ত্রাণ চোরদের সম্পত্তি ক্রোক করলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব

0
103

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম:
করোনার কারণে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকলেও মন পড়ে থাকে ক্লাস এবং শিক্ষার্থীদের কাছে। করোনায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য প্রাণ কাঁদে।
মানবজমিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমের অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ভোক্তা সামগ্রি কেনার মত মানুষের স্বচ্ছলতা থাকবে না। ফলে আমাদের গার্মেন্টসগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হবে। নির্মাণ শ্রমিকদের অনেকেই বেকার হবে। এক পরিসংখ্যান বলছে প্রায় দেড়কোটি মানুষ কাজ হারাবে।

কাজেই এখন থেকে যদি আমরা পরিকল্পনা না করি তাহলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। আমাদের দেশে বৃহৎ অংশের মানুষ দুই কামরার একটি ঘরে থাকেন। সাধারণ মানুষ যারা বস্তিতে থাকেন, যৌথ পরিবারে। আমাদের দেশ জনসংখ্যার ঘণত্বের দিক দিয়ে পৃথিবীর অন্যতম। এখানে হোম কোয়ারেন্টিন কথাটা চলে না। এক ব্যক্তি একটি ঘরে থাকবে সেরকম পরিস্থিতি কয়টা পরিবারে আছে। ফলে আমরা লকডাউন বলি, হোম কোয়ারেন্টিন বলি এগুলো সব কথার কথা। আমার হিসেবে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে লকডাউন খাটে না। ফলে গ্রাম-গঞ্জ, বস্তি, নিন্মবিত্ত মানুষের ক্ষেত্রে সংক্রমণ ঠেকাতে পশ্চিমা বিশ্ব যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে এবং সুফল পেয়েছে আমাদের দেশে সেগুলি খাটবে না। এবং সেটি খুব সফল হবে না। চাল নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি এখানে ছাড় দেওয়ায় কোনো সুযোগ নেই। এখনও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এরকম একটি চিন্তা দেখছি যে, আমাদের প্রোটেকশন দিতে হবে। চুরি করলেও দিতে হবে, দুর্নীতি করলেও দিতে হবে। এই খোলস থেকে যদি তারা বেরিয়ে আসতে না পারে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হবে। বঙ্গবন্ধু নিজে বলতেন চোর-বাটপারে দেশ ভরে গেছে। এখন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি শক্ত অবস্থানে আছেন। তার অবস্থানটি হয়তো নেতাদের কাছে পৌঁছায়নি। সম্প্রতি এক বিচারকের ওসির বিরুদ্ধে খুব প্রশংসনীয় পদক্ষেপ আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাকে সাধুবাদ জানিয়ে আমি আশা করি সমগ্র দেশের বিচারকরা যদি নিজ উদ্যোগে এভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান তাহলে দুর্নীতি কমে আসবে। কাজেই আমি মনে করি যে এখানে কোনো ক্রমেই বিন্দুমাত্র কৃপা দেখালে ক্ষমতাসীনদের ক্ষতি নিশ্চিত। তারা মানুষের যে আস্থা অর্জন করেছিলো সব ধুলিসাৎ হয়ে যাবে যদি এই বিপদের সময় চোরদের
বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা না করেন। তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সকল সম্পত্তি ক্রোক করার উদ্যোগ নিলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। লক্ষ ক্ষুধার্ত যেন কোটি না হয়। তাহলে দেশের সমস্ত কিছু বিকল হয়ে যাবে। এই মানুষের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবে তখন তারা কোন দিকে যাবে এটা আপনারা কিছু জানেন না। আর এই প্রশাসনটি আমলা নির্ভর। আমলাদেরও তাদের খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের আখের গোছালে চলবে না। দেশের মানুষের কথা ভেবে সামনে যেতে হবে। আমি খুব আনন্দিত যে অনেক তরুণ সরকারি কর্মকর্তা, দলের ভেতরে কেউ কেউ খুব প্রোএকটিভ অবস্থানে আছেন। দেশের এই মহামারীলগ্নে মন্ত্রিসভার অচল, দুর্বল, অথর্বদের বাদ দিলে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়বে। মোটেও কমবে না। সমাজের অনাচার এবং গরীব মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ালে আমরা এই পরিস্থিতি কাটাতে পারবো। হোম কোয়ারেন্টিন সম্পর্কে তিনি বলেন, সময়টা কাটছে খুব কষ্টে, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগে। অনেক তরুণ আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সুস্থ্যতার জন্য প্রার্থনা করছি। অনলাইন ক্লাস নিয়েছি। ছেলে-মেয়েরা উৎসাহের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। পাঠক ছাড়া মিডিয়া যেমন অসম্পূর্ণ, তেমনি ছাত্র ছাড়া আমাদের শিক্ষকদের জীবন অসম্পূর্ণ। অসম্পূর্ণতা টের পাচ্ছি। সংবাদ সংগ্রহে যারা রাস্তায় কাজ করছেন তাদের জন্য কষ্ট হয়। প্রার্থনা করছি দেশটি খুব তাড়াতাড়ি যেন বিপদমুক্ত হয় ।

লেখক: সাহিত্যিক, অধ্যাপক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here