দেশে ক্রিকেট নেই এক মাস, সামনে নিকষ কালো আঁধার

0
58

ইশতিয়াক পারভেজ:

১৯শে মার্চ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্রিকেটের সকল খেলা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করছি।’ কেউ সেদিন ভাবেনি, একটি একটি দিন করে এক মাস হয়ে যাবে কিন্তু মাঠে ফিরবে না ক্রিকেট। সেদিন আশার কথা শুনিয়ে পাপন বলেছিলেন ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। সেই সময়ও শেষ। এখন প্রশ্নটা আরো কঠিন- কবে মুক্তির নিঃশ্বাস নিবে টাইগারদের ক্রিকেট? সামনে কি তাহলে নিকষ কালো আঁধার? ভয়, আতঙ্কও কম নয়। হবে না কেন! করোনা ভাইরাসের গ্রাসে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। শেষ ৭ দিনে ৫০ হাজার জীবন চির ঝরে গেছে। আক্রান্ত ২২ লাখ ছাড়িয়েছে। আর বাংলাদেশে তো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত-মৃত্যু হার।

বিসিবি সভাপতি যখন স্থগিতের ঘোষণা দেন সেদিন দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭ আর মৃত ১ জন। আর সবশেষ খবর অনুযায়ী মারা গেছেন ৮৮ জন। আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ২ হাজার।
কবে ফিরবে ক্রিকেট এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন। প্রশ্ন শুনে যেন কণ্ঠটা কেঁপে উঠলো আকরাম খানের। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান যেন ভাবতে পারছিলেন না কিছু। নারী ক্রিকেটের প্রধান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলেরও কণ্ঠেও চাপা আতঙ্ক। ষ্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন এমন চলতে থাকলেও নারী ক্রিকেট হবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে বিসিবির এ দুই পরিচালকের কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

ক্রিকেটের মানুষের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কঠিন: আকরাম খান

পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড সফর স্থগিত হয়েছে। বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ হচ্ছে না। সামনে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড সিরিজ হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ কোনো কিছুরই নিশ্চয়তা নেই। এই বছর শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট হবে কি না সেটাই এখন শঙ্কা। তবে আকরাম এখন ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করতে পারছে না। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট, জানি না কি হবে। হ্যাঁ, একটি মাস তো হয়ে গেল। যতদিন গেছে ততো আর ক্রিকেট নিয়ে ভাবতে পারছি না। এখন পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে জীবন বাঁচানোটাই কঠিন। আর বড় কথা হলো ক্রিকেট কেন সব কিছুই গোটা পৃথিবীতে বন্ধ। যতগুলো দেশ ক্রিকেট খেলে আমাদের মতই তাদের অবস্থা। হ্যাঁ, যদি পরিস্থিতি ভালো হয় তাহলে আবার ক্রিকেট মাঠে ফিরবে। আর যদি এইভাবে চলতে থাকে সবারই ক্ষতি হবে। শুধু আমাদের চিন্তা করলে হবে না। আমি মনে করি এখন ক্রিকেটের চেয়ে মানুষের চিন্তা করাটাই আসল। কারণ এই বিপর্যয়ের পর আমরা হয়তো ক্রিকেটের ক্ষতিটা একটু হলেও পুষিয়ে নিতে পারবো। নতুন করে সিডিউল হবে। সব নতুনভাবে করে নেয়া যাবে। কিন্তু মানুষের যে ক্ষতি হচ্ছে তা একেবারেই পুষিয়ে নেয়া যাবে না কোনোভাবেই। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। আবার সব কিছু আগের মত হবে। আমরা সবাই এটাই প্রার্থনা করি।’

নারী ক্রিকেটের ক্ষতিটা হবে সবচেয়ে বেশি: শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল

বিশ্বে নারী ক্রিকেট এখনো খুব একটা জনপ্রিয় নয়। অনেকগুলো দেশ খেললেও সেখানে বাংলাদেশের সবে পথ চলা শুরু। বছরে খুব বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটও একেবারেই নগণ্য। এই দেশে যারা খেলছেন তাদের পারিশ্রমিকও আহামরি নয়। যে কারণে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল মনে করেন এই করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে নারী ক্রিকেট। তিনি বলেন, ‘দেখেন এখন যে ক’টি দেশ নারী ক্রিকেট খেলে তার মধ্যে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। আন্তর্জাতিক, এমনকি দেশীয় ম্যাচও সংখ্যায় অনেক কম। পারিশ্রমিকও তেমন না। এখানে যে সব নারীরা খেলছে তাদের আয়ের পথটা পুরো বন্ধ হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক যে ম্যাচ ছিল সামনে সেগুলো নতুন করে কবে হবে তাও বলার কোন সুযোগ নেই। তার মনে স্পষ্ট সামনে কঠিন অনিশ্চতায় ওদের জীবন। সবাই তো আর বেতন পায় না। যারা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে তাদের কি হবে! আমি বলছি পরিস্থিতি ভালো হলেও এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতে। যা ক্রিকেটকে ছাড় দিবে না। তাই মনে করি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নারী ক্রিকেট। তবে এখন ভাবতে হবে সবাইকে বাঁচাতে হবে। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে। কারণ ক্রিকেটের ক্ষতিটা পুষিয়ে উঠবে একদিন কিন্তু

মানুষ যা হারাচ্ছে তা পাওয়া যাবে না।’

সৌজন্যে: মানবজমিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here