ফেইসবুকের ভার্চুয়াল মুদ্রার সঙ্গে কেন থাকছে না ভিসা-মাস্টারকার্ড?

0
56

বাংলা খবর ডেস্ক: নিজেদের ক্রিপটোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা লিবরা নিয়ে আরও বিপাকে পড়ে গেছে ফেইসবুক। এই মুহূর্তে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি করতে নারাজ অনলাইনে অর্থ লেনদেন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভিসা, মাস্টারকার্ড এবং স্ট্রাইপ। অন্য কয়েকটি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বলছে, শুরু থেকে না থাকলেও ভবিষ্যতে তারা ফেইসবুকের সঙ্গে কাজ করতে পারে।

পৃথিবীজুড়ে পেমেন্ট পদ্ধতির অন্যতম জনপ্রিয় নাম ভিসা। এই প্রতিষ্ঠানটিকে ফেইসবুক খুব করে চেয়েছিল নিজেদের মুদ্রার বৈশ্বিক ব্যবহার চালু করতে। প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা ফেইসবুকের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি বিবেচনায় রাখছি। কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঠিক হবে। প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা কীভাবে তারা সন্তোষজনক করতে পারে, সেই সেই সক্ষমতা আমরা বুঝতে চাইছি।

আরেকটি জনপ্রিয় অর্থ লেনদেন ব্যবস্থা পেপ্যাল জানিয়েছে, শুরু থেকে তারা লিবরার সঙ্গে থাকবে না। তবে ‘নিকট ভবিষ্যতে’ কাজ করতে পারে।

একই ধরনের কথা বলছে মাস্টারকার্ডও। তবে তারা আরেকটু এগিয়ে। ভিসাকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি লিবরার পেমেন্ট পদ্ধতি রীতিমতো ঠেকিয়ে দিতে চাইছে।

ফেইসবুকের মতো জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল মুদ্রা চালু করলে বিশ্ব অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সেটি নিয়ে অনেকেই চিন্তায় আছেন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোসেফ ই. স্টিগলিৎস বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত লিবরা প্রচলন করার বিষয়ে ফেইসবুক যেসব তৎপরতা চালিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিশদভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক খাত যেসব নীতিমালার আওতায় কাজ করে, ফেইসবুককে একই নীতিমালার অধীনে আসতে হবে। ফেইসবুক তার গ্রাহকদের জমা রাখা লিবরাকে প্রচলিত মুদ্রায় ভাঙিয়ে তা লগ্ন করবে না, সেই প্রতিশ্রুতি তাদের দিতে হবে।’

বিশ্লেষকদের এমন উদ্বেগের ভেতর যুক্তরাষ্ট্র সরকার লিবরার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে। আগামী ২৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির সিইও মার্ক জাকারবার্গ হাউজ কমিটির সামনে এই মুদ্রার বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন। এই ধরনের মুদ্রা চালু হলে কীভাবে তিনি মানি-লন্ডারিং ঠেকাবেন, তখন সেটি বোঝা যেতে পারে।

পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত এসব বিবেচনায় নিয়ে এখনই চুক্তিতে যাচ্ছে না।

ভার্চুয়াল মুদ্রা আসলে কী?

এটি দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না। আনা যায় না ঘরে। রাখা যায় না ব্যাংকে। তবু বলা হচ্ছে মুদ্রা!

মনে করুন আপনার কাছে এক লাখ টাকা আছে। আপনি সেগুলো ব্যাংকে রাখতে চান না। আবার নিজের কাছেও রাখতে চান না। এমন একটা স্থানে রাখতে চান যেখান থেকে যে কোনো সময় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারবেন, অর্থের মান আবার হঠাৎ করে কয়েক গুণ বাড়ার সম্ভাবনাও থাকবে। এটি করতে হলে ওই লাখ টাকা দিয়ে আপনাকে ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হবে।

বাংলাদেশের মুদ্রার নাম যেমন টাকা, আমেরিকার যেমন ডলার, ভারতের যেমন রুপি ভার্চুয়াল মুদ্রারও আলাদা, আলাদা নাম আছে। এমন প্রায় এক হাজার মুদ্রা প্রচলিত আছে।

সবচেয়ে জনপ্রিয় মুদ্রার নাম বিটকয়েন। সারা বিশ্বের হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এদের চুক্তি আছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে বিটকয়েন দিয়ে কেনাকাটা করা যায়।

এটি মূলত ডিজিটাল মানি। অর্থাৎ অনলাইনে আপনার অ্যাকাউন্ট থাকবে, সেই অ্যাকাউন্টে ডিজিটাল কোডের মাধ্যমে আপনার মুদ্রা সংরক্ষিত থাকবে।

লিবরা জমা রাখতে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ ‘ক্যালিব্রা’ নামের একটি সাবসিডিয়ারি চালু করেছে, যা ডিজিটাল ওয়ালেট হিসেবে ভার্চুয়াল মুদ্রা সংরক্ষণ, আদান-প্রদান ও খরচ করার সুবিধা দেবে। ক্যালিব্রা ফেইসবুকের কয়েক শ কোটি ব্যবহারকারীর মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। বিটকয়েনের জন্যও এমন আলাদা ওয়ালেট আছে।

যারা প্রোগ্রামিং এবং গণিতে দক্ষ তারা বিশেষ কম্পিউটার ব্যবহার করে জটিল হিসাব সমাধান করে এই ধরনের মুদ্রা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের থেকে নিজেদের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসেন। যেমন বিটকয়েন নিজের অ্যাকাউন্টে আনার বা তৈরি করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘মাইনিং’। সারা বিশ্বে সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন তৈরি হবে। এরপর আর কোনো বিটকয়েন তৈরি করা যাবে না। আপনি তৈরি করতে না পারলে টাকার বিনিময়ে কিনে ব্যবহার করতে হবে। ফেইসবুকের মুদ্রা কীভাবে তৈরি হবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।

বিটকয়েনের সংখ্যা এমন সীমাবদ্ধ বলেই শেয়ারবাজারের মতো দর ওঠানামা করে। তাতে মানুষ এটি কিনতে বেশি আগ্রহী হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here