সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণের সুদহার তিন মাস পেছাল: অর্থমন্ত্রী

0
804

বাংলা খবর ডেস্ক: শিল্প খাতে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে বা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি আবার তিন মাস পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। আগের সিদ্ধান্ত ছিল শুধু শিল্প খাতের ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ।

অন্যান্য খাতের ঋণের সুদের হার নির্ধারিত হবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব ধরনের আমানতের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। আগের সিদ্ধান্ত ছিল সরকারি আমানতের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ এপ্রিল থেকে। আমানত ও ঋণের সুদের হার কার্যকর হওয়ার কথা ছিল আগামী ১ জানুয়ারি থেকে।

সোমবার সন্ধ্যায় বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) গুলশান অফিসে সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের জরুরি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে ব্যাংকিং খাতে আমানত ও ঋণের সুদের হার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব ব্যাংককে আমানত ও ঋণের নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে তিন মাস সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিষয়টি ঋণগ্রহীতা ও আমানতকারীদেরও জানিয়ে দেয়া হবে। বিএবির সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার সংবাদিকদের বলেন, দেশের স্বার্থে ও শিল্প খাতের বিকাশের সুযোগ করে দিতে আমরাও নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করব। তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে।

এর আগে ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য ১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। ওইদিন অর্থমন্ত্রী ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য আগের সিদ্ধান্ত ‘ছয়নয়’ ফর্মুলা বাতিল করে দেন।

আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু সেটি নানা কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছিল না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি ১৭ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প খাতের ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। সরকারি খাতের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় রাখতে হবে। সরকারি খাতের আমানতের মধ্যে যে পরিমাণ আমানত শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা হবে, তার বিপরীতে কোনো সুদ দিতে হবে না।

অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ করলে সমপরিমাণ আমানত ব্যাংকগুলো পাবে সুদমুক্তভাবে। কমিটির ওই সুপারিশ ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদে অনুমোদন করা হয়। এ বিষয়টি ১ জানুয়ারির মধ্যে কার্যকর করার কথা ছিল। এটি কার্যকর হওয়ার ঠিক দুইদিন আগে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে তার বাস্তবায়ন তিন মাস পিছিয়ে দেন। একই সঙ্গে নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

সূত্র জানায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আমানত কোনোক্রমেই সুদবিহীনভাবে ব্যাংকে আমানত হিসাবে রাখতে চাচ্ছে না। এ কারণে সরকারি ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক কোনো ক্রমেই ৬ শতাংশের বেশি সুদে কোনো আমানত নিতে পারবে না। ফলে সব ধরনের আমানতের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। তবে হিসাবের মেয়াদ ভেদে এর চেয়ে কম সুদেও আমানত নিতে পারবে। কোনো ক্রমেই বেশি সুদে নিতে পারবে না।

এদিকে ঋণের ক্ষেত্রেও শুধু ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। তবে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঋণ নিতে পারবে। অন্য ঋণের ৯ শতাংশের বেশি নিতে পারবে না।

এ প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ঋণের সুদহার কমাতে আমানতের সুদের হার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ বেঁধে দেয়ার ফলে অনেক গ্রাহক ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। ফলে গ্রাহকদের আমানতের একটি বড় অংশ ব্যাংকিং খাতের বাইরে চলে আসতে পারে। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here