ব্যাংক সুদহার কমায় কমেছে আমানত

0
653

বাংলা খবর ডেস্ক: ব্যাংক খাতে আমানতে সুদহার এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, দেশের দুইটি ব্যাংক ছাড়া বাকি সব ব্যাংক এখন এক অঙ্কের (সিঙ্গেল ডিজিটে) সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। ফলে গ্রাহকরা আগের তুলনায় আমানত কম রাখছেন। এমন তথ্যই উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৫৮টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৬ ব্যাংকই আমানতে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে এনেছে। মার্চে ব্যাংকের সংখ্যা ৫৭টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক শুধুমাত্র ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হারে আমানত সংগ্রহ করছে। এই ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিল মাসের আগেই তারাও সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনবেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় বেশির ভাগ ব্যাংকই আমানতে সুদহার ছয় থেকে সাত শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সুদ কমানোর পর থেকে ব্যাংকগুলোতে আগের তুলনায় আমানত আসা কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কয়েক হাজার মানুষকে সুবিধা দিতে কয়েক লাখ মানুষের আয় কমে গেছে। আমানতে সুদহার কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকরা আগের তুলনায় আমানত কম রাখছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্তমানে দেশের পুরো অর্থনীতিই ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে আমানতকারীদের জন্য একটা খারাপ সময় এটা।’ তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংক খাতে যেভাবে আমানত কমে যাচ্ছে, তাতে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে হয়তো ঋণ দেওয়ার মতো টাকাই থাকবে না।

অবশ্য ব্যাংক খাতের এমডিরা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় শতাংশের বেশি সুদে আমানত গ্রহণ করবেন না। যদিও আমানতে সুদহারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও নির্দেশনা নেই। তবে, ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঋণের ক্ষেত্রে নির্দেশনা থাকলেও ব্যক্তি আমানতের ওপর সুদারোপের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে ছয় শতাংশ সুদে সরকারি আমানত সংগ্রহ করতে পারছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো।’

এদিকে ব্যাংকগুলোতে আমানত কমার পাশাপাশি ঋণও কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি মাস শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৫২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বরের শেষে ছিল ১০ লাখ ৫৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ঋণ কমে গেছে। আগামী কয়েক মাস বেসরকারি খাতে ঋণের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, ‘দেশে এখন করোনা প্রভাব চলছে। এটি দীর্ঘায়িত হলে ঋণ নেওয়ার জন্য কেউ আগ্রহ দেখাবে না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here