নিউজ ডেস্ক: আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে চলছে জটিল হিসাব-নিকাশ। ওমর ফারুক চৌধুরী সংগঠনটির চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর অনেক নেতাই শীর্ষপদ পেতে আগ্রহী। তবে যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে নানা দিক বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।
তাদের মতে, দুর্বলতা ও সক্ষমতার হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে অনেকটা ইমেজ সংকটে পড়া সংগঠনটিকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম- এমন নেতৃত্বই আসবে যুবলীগে।
যুবলীগের ইতিহাস থেকে জানা যায়, স্বাধীনতা-উত্তরকালে যুবদের রাজনৈতিক শিক্ষায় সচেতন করার লক্ষ্যে স্বাধীনতা আন্দোলন ও সশস্ত্র সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি প্রতিষ্ঠা করেন যুবলীগ। ১৯৭৪ সালে প্রথম যখন জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় তখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ৩৩ বছর বয়সী শেখ ফজলুল হক মনি। সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে বয়সসীমা ৪০ বছর থাকলেও ১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় কংগ্রেসের পর বিধানটি বিলুপ্ত করা হয়। দীর্ঘদিন যুবলীগ নেতৃত্বের বয়স নিয়ে সমালোচনার মুখে সপ্তম কংগ্রেসে ৫৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছয়টি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানসহ চারজনই বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। বাকি দুজন চেয়ারম্যান ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে এসেছিলেন। এবারের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকে চেয়ারম্যান পদে আসীন করা হবে কি-না, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এখনও কিছু বলতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশের নাম আলোচনায় নিয়ে এসেছেন দলের শীর্ষ এক নেতা। তিনি এটা প্রচার করে আসলে কী করতে চাইছেন, সেটা পরিষ্কার নয়। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ওই শীর্ষ নেতা যুবলীগের সাবেক একজন সাধারণ সম্পাদককে সংগঠনটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব দেয়ার জন্য দলীয়প্রধানের কাছে লবিং-তদবিরের চেষ্টা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের কয়েকজন নেতা বলেন, ওমর ফারুক চৌধুরীর নেতৃত্বে যুবলীগের ইমেজ যে প্রশ্নের মুখে পড়েছে সে বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবার চেয়ারম্যান পদে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ আসুক, এটা হয়তো নেত্রীও চান না। তারপরও যদি কেউ আসে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, যুবলীগের শীর্ষ দুই পদে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফরিদপুর ও বরিশাল বিভাগকে নেত্রী গুরুত্ব দিতে পারেন। তবে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকেও আসতে পারে শীর্ষ দুই পদের একটি।
ওই নেতার তথ্য অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগের চেয়ারম্যান পদ পাওয়ার মতো বরিশাল বিভাগ থেকে রয়েছেন সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত। শীর্ষ দুই পদের একটি পেতে আগ্রহী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান আতা। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে চেয়ারম্যান পদ পেতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গুড বুকে রয়েছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুরুল আলম শাহীন। চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় রয়েছেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন দলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী যুবলীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে সাধারণ সম্পাদক করার জন্য ওই নেতা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গুড বুকে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা। ওই তথ্য পাওয়ার পর ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতাই সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের সন্তান এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী। এছাড়া এ পদ পেতে আগ্রহীদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং যুবলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এন আই আহমেদ সৈকত, মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান সুমন।