ক্ষমতাসীনরা এখন থরহরি কম্পমান অবস্থায় : মান্না

0
65

‘সরকারের প্রাণভ্রমরার খবর আমাদেরও কিছু কিছু জানা আছে’ উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা এখন থরহরি কম্পমান অবস্থায়। সাহস নিয়ে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভাটি ‘দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল, আবরার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ভোলার ঘটনার দ্রুতবিচার এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি’তে আয়োজন করা হয়।

মান্না বলেন, ‘সব জায়গায় সরকার ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। ক্রিকেটাররা ধর্মঘট করছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা বলছেন, শেখ হাসিনাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চলছে। যা-ই ঘটছে তারা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাস্তবে এখন ছাত্রলীগ নেই, যুবলীগের তো খবরই নেই, যুবলীগ মানে জুয়ালীগ। পত্রিকায় দেখলাম কোন কোন এমপি সাহেব তাদের নামে নাকি দুদক নোটিশ দিয়েছে। দুদক যদি চার-পাঁচজন এমপিকে নোটিশ দেয় তাহলে সংসদও টেকে কিনা তারও সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষমতাসীনরা এখন থরহরি কম্পমান।’

ক্ষমতাসীনদের প্রাণভ্রমরার খবর জানা থাকার কারণে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন এমন দাবি করে মান্না বলেন, ‘হাফিজ ভাই যেভাবে জেল থেকে বের হলেন আমার নিজেরই বিশ্বাস হতে চায়নি। বিএনপির আর কোনো নেতা এ রকম বের হয়েছে? আজ সন্ধ্যায় ধরেছে, কত বড় মামলা? ২৪ ঘণ্টা যেতে পারেনি, ছেড়ে দিতে হয়েছে? কেন?’

তিনি বলেন, ‘তার মানে এই সরকারের দুর্বল জায়গা, প্রাণভ্রমরার খবর আমাদেরও কিছু কিছু চেনা আছে। আমরা জানি কোথায় কোথায় ধরলে সরকার বিপদে পড়তে পারে। মামলা তো দিতেই পারে, ওটা আমি বিবেচনা করছি না, কারণ ওরকম রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা তো আমারও আছে, প্রতি মাসে হাজিরা দেই। দুর্বল জায়গা সরকারের আছে যেখানে হাত দিলে সরকারের হাত পুড়ে যেতে পারে। সরকারেরও হাত পোড়ে। সরকারেরও মাথানত হয় এবং শেষ পর্যন্ত সরকারের চেয়ারও সরে যায় সেই ইতিহাসও আমরা দেখেছি। তাই সাহস নিয়ে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।

ভারতের সঙ্গে ফেনী নদীর পানি চুক্তির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা বলেন, ‘এতদিন ধরে আমরা তিস্তার পানিসহ মেলা কথা বলেছিলাম। সেটা কোনো আলোচনার মধ্যেই আসল না। আর বলা হলো, আমরা ফেনী নদীর পানি দিয়ে এসেছি। কেন? একই কথা বলো- মানবতার ডাকে সাড়া দেব না? আপনার মধ্যে মানবতার এত বেশি চাষ হয়। সেটা কিন্তু ফাহাদের বেলা হয়নি। কতগুলো গুম করে হত্যা করা হয়েছে তাদের বেলায় মানবতার কথা বলা হয় না। মানবতার কথা বলে নিজের ক্ষমতা টেকানোর জন্য যখন অন্যের পায়ে তেল দিতে হয় তখন মানবতার কথা বলা হয়।’

মান্না বলেন, ‘১৩ তারিখে যখন পুলিশ এখানে ব্যারিকেড দিল, আমরা ব্যারিকেড ভেঙে যেতে কেন পারলাম না কেউ? বক্তৃতা করার সময় আমরা বলি- রক্ত দেব, জীবন দেব, বেগম জিয়াকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। তো পুলিশের সামনেই তো ব্যারিকেড ভাঙতে যান না। রক্ত দেবেন কোত্থেকে? লড়াই করবেন কী করে?

বিএনপি নেতাদের প্রতি কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘বাইরে আসবার দরকার নেই, মসজিদে ঢুকে যান, আল্লাহর সাথে বেশি যোগাযোগ হবে, আল্লাহর কাছে বলেন, আমরা মিছিল-টিছিল করতে পারব না। আল্লাহই বলেছেন, আপনি নিজে যদি কাজ না করেন, তাহলে সফলতা আসবে না। আমি গায়ের জোরে, হটকারী কথা বলছি না, সাহস করতে হবে যুক্তিসিদ্ধভাবে।’

তিনি বলেন, ‘বোরহানউদ্দিনে দেখেছেন মানুষ কী রকম করে নেমেছে? একটা বিশ্বাস থেকে তো নেমেছে। আমি জিজ্ঞেস করছি- যদি বোরহানউদ্দিনে ও রকম করে মানুষ নামতে পারে, তবে ঢাকায় পারছে না কেন? আমি আপনার সবার কাছে প্রশ্নটা করছি, যে রকম বোরহানউদ্দিনে মানুষ নেমেছে, যে রকম করে কোটা আন্দোলনের সময় মানুষ নেমেছে, যে রকম করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় মানুষ নেমেছে, ভ্যাটের বিরুদ্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমেছে সে রকম করে ঢাকায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা কি নামতে পারবেন? নাকি পারবেন না? মাঝে মাঝে শুনি, আমরা তো নামছি, জনগণ নামে না। জনগণ যদি না-ই নামে তাহলে বোরহানউদ্দিনে ওরা কারা?’

মান্না আরও বলেন, ‘জনগণ যদি না-ই নামে তাহলে কোটা আন্দোলনে ওরা কারা? কিন্তু কেউ যদি মনে করেন, আমি এই প্রেসক্লাবের মধ্যে বড় একটা সেমিনার করে অথবা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করলে মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে আমার কাছে এসে জড়ো হবে এ রকম আন্দোলন বাংলাদেশে কেন, পৃথিবীর কোথাও হবে না।’

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here