‘জাম্বিয়া ডেইলি মেইল’ এর বিশেষ ক্রোড়পত্রে ৩ জুন ২০১৮ প্রকাশিত হয় একটি ফিচার স্টোরি! খ্যাতনামা সাংবাদিক মার্গারেট সামুলেলা তার লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেন নাজমুনের জীবনদর্শন, বাংলাদেশের পতাকার সম্মান, ভ্রমন মাইলফলকের কাহিনী ও তার মোটিভেশনাল কার্যক্রমের কথা! এছাড়াও বিখ্যাত সাংবাদিক আলেক্স ইয়ামাহের লেখায় ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ লাইবেরিয়ার বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক ‘নিউ ডেমোক্র্যাট’ পত্রিকার হেড লাইনে প্রকাশিত হয় নাজমুন নাহারকে নিয়ে একটি ফিচার স্টোরি, সেখানে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের পতাকা হাতে তার বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করার বৃত্তান্ত! নাজমুন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে এভাবেই গৌরবের সাথে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে! তাঁর ভ্রমণের ঝুড়ি এখন শতক ছাড়িয়ে চলছে একের পর এক! স্বপ্ন তার পুরো বিশ্বভ্রমণ করার!

সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণের চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশের পতাকা হাতে তার এই দুর্বার দেশ জয় কতটা কঠিন ও বিপদসংকুল অভিযাত্রা ছিলো তা নিয়েই তিনি বলেন- পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণের সময়ও আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি! মৃত্যুকে জয় করে আজ আমার বেঁচে থাকা এই মৃত্যুঞ্জয়ী আমি বাকি সব দেশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখছি এখনো!

নাজমুন নাহার বলেন, কোটি প্রাণের লাল সবুজের পতাকা হাতে পূর্ণ হলো দেশ ভ্রমণের আরেকটি ঐতিহাসিক রেকর্ড! ১৩০ দেশের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের পতাকাকে নিয়েছি সর্বোচ্চ উচ্চতায়!
নাজমুল বলেন পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণ যাত্রায় অনেক কষ্ট হলো, কিন্তু শিখেছি অনেক, দেখেছি অনেক! পনেরো দেশে সড়ক পথে কয়েক শত শত ঘন্টার জার্নি একা একা! ৪৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়েছি, কখন টানা ২৬ ঘন্টা না খেয়ে ছিলাম, মাটির মধ্যে, জঙ্গলের মধ্যে আদিবাসীদের সাথে ঘুমিয়েছি! কখনো ইয়াম আলু, কখন হোয়াইট অরেঞ্জ খেয়ে থেকেছি!
পশ্চিম আফ্রিকার পথে পথে আমাকে অনেক কঠিন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে! কিন্তু আমি সবই আমার মানসিক শক্তি আর পজিটিভ চিন্তা দিয়ে মোকাবেলা করেছি!

দুরহ পথ সাধ্য করেছেন নাজমুন নাহার! বলা চলে হার না মানা বাংলাদেশের এই সাহসী নারী! তিনি বলেন- ‘ বাংলাদেশের লাল সবুজের এই পতাকা আমার কাছে সবচেয়ে বড় শক্তি! এই পতাকা আমাকে ছায়া দিয়েছে অনেক!
বাংলাদেশের এই লাল সবুজের পতাকা বহন করার জন্য আমি সব কষ্টকে মাথা পেতে নিয়েছি!

সিয়েরা লিওন থেকে লাইবেরিয়া আসার পথে রাস্তার মধ্যে সারা পথে ১১ টি ভয়ঙ্কর কূপ পার হতে হয়েছিল, এ ছাড়া দ্বিতীয় বিকল্প কোনো পথ ছিল না! শুধু তাই নয়, রাস্তা কোথায় ভয়ঙ্কর উঁচু, খাড়া, কোথাও পিচ্ছিল, কোথাও ভয়ানক ধুলোমাখা, কোথাও রাস্তায় পড়ে থাকা গাছের ডাল পালা সরিয়ে আসতে হয়েছিল, বাইক ছাড়া ওই সব রাস্তা পার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না! সিয়েরা লিওনের বউ শহর থেকে বর্ডার শহর জেন্ডামা পর্যন্ত প্রায় ৬ ঘন্টার এই পথের স্মৃতি আমার ভ্রমণ যাত্রার ইতিহাসে একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতা দিলো!

বাংলাদেশের পতাকা হাতে যখনি আমি নতুন কোনো দেশের সীমান্তে পা দিয়েছি তখনই আমার সাথে যেন জেগে উঠেছে ষোলো কোটি প্রাণ!
বিশ্ব মানচিত্রের সবচেয়ে কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছেন নাজমুন নাহার! মৌরিতানিয়ার সাহারা মরুভূমিতে তপ্ত মরুঝড়ে আক্রান্ত হয়ে ধারালো বালির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছিলেন! সেনেগালের রোজ লেকে যাওয়ার পথে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পথ হারিয়ে তিন ঘন্টা জঙ্গলে হাঁটার পর অচেনা গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় পথ খুঁজে পাওয়া!
সেন্ট লুই’তে একাকী পথ হারিয়ে আট কিলোমিটার পায়ে হেটে অন্ধকার পথ পারি দিয়ে এক ভয়ানক পরিস্থিতিকে অতিক্রম করে আবু নামক এক যুবকের সহযোগিতায় বাস স্টেশন খুঁজে পাওয়া! গিনি কোনাক্রি তে যাওয়ার পথে মধ্য রাতের অন্ধকারে আঠারো ঘন্টা জঙ্গল পথে আটকে থাকা এক বিভীষিকাময় রাত্রিকে হার মানিয়েছে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here