বাংলা খবর ডেস্ক: অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, এসথার ডুফলো এবং মাইকেল ক্রেমারকে নোবেল দেয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেটি হল দারিদ্র্য বিমোচনে তাদের পরীক্ষানির্ভর গবেষণা পদ্ধতি। এই গবেষণার জন্য তারা যে সব মডেল অনুসরণ করেছেন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ব্র্যাকের উদ্ভাবিত আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন মডেল৷
২০০২ সালে ব্র্যাকের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল যা পরে ফোর্ড ফাউন্ডেশন অন্য দেশেও এটি সফল হয় কিনা তা দেখার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশের ৪৭টি জেলার পাশাপাশি বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে এ কর্মসূচি চলছে। আর এ সব কার্যক্রমের কার্যকারিতা পরীক্ষার লক্ষে বিশ্বের ছয়টি দেশ ইথিওপিয়া, ঘানা, হন্ডুরাস, ভারত, পাকিস্তান ও পেরুতে এমআইটির গবেষক অভিজিৎ, ডুফলো এবং তাদের সহযোগীরা গবেষণা করেছেন।
ব্র্যাকের এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়ন৷ এই কর্মসূচির আওতায় ঋণ বা অর্থ সহায়তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ হয় না৷ তার বদলে প্রয়োজনের ভিত্তিতে অতি দরিদ্রদের গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, নৌকার মতো বিভিন্ন সম্পদ দেয়া হয়, যা দিয়ে তারা উপার্জন করতে পারেন৷ এ ছাড়া তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং যথাযথ তদারকি করা হতো যাতে তারা কোনো সমস্যায় না পড়ে। পরবর্তীকালে দারিদ্র্য দূরীকরণে এই প্রকল্পটির সাফল্য প্রমাণিত হয়৷
ব্র্যাকের উদ্ভাবিত এই মডেলটি কি বাংলাদেশের বাইরেও দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজে লাগবে কিনা সেটিই পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি-এমআইটির অভিজিৎ আর এসথার ডুফলো৷
এ জন্য ব্র্যাকের অনুসরণে ইথিওপিয়া, ঘানা, হন্ডুরাস, ভারত, পাকিস্তান ও পেরুর স্থানীয় এনজিওগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত একই ধরনের প্রকল্প বেছে নেন তারা৷ তাদের এই কাজে সহযোগিতা করে এমআইটির আব্দুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাব এবং ইনোভেশনস ফর পভার্টি অ্যাকশন নামের একটি অলাভজনক সংস্থা৷
ওই ছয়টি দেশের ১০ হাজার দরিদ্র পরিবারের ওপর ৭ বছর ধরে গবেষণাটি চালানো হয়। গবেষণা শেষে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ৫ ভাগ বেড়েছে, বেড়েছে আয়ের পরিমাণও৷ সেই সঙ্গে তাদের যে সব সম্পদ দেয়া হয়েছিল তার মূল্যও ১৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার এক বছর পরও খোঁজ নিয়ে তাদের স্বচ্ছল জীবনযাপনের চিত্র পেয়েছেন গবেষক দল।
অভিজিৎ এবং তার সহকর্মীদের কাজ সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে ২০১৫ সালে ব্র্যাকের উদ্ভাবিত মডেল নিয়ে গবেষণাটি প্রকাশের পর৷
সব মিলিয়ে গত ১৬ বছর ধরে অতিদরিদ্র দূরীকরণ নিয়ে গবেষণা করেন অভিজিৎ, এসথার ডুফলো ও সেনথিল মুলাইনাথান৷ এই গবেষণার ফল উঠে এসেছে ২০১৯ সালে প্রকাশিত অভিজিৎ ও এসথারের ‘হোয়াট দ্য ইকোনোমি নিডস নাও’ শীর্ষক বইটিতে৷
এই গবেষণাটি নিয়ে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিজিৎ ও তার সহযোগী গবেষকদের দারিদ্র্য বিষয়ক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্র্যাকের আলট্রা পুওর গ্রাজুয়েশন মডেল। তাছাড়া এই মডেলটি বিভিন্ন দেশের স্থানীয় পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সেখানকার চরম দরিদ্র মানুষের অবস্থা পরিবর্তনের কীভাবে কাজে লাগানো সম্ভব সে বিষয়ে তাদের গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছে।