সরকারের হাতে মজুত আছে পর্যাপ্ত নিত্যপণ্য

0
60

বাংলা খবর ডেস্ক: করোনা কারণে সারা দেশে জনগণের মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে বাজার থেকে বেশি পরিমাণে নিত্যপণ্যসহ জীবাণুনাশক, মাস্ক, শিশুদের ডায়াপার কিনছেন। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে ওঠেছে। রাজধানীর বাজার, পাড়া-মহল্লা ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।

সরকার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের বেশি পণ্য না কেনার দরকার নেই। সরকারের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিত্যপণ্য মজুত রয়েছে, যা দিয়ে বেশ কয়েকমাস চলবে।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, ‘সারাবিশ্ব এখন করোনা আতঙ্কে নিমজ্জিত। এটাকে পুঁজি করে চালের দাম না বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কোনও ব্যবসায়ী কারসাজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খাদ্যমন্ত্রী জানান, ‘ন্যূনতম ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা থাকলে কোনও অবস্থায় এই সমস্যাকে পুঁজি করে কোনও ব্যবসায়ী দাম বাড়াতে পারে না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নাই। ওএমএসে (খোলাবাজারে) চাল বিক্রি চলছে। সরকারের গুদামে চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে। এই মুহূর্তে সরকারের গুদামে ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৪০০ মেট্রিক ট্রন চাল মজুত আছে। এক মাস চার দিন পর নতুন বোরো ধান উঠতে শুরু করবে। ভয়ের বা আতঙ্কের কোনও কারণ নাই।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৩ কোটি ৮৭ লাখ মেট্রিক টন চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ছিল ৩ কোটি ৭৪ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে সরকারিভাবে ১৪ দশমিক ৩৬ লাখ মেট্রিক টন চাল মজুত রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে গমের মজুতের পরিমাণ ৩ দশমিক ২৬ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল ৩৮ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সরকারের গুদামে ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৪০০ মেট্রিক ট্রন চাল মজুত আছে।

সূত্র জানায়, খোলা বাজারে আটার কেজি ২৭ থেকে ৩০ টাকা। এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গমের আমদানি হয়েছে ৩৫ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরে গমের আমদানি হয়েছিল ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন। এই মুহূর্তে সরকারি পর্যায়ে মজুতের পরিমাণ ৩ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন।

ভোজ্য তেলের ১৮ দশমিক ২৬ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮৪ লাখ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন। ভোজ্য তেল সয়াবিনের বাজারমূল্য পরিস্থিতি যাচাই করে দেখা গেছে, সয়াবিনের বাজার দর ৮৮ থেকে ৯২ টাকা, যা গত এক মাসের তুলনায় কিছুটা বেশি। গত বছরের চেয়ে এবছর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুতের পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি বলেও জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র।

সূত্র আরও জানায়, দেশে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে এসেছে, পাশাপাশি গত ১৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ভারত থেকে প্রায় আট হাজার মেট্রিক টন পোঁয়াজ আমদানি হয়েছে। দেশেও নতুন পেঁয়াজ এখনও উঠছে। এ কারণে ক্রমাগতভাবে প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম কমছে। সংকটের কোনও আশঙ্কাই নাই।

চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৮ লাখ মেট্রিক টন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১১ লাখ এক হাজার মেট্রিক টন। এ ছাড়া দেশের কারখানাগুলোয় উৎপাদিত চিনির পরিমাণ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। গত অর্থবছর জুড়ে চিনি আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। কাজেই আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয়ের সক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম থেকেই টিসিবি ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খোলা বাজারে বিক্রয় শুরু করবে। পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ ও মূল্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন হতে হবে।

তিনি আরও জানান, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সকল পণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হয়ে কোনও পণ্য অতিরিক্ত ক্রয় করার প্রয়োজন নাই। যে কোনও অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এজন্য ভোক্তাকে সচেতন হতে হবে। আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে চাহিদার কয়েকগুণ বেশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত করা হয়েছে। তেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত নিশ্চিত করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুতের পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। যে লবণ মজুত রয়েছে তা দিয়ে আগামী ৬ মাস চলবে বলেও জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here