সামনে বড় আন্দোলনের হুশিয়ারি ফখরুলের

0
98

বাংলা খবর ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মিডিয়া- সব নিয়ন্ত্রণ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্য তারা জোর করে টিকে আছে। জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি- আসুন, যারা আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আজ সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, স্বাধীনতার চেতনাকে সমুন্নত রাখতে ঐক্যবদ্ধ হই। সামনের দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে এই দানব সরকারকে পরাজিত করতে হবে।

 

কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল ১০টা থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে এটাই সবচেয়ে বড় কর্মসূচি, যেখানে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপিস্থিতি ছিল।

বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালিত হয়। এদিকে মানববন্ধন ঘিরে প্রেস ক্লাবের সামনে এবং এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ভারতের আসাম রাজ্যের নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে সেখানকার মন্ত্রীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রতিবেশী দেশ, বন্ধুদেশ, তাদের আসাম থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশিদের খেদিয়ে বের করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোনো বাংলাদেশি মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতে যায়নি। গভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছে বাংলাদেশকে আবার বিপদগ্রস্ত করার জন্য।

নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। কারণ তাদের সেই বৈধতা নেই, সাহস নেই।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তার ডায়াবেটিস অত্যন্ত বেড়ে গেছে, তার আর্থ্রাইটিস বেড়ে গেছে, তার ঘাড়ের ব্যথা বেড়েছে। তিনি সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারেন না, চলতে পারেন না। হুইলচেয়ারে চলতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু এই সরকার, তার কর্মকর্তারা এবং ডাক্তাররা বলছেন, তিনি নাকি সুস্থ হয়েছেন। মূলত তিনি একেবারে সুস্থ নন। অসুস্থ অবস্থায় তিনি কারারুদ্ধ হয়ে দিন পার করছেন। আমরা তার সুচিকিৎসার জন্য মুক্তি দাবি করছি।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি মহাসচিব নিজেই স্লোগান ধরেন- ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও’, ‘মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’।

সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এই সরকার, যারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ভোট ডাকাতি করে, জনগণের অধিকারকে হরণ করে ক্ষমতায় বসে আছে, তারা অন্যায়ভাবে দেশনেত্রীকে আটকে রেখেছে শুধু একটি কারণে- দেশনেত্রী যদি মুক্ত থাকেন, তিনি জনগণকে নিয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন।

তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখছেন, টেলিভিশনে দেখছেন, কীভাবে গণলুট তারা করছে, কীভাবে দুর্নীতি করছে। আজ তারা দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছে। দুর্নীতির টাকা তারা দেশে-বিদেশে পাচার করে বাড়িঘর গড়ে তুলছে। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহি নেই, তারা বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসে না বলেই এই গণতন্ত্রহীন অবস্থায় নিয়ে এসেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম এদেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেব বলে, এদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেব বলে। যা আজ এই আওয়ামী লীগ সরকার যারা একবার ১৯৭৫ সালে বাকশাল করে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, গণতন্ত্র হত্যা করেছিল; আজ আবার ভিন্ন কৌশলে তারা একই কায়দায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করছে।

জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন আজ নিজেদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, কথা বলার অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য এই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। ভোটারবিহীন সরকারকে সরিয়ে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। সরকারের প্রভাবের কারণে আদালত মুক্তমনে কাজ করতে পারছে না। যে কারণে আজ আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এই আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। তিনি বলেন, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধভাবে সারা দেশে আন্দোলনের পথ বেছে নিতে হবে, কর্মসূচি দিতে হবে। একমাত্র রাজপথেই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি অর্জন করতে পারব।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের মনে হয় বেশিদিন মানববন্ধন চলবে না। আমাদের এখন দানববন্ধন কর্মসূচি দিতে হবে। রাজনীতিবিদদের আদালত আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীর মুক্তি-আন্দোলনের ওপর নির্ভর করা, এর জন্য অপেক্ষা করা অসম্মানজনক।

তিনি বলেন, যে আদালত নিজে চলতে পারে না, যে আদালত নিজের চিন্তাভাবনা প্রয়োগ করেতে পারে না, যে আদালত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাইরে এককদম হাঁটতে পারে না- সেই আদালদের ওপর খালেদা জিয়ার মুক্তির নির্ভরশীলতা আর খালেদা জিয়াকে আদালতে রাখা একই কথা। আমরা যদি মনে করি, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সরকার একমাত্র বাধা, তাহলে সরকারের পতনের আন্দোলনই আগে করব। তারপর খালেদা জিয়া স্বাভাবিকভাবেই মুক্ত হয়ে আসবেন।

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান। দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে দেশের লাখ লাখ নেতাকর্মী প্রস্তুত আছেন। আপনারা আমাদের নির্দেশ দেন, আমরা সেই নির্দেশ মোতাবেক লাখ লাখ নেতাকর্মী নিয়ে রাজপথ দখলে নিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি। ক্ষমতাসীন দানব সরকারকে পরাজিত করি।

তিনি বলেন, দানব সরকারকে পরাজিত করতে মানববন্ধন কর্মসূচি আর নয়। এজন্য যে প্রস্তুতি দরকার, যে অস্ত্র প্রয়োগ করা দরকার, সেই যথাযথ প্রয়োগের নির্দেশনা আপনারা সিনিয়র নেতারা আমাদের দেন। দেশবাসী শীর্ষ নেতাদের নির্দেশের অপেক্ষায় আছে।

আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য লাখ লাখ নেতাকর্মীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সরকার আমাদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। মনের শান্তিও কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশ থেকে বলে দিতে চাই, শেখ হাসিনা যদি অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেন, আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী রাজপথে রক্ত দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও শহিদুল ইসলাম বাবুল এবং সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, মহানগর উত্তরের আহসানউল্লাহ হাসান, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু প্রমুখ। কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, শামীমুর রহমান শামীম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুল আউয়াল খান, আমিনুল ইসলাম, কাদের গনি চৌধুরী, শরীফুল আলম, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, হাসান জাফির তুহিন, আকরামুল হাসান প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here