নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার দাবি জিএম কাদেরের

0
600

বাংলা খবর ডেস্ক: সংসদীয় গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের। একইসঙ্গে তিনি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ প্রাণবন্ত হচ্ছে না, কার্যকর হচ্ছে না, সংসদ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। কেননা, এ ৭০ বিধির কারণে সরকারি দলের সদস্যরা তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন না। সে কারণে সরকারের সকল সিদ্ধান্ত পাশ হয়ে যাচ্ছে। বিরোধীদের মতামতের মূল্য পাচ্ছে না।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্ব একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে রবিবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব দাবি জানান।

জিএম কাদের আরও বলেন, বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় কিছু ক্রুটি রয়েছে। সে কারণে নির্বাচন সুসংসহ করতে সংখ্যানুপাতিক ভোট ব্যবস্থা, অর্থাৎ যে দল যে পরিমাণ ভোট পাবে সে দল সে অনুপাতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন এমন ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। বহু দেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে কোনো দল যদি মোট ভোটের ২০ শতাংশ ভোট পায় তাহলে সংসদের মোট আসনের ২০ শতাংশ আসনও তাদের দখলে আসবে। তাহলে দেশের ছোট খাট দলগুলোও সংসদে প্রতিনিধিত্ব বাড়বে। এসময় তিনি সংবিধানের সমালোচনা করে বলেন, ৭০ বিধি তুলে দিলে সংসদে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে সেজন্য এটি প্রয়োজন, তবে ৭০ বিধিতে কিছু সংস্কার আনা প্রয়োজন। যাতে করে কোনো এমপি সে সরকারি দলেও হলেও যেন তিনি তার মতামত প্রকাশ করতে পারেন। প্রয়োজনে সরকারি সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন।

এসময় তিনি ওয়েস্ট মিনিস্টার সংসদীয় ব্যবস্থার উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে সরকারের মন্ত্রীরা ছাড়া অন্য সরকারি বিরোধী সব দলের সদস্যরা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী মত প্রকাশ করতে পারেন। সেজন্য ৭০ বিধিতে শুধু বাজেট, অভিসংসনসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩টি বিষয় ছাড়া অন্য সব ব্যবস্থা সংস্কারের আহ্বান।

সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা আরও বলেন, গত অর্থবছরে ১৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হলেও দেশে বেকারত্ব বেড়ে গেছে। দেশে প্রকৃতপক্ষে প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার বেকার রয়েছে। জনসংখ্যাতেও বাংলাদেশের অবস্থান উদ্বেগজনক। স্বাধীনতার সময় আমাদের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি, ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয় ১৫ কোটি, আর ২০২১ সালে তা বেড়ে হবে তিনগুন অর্থাৎ ২১ কোটি। এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

দেশের মাদকের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, ২০১৯ সালে দেশ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার মাদকের জন্য পাঁচার হয়েছে। শুধুমাত্র ইয়াবা এসেছে ৫৩ কোটি, যার আনুমানিক মূল্য ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা। মাদকের এ ভয়াবহার কারণে ৭০ লাখ মানুষ আসক্ত হয়ে পড়েছে, প্রকৃত চিত্র আরও বেশী হবে। আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গত বছরেই বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে ২২৯২ জন মাদক ব্যবসায়ী। কিন্তু তবুও মাদক আমদানি কমেনি। তেমনি ফেনসিডিল, গাঁজাসহ নানাবিধ মাদক দেশে আসছে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ক্যাসিনো ব্যবস্থা বিরুদ্ধে যে জোরদার অভিযান চালানো হলো তা কয়েকদিন পরে কেন বন্ধ হলো।

তিনি বলেন, নির্বাচনকে মানুষের কাছে স্বচ্ছ করতে না পারি, ভোট ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা আনতে না পারি তাহলে গণতন্ত্র থাকবে না। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল মন্ত্র। কিন্তু কেন আজ ভোটাররা ভোট দিতে আসছে না। সেটা সব দল বসে আলোচনা সমালোচনা করার আহ্বান জানান তিনি।

সরকারি দলের ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বর্তমানে আমাদের বড় সমস্যা সৃষ্টি করেছে। গত কয়েক বছরে কয়েক লাখ শিশু জম্ম নিয়েছে। তাদের যদি শিক্ষা না দেয়া যায় তাহলে তারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হবে। তাছাড়া রোহিঙ্গারা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া ছাড়াও আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান বিশেষ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি বলেন, প্রতিবছর এমপিওভুক্তি চলবে। সম্পূর্ণ কম্পিউটারের মাধ্যমে এমপিওভুক্তির কাজ হয়েছে। সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনারও কোনো সুযোগ ছিল না। নতুন পরিপত্র অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্তির তদন্ত চলছে। এসময় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভুল তথ্য দিয়ে থাকলে তা বাতিল হবে।

বিএনপি জোর সমালোচনা করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বিএনপি সরকারে থাকতে জনগণের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছে। তারা এখনো দেশে বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তারা ২০১৪ সালে নির্বাচনে না এসে তারেক জিয়ার নির্দেশে আগুন সন্ত্রাস জ্বালিয়ে মানুষ মেরেছে। স্কুল কলেজ পুড়িয়েছে, খাদ্য বোঝাই গাড়ি পুড়িয়েছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে লুটপাট করেছে। অনেকে তাদের সঙ্গে ঐক্যের কথা বলেন, এ দলের সঙ্গে কিসের ঐক্য? টকশোতে সমঝোতার কথা শুনি- সমঝোতার কোনো বিষয় নেই, এদের সঙ্গে আপোষ করে আমরা কোনো রাজনীতি করতে চাই না। বিএনপি দেশের কোনো উন্নয়ন দেখতে পায় না। আন্দোলন আন্দোলন করে, কিসের আন্দোলন করবে তারা? তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করে।

বিএনপির এমপি জাহিদুর রহমান বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচন কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল না। নির্বাচন কমিশন সরকারের সঙ্গে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরতে সহায়তা করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এদেশে চালু নেই তা ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচন থেকে প্রমানিত হয়েছে। এসময় তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেবার দাবি জানান।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপুমনি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক মন্ত্রী ইমাজ উদ্দীন প্রামানিক, সরকারি দলের ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম, সালমা  চৌধুরী, মো. নুরুল আমিন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বিএনপির এমপি জাহিদুর রহমান প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here